মহামারীর এই সময়ে সঠিক ব্যবসাটি নির্বাচন করা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা অনেকেই ভেবে পারছি না যে কোন ব্যবসাটি আমাদের জন্য উপযুক্ত আর কোনটি নয় ! আবার তার মধ্যে পুঁজিও তো খুব একটা বেশি নেই ! ফলস্বরুপ মনে প্রশ্ন উঠে ব্যবসা করার চিন্তাটি কি বাদ দিয়ে অন্য কিছু করলে ভালো হবে? এই চিন্তা স্বাভাবিক হলেও কিছু ব্যবসার আইডিয়া এখনো আপনাকে আপনার সেই ব্যবসার ইচ্ছাকে জাগিয়ে রাখতে সম্ভব।
১০টি সেরা ব্যবসার আইডিয়া
চলুন জেনে নিই স্বল্প পুঁজিতে দশটি সেরা লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে।
১. অনলাইন বিজনেস
অনলাইন বিজনেস এই শতকের অন্যতম একটি ব্যবসা। এটি বিভিন্ন জিনিসের উপর হতে পারে। কিন্ত আপনি হয়তো নিজেও দেখবেন যে মেয়েদের শাড়ী বা অন্যান্য বস্ত্র এবং ছেলেদের প্রিন্টেড টি শার্টের ব্যবসা ভালোই চলছে। অনলাইনে আপনি এগুলো বেচতে পারেন।
এছাড়াও চাইলে বিদেশ থেকে আমদানি করেও একটি ইউনিক ব্যবসার প্রসার ঘটনাও এই অনলাইন বিজনেসের আওতায় পড়ে। প্রথমে লাভ কম হলেও পরিচিতি পেলে ব্যবসাটি অনেক লাভবান হিসেবে আগমন ঘটাবে বলে নিশ্চিত থাকুন।
সুবিধা
যেহেতু নানা পণ্যের কথা বললাম সেহেতু এটাতে মূলধনের পরিমাণ তেমন বেশি লাগবে না। ২০ থেকে ৩০ হাজার পুঁজিতে আপনি খুব ভালোভাবেই ব্যবসাটি আরম্ভ করতে পারবেন।
অসুবিধা
জনপ্রিয় ব্যবসা হওয়ায় প্রতিযোগিতা বেশি। তাই সবসময় নতুনত্ব আনার মনোভাব না থাকলে সমস্যা হতে পারে।
দেশের বাইরে থেকে আমদানি করে ব্যবসা করছে এমন একজন হচ্ছে চট্টগ্রামের Take a Scroll and preorder নামক একটি গ্রুপ। মাত্র দু বছরে তারা বিশ্বস্ততা অর্জন করেছে।
অনলাইন ইনকাম করা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেল পড়ুন।
২. অনলাইন টিচিং
অনলাইন টিচিং একটি লাভজনক ব্যবসা বলা যেতে পারে। এক্ষেত্রে আমি শুধুমাত্র অনলাইনে ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার কথাই বলছি না। বরং আপনি চাইলে একটি ইউটিউব চ্যানেল বা অন্যান্য সোশ্যাল সাইটে কন্টেন্ট বানিয়েও টিচিং করতে পারেন। বর্তমানে অনলাইন টিচিং অসাধারণ একটি ব্যবসার আইডিয়া।
সুবিধা
অনলাইন টিচিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এক্ষেত্রে আপনার বিশেষ কোন খরচের প্রয়োজন পড়বে না। শুধুমাত্র একটি মোবাইল আর এডিটিং এ দক্ষ হলে আপনি ভিডিও আপলোড করতে পারছেন। আর যদি অনলাইনে সরাসরি ক্লাস নির্ভর টিচিং এর কথা বলেন তাহলে তো কথাই নেই।
অসুবিধা
এক্ষেত্রে সমস্যার দিকটি হচ্ছে ধৈর্য ধরে রাখার সক্ষমতা। দেখুন, কোন কিছুই সাথে সাথে অর্জন করা সম্ভব নয়। ইউটিউবে ভিডিও আপলোডের সাথে সাথে যে ভিউ পেয়ে যাবেন সেটি কিন্ত আকাশ কুসুম ভাবনা ছাড়া কিছুই নয়। তাই ধৈর্য ধরুন আর চেষ্টা করুন এবং তার সাথে খেয়াল রাখুন যেন কোয়ালিটির আপোষ না হয়।
অনলাইন টিচিং এর একটি সফল উদাহরণ দেখুন এখানে ।
৩. ঘরে খাবার তৈরি
আপনি যদি রান্না বান্নায় পারদর্শী হন, তাহলে আজই এই পারদর্শীতাকে কাজে লাগিয়ে একটি ব্যবসা দাঁড় করিয়ে ফেলতে পারেন। গত কয়েক বছরে ঘরের তৈরি খাবারের চাহিদা তো বৃদ্ধি পেয়েছে বটে কিন্ত তার সাথে সাথে ফুডপান্ডা বা সহজের মত ডেলিভারি কোম্পানিগুলোও ঘরের তৈরি খাবারের ডেলিভারি সিস্টেম চালু করেছে।
মাত্র পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকার একটি প্ল্যান আপনাকে শহরের সেরা ফুড ক্যাটারার বানিয়ে দিতে পারে। দেশের বড় শহর গুলোতে এই ধরণের সার্ভিস চললেও ছোট শহর গুলোতে এটি সম্পূর্ণ নতুন ব্যবসার একটি উদাহরণ।
তাই আপনি যদি ছোট কোন শহরে বাস করে ব্যবসার অন্য কোন সুযোগ না পেয়ে থাকেন তাহলে এই আইডিয়াটি আপনার জন্য উত্তম হতে পারে।
সুবিধা
খরচ একদম কম। নিজের পারদর্শীতা সম্পন্ন আইটেম বিক্রি করতে পারবেন। এছাড়া লাভ যে থাকবে সেটা নিশ্চিত।
অসুবিধা
অসুবিধাটি তখনই ঘটে যখন কোন ধরণের প্ল্যান ছাড়া হঠাৎ খাবার বিক্রি শুরু করে দেন। ব্যবসাটি লং টার্ম করতে চাইলে অবশ্যই একটি চার্ট করুন যাতে একটি রুটিন থাকে যেখানে আপনার খাবারের তালিকা থাকবে।
ফুডপান্ডায় ঘরের খাবার বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন এমন উদাহরণ এখানে
৪.মোবাইল রিচার্জের দোকান
মোবাইল রিচার্জের দোকানের ব্যবসার আইডিয়াটি মোটামুটি লাভজনক একটি ব্যবসা। আপনি যদি অল্প হলেও টেক এক্সপার্ট হয়ে থাকেন তাহলে এই ব্যবসাটি খুবই ভাল ফলাফল বয়ে আনতে পারে। রিচার্জের পাশাপাশি বিকাশ,নগদ এজেন্ট বা প্রিন্টিং সুবিধাও এর মধ্যে করতে পারেন।
সুবিধা
এক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে একটি স্টল ভাড়া করে কয়েকটি সরঞ্জাম দিয়েই প্রথম পর্যায়ে ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন। আশেপাশে অনেক দোকান দেখবেন যাদের ইন্টিরিয়র তেমন একটা উন্নত না হলেও তারা ব্যবসাটিতে অনেক লাভবান হচ্ছে। এছাড়াও ৫০ থেকে ৭০ হাজার বাজেট থাকলে অনায়াসে এই ব্যবসা করতে কোন বাধা নেই।
অসুবিধা
অসুবিধা সম্পূর্ণ ব্যক্তির নিজের উপর নির্ভর করে। মূলত দোকানগুলোকে সারাদিন ই খোলা রাখতে হবে। কাস্টমার ধরতে হলে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুনঃ ২০২২ সালের ৩২টি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া (32 Profitable Business ideas in 2022)
৫. ডে কেয়ার সেন্টার
বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে দেশের পরিবারগুলোতে বাবা-মা দুজন ই চাকরিজীবী বলে দেখা যায়। তাই আপনি যদি এই সুযোগ লুফে নিতে চান সেক্ষেত্রে ডে কেয়ার সেন্টার চালু করতে পারেন। বিশেষ করে আপনি যদি মহিলা হয়ে থাকেন তাহলে এই ব্যবসা আইডিয়াটি আপনার জন্য অনুকূলে।
এটির মাধ্যমে খুব সহজেই মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন। এছাড়াও এই ব্যবসাটি একটি অনন্য ব্যবসা। কেননা শিশুদের দেকভাল করার মাধ্যমে আপনার সময় যাবে, যেটা অন্যান্য ব্যবসা থেকে ব্যতিক্রম এবং স্বস্তিদায়ক।
সুবিধা
৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মূল্ধনেই এটি শুরু করা যাবে। এছাড়াও অন্যান্য ব্যবসার মতো এটাতে অতিরিক্ত কোন দক্ষতা লাগে না।
অসুবিধা
এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ বিষয় বা অসুবিধা হচ্ছে শিশুদের নিরাপত্তা। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারলে এই ব্যবসা করা ঝুঁকিপূর্ণ ।
৬. নার্সারি
এটি বর্তমানে খুব জনপ্রিয় ব্যবসায় রুপ নিচ্ছে। ফুলের দোকানদার বলুন অথবা ছাদে গাছ লাগাতে আগ্রহী ব্যক্তির কথা বলুন। দুটোই আজ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই চাহিদার যোগান আপনার নার্সারি দিতে পারে। তাই নার্সারির ব্যবসার আইডিয়াটা একটি দারুণ নির্বাচন হতে পারে।
সুবিধা
এক্ষেত্রে বড় সুবিধা হচ্ছে আপনি একটু খবর নিলেই নার্সারি প্রতিপালন সম্পর্কে জানতে পারবেন। এছাড়াও মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজারের পুঁজিতেই এই ব্যবসা শুরু করা যায়।
অসুবিধা
নিজে রক্ষণাবেক্ষণের আইডিয়া না রাখলে এই ব্যবসা করা ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়াও বাজার ধরতে না পারলে বা বাজার ধরার কৌশল না থাকলে এই ব্যবসা লোকসানের মুখ দেখতে পারে।
কয়েকবছর ধরে ব্যবসা করে আসা নার্সারির মধে এটি একটি।
৭. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট
হ্যাঁ ঠিক ই পড়ছেন ! ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট বর্তমানে একটি খুব ভালো লাভজনক একটি ব্যবসা হিসেবেই পরিগণিত হচ্ছে। এর উদাহরণ আপনি আপনার চারপাশে একটু চোখ দিলেই পেয়ে যাবেন। করোনা মহামারিতে যদিও এই ব্যবসায় তেমন একটু ভাটা পড়েছে,তবে আস্তে আস্তে তা আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসছে।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আপনার কানেক্টিভিটি। যত বেশি মানুষের সাথে আপনার কানেকশন থাকবে ততই কাজটি সহজ হবে। মূলত এটি একটি দলগত কাজ। তাই আপনার মধ্যে লিডারশীপ কোয়ালিটি থাকে তাহলে এই ব্যবসাটি আপনার জন্যই।
সুবিধা
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটি করতে তেমন একটা মূলধন লাগে না। কেননা এই ব্যবসাটিতে আপনি ইভেন্টের পূর্বে আপনার কাস্টমার থেকে অর্ধেক বিল অগ্রীম নেওয়ার সুযোগ থাকছে।
অসুবিধা
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে আপনি টেকনিকাল কোন অসুবিধা পাবেন না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দলের মধ্যে বিশ্বস্ততা নিশ্চিত করা ।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে সফল এমন একটি কোম্পানি এখানে ! তাদের আজকের এই অবস্থান কানেক্টিভিটি এবং যথার্থ দলগত বিশ্বাসের মাধ্যমেই হয়েছে।
৮. আর্টিকেল রাইটিং
অনলাইন এবং অফলাইনে আর্টিকেল রাইটারদের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রথমত নিজে আর্টিকেল রাইটার হিসেবে কাজ করার পর নিজেই একটি কোম্পানি দাঁড় করিয়ে আর্টিকেল রাইটার প্রদানকারী হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে কোন পুঁজির দরকার নেই শুধুমাত্র জ্ঞান এবং এসইও সম্পর্কে ধারণা থাকলেই অনেক আয় করা সম্ভব।
সুবিধা
এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এই ব্যবসাটি অনেক প্রসারিত হওয়ায় এর মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকলেও আপনার কন্টেন্ট ভালো হলে সেটি দ্বারা আয় করবেন নিশ্চিত। দেশের বাইরের ক্লায়েন্টরা খুব ভালো পেমেন্ট তো করছেন ই তার সাথে সাথে দেশেও এর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।
অসুবিধা
আমাদের ক্ষেত্রে বড় একটি সমস্যা হয় যখন আমরা ক্লায়েন্টের চাহিদার দিকে খেয়াল না রেখে নিজ ইচ্ছায় আর্টিকেল জমা দিয়ে দেই। ফলস্বরুপ একটি বাজে রেটিং পড়লে পুরো খোশনামই বিনাশ হয়।
আরও পড়ুনঃ কন্টেন্ট রাইটিং (২০২২ সালে কন্টেন্ট রাইটিং কিভাবে শুরু করব)
৯. ট্রাভেল ও ট্যুর গাইড
হয়তো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে করোনার এই সময়ে ব্যবসার এই আইডিয়াটি কিভাবে লাভজনক হয়? আসলে লক্ষ্য করলে দেখবেন যে আজকাল নানা ট্যুর গাইড ব্যবসা চালু হয়েছে। আর এই ব্যবসা কিন্ত এমনি এমনি চালু হয় নি।
ধরুন, আপনি দেবতাখুম বেড়াতে গেলেন। বেড়াতে যাওয়ার দরুণ আপনার কিন্ত ওই জায়গা সম্পর্কে একটি আইডিয়া হলো। এখন আপনি এই আইডিয়াকেই ব্যবসায় পরিণত করছেন।
অর্থাৎ পর্যটকদের জন্য প্যাকেজ ব্যবস্থা করে একটি ট্যুর ও ট্রাভেল গাইড কোম্পানি হিসেবে আত্নপ্রকাশ করলেন। বর্তমানে এটি খুব জনপ্রিয় ব্যবসার আইডিয়া। এটি আপনার বড় এজেন্সি হওয়ার সূচনাস্থল বলা যেতে পারে।
সুবিধা
তেমন একটা পুঁজি লাগে না। যোগাযোগ থাকলেই সহজেই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
অসুবিধা
কোন ধরণের অফিসিয়াল এঙ্গেজমেন্ট ছাড়াই যদি কোম্পানি খুলে বসেন তাহলে সেটা লাভের মুখ দেখবে না।ট্যুর গাইড বা এজেন্সি যাই করুন না কেন আপনার অফিসিয়ালিই সব ম্যানেজ করতে হবে কিন্ত অনেকে শুধু একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলে তাদের ব্যবসা শুরু করে দেয় যা টেকসই না।
১০. কফি শপ
দেশের বড় শহরগুলোতে আনাচে কানাচে কফি শপ গড়ে উঠলেও ছোট শহরগুলোতে তেমন একটা নেই। তাই এই সুযোগ লুফে নিয়ে আপনার শহরে কফি শপের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে একটি ভালো জায়গা বেছে নেওয়াটাই মূল চ্যালেঞ্জ।
সুবিধা
কফি শপের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটির চাহিদা কমার সম্ভাবনা কম। আর এক থেকে দেড় লাখ টাকার বাজেটে আপনি খুব ভালো মানের জায়গায় দোকানটি চালু করতে পারবেন।
অসুবিধা
অন্যান্য ব্যবসা থেকে এটিতে পুঁজি একটু বেশি দরকার। আর তার সাথে সাথে দোকানের এডভান্স করতে একটু বেশি অর্থের প্রয়োজন পড়ে। তাই প্ল্যান করে এগিয়ে যাওয়াটাই মূল।
উপরোক্ত দশটি বিজনেস আইডিয়া খুব ভালো করে লক্ষ্য করলে বুঝবেন যে উক্ত ব্যবসাগুলোতে আপনার স্বনির্ভরতা এবং নিজের যোগাযোগের দক্ষতা ই সাফল্যের চাবিকাঠি। তাই নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন এবং বাস্তবভিত্তিক চিন্তার মাধ্যমে কিভাবে ব্যবসা করা যায় তার চেষ্টা করুন।