গ্রীষ্মকালের প্রচন্ড দাবদাহে এক গ্লাস শরবত পান করলে তৃষ্ণা মেটার সাথে সাথে যেন মনটাও জুড়িয়ে যায়। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের শরবত আমাদের চারপাশে লক্ষ্য করা যায়। আমরা স্বল্প মূল্যে অতি সহজ রেসিপির মাধ্যমেই শরবত খেতে পছন্দ করি। আর লেবু পানি হলো তার মধ্যে অন্যতম একটি সহজলভ্য পুষ্টিকর পানীয়। শুধু গ্রীষ্মকালই নয় রমজান মাসে ইফতারেও আমরা লেবু পানি খেয়ে থাকি।
এই আর্টিকেলে আপনি যা জানতে পারবেনঃ ⇒ লেবুর পুষ্টিমূল্য ⇒ লেবুর প্রকারভেদ ⇒ লেবুর ঔষধি গুণাগুণ ⇒ লেবু ও লেবুর রসের উপকারিতা ও অপকারিতা ⇒ ওজন কমাতে লেবুর কাজ ⇒ ত্বকের সৌন্দর্যে লেবুর কাজ
লেবুর আছে নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাগুণ। চলুন জেনে নিই তা বিস্তারিত।
লেবু হলো টক জাতীয় একটি ফল যেটি আমাদের দেশে সারা বছরই পাওয়া যায়। লেবু নানাভাবে আমরা খেয়ে থাকি যেমন: শরবত করে, শুধু রস করে, আচার করে, ভাতের সাথে, সালাদের সাথে, লেবু চা ইত্যাদি। আবার অনেকেই লেবুর খোসার ভর্তা ও চা করেও খেয়ে থাকেন। এমনকি লেবু পাতার ও রয়েছে নানা উপকারিতা।
উপকারিতা জানার আগে লেবুর পুষ্টিমূল্য জেনে নিই।
প্রতি ১০০ গ্রাম লেবুর পুষ্টিমূল্য
উপাদান | পরিমাণ |
ক্যালরি | ২৯ |
কার্বোহাইড্রেট | ৯.৩ গ্রাম |
ডায়াটেরি ফাইবার | ২.৮ গ্রাম |
সুগার | ২.৫ গ্রাম |
প্রোটিন | ১.১ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.৩ গ্রাম |
ভিটামিন সি | ৫৩ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ২৬ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ১৩৮ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ১৬ মিলিগ্রাম |
আয়রন | .৬ মিলিগ্রাম |
লেবুর পুষ্টিমূল্য সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
এছাড়াও লেবুতে বায়ো-ফ্লাভোনয়েডস নামক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান থাকার জন্যই লেবুর এত সব উপকারিতা রয়েছে ।
কত ধরনের লেবু পাওয়া যায়?
আমাদের দেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশেও লেবু আছে সেক্ষেত্রে সারা বিশ্বে বিভিন্ন জাতের লেবু পাওয়া যায়। এর প্রকারভেদ প্রায় ৩০ রকমের । তবে বাংলাদেশে মাত্র কয়েকটি জাতের লেবু পাওয়া যায়। যেমন –
কাগজি বা পাতি লেবু
এই লেবু আকারে ছোট ,আমাদের বসতবাড়ির চারপাশের গাছে এই লেবু বেশি দেখতে পাওয়া যায় ।
মিঠা বা শরবত লেবু
এই লেবু দেখতে কিছুটা আকারে বড়। সাধারণত লেবুর শরবত বানানোর জন্য এই লেবু বেশি ব্যবহার করা হয়।কারণ এতে রস বেশি থাকে ।
বাতাবি লেবু
এগুলোকে জাম্বুরাও বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও মাল্টা লেবু ও কমলালেবুও রয়েছে । কমলা ও মাল্টা লেবুর প্রকারভেদে পড়লেও আমরা এগুলোকে মাল্টা আর কমলা নামেই বেশি চিনে থাকি।
লেবুর ঔষধি গুণাগুণ
লেবুর পাতা ও খোসাসহ লেবু দিয়ে নানা ধরনের ঘরোয়া ছোটখাটো টোটকা করা হয়।
লেবু পাতা
লেবুর মতো লেবু পাতার ও রয়েছে নানা উপকারিতা। যেমন –
দুশ্চিন্তা কমাতে
লেবু পাতায় অ্যান্টিসেপটিক উপাদান রয়েছে যা ত্বকের যেকোনো ক্ষত সারাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে লেবু পাতার পেস্ট আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দিলে ফল পাওয়া যায়। যেকোনো পোকামাকড় কামড় দিলে আক্রান্ত স্থানে লেবু পাতার পেস্ট ব্যবহার করা হয়।
বেডরুমের ফুলদানিতে লেবু পাতা রাখলে সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আমাদের মন ভালো থাকে ও দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও কমে। এছাড়াও লেবুর পাতার চা ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক।
ব্যথা উপশমে
ফ্রেশ লেবু পাতার চা মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, যাদের অ্যাজমা আছে তাদের ক্ষেত্রে লেবু পাতার চা উপকার করে। লেবু পাতা ফুটিয়ে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে গোসল করলে শরীরের দুর্বলতা কমে ও শরীরের ব্যথা কমে।
শ্বাসনালির সমস্যা দূর করতে
লেবু পাতার উষ্ণ গরম পানির ভাপ নিলে ব্রঙ্কাইটিস, সাইনুসাইটিস ও অন্যান্য যেসব শ্বাসনালিতে সমস্যা থাকে সেটি উপশম হয়। তবে এটি একদিন ব্যবহার করলে কখনোই কমবে না টানা কয়েক সপ্তাহ প্রায় ১০ /১৫ মিনিট করে করলে কমে যাবে।
বমি বমি ভাব কমায়
লেবু পাতার ঘ্রাণ বমি বমি ভাব দূর করে।যেকোনো ভ্রমণে এই পাতা সঙ্গে নিলে উপকার পাওয়া যায়।
লেবুর খোসার উপকারিতা
অস্টিও আর্থাইটিস ও রিওম্যাটিড আর্থাইটিসের ব্যথা কমাতে লেবুর খোসা সবচেয়ে বেশি উপকারে আসে এছাড়াওে এটি মুখের ব্রণ কমাতে সাহায্য করে, দাঁতের সমস্যা কমায়। এতে রয়েছে ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
লেবুর রসের চেয়েও লেবুর খোসায় অনেক বেশি ভিটামিন থাকে। এতে পেকটিন নামে একটি উপাদান রয়েছে। তাই খোসা নিয়মিত খেলে ওজন কমার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। কারণ এই উপাদানটি শরীরে উপস্থিত অতিরিক্ত চর্বিকে ঝড়িয়ে ফেলতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।
খাওয়ার নিয়ম
লেবু খোসাসহ আচার করে খাওয়া যায় আবার খোসার চা, খোসার ভর্তা হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। ত্বকের জন্য খোসার আইস কিউব করে ত্বকে দেয়া যায়।
তাছাড়া লেবু সহ বিভিন্ন ফলের উপকারিতা ও গুণাগুণ সম্পর্কে জানুন ফলের উপকারিতা অ্যাপটি ডাউনলোড করে।
লেবু ও লেবুর রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ
লেবুর উপকারিতাসমূহঃ-
১৷ হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য
একটি মাঝারি সাইজের লেবুতে প্রায় ৪৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আছে। ভিটামিন সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। হার্টের জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খুবই উপকারী। নিয়মিত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেলে হার্ট অ্যাটাকের মতো বা হার্টের বড় কোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আবার এটি স্ট্রোকের বিরুদ্ধেও লড়াই করে ও শরীরে ফ্রি রেডিকেল হিসেবে কাজ করে কোষের ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে।
২৷ ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে
লেবুতে বিদ্যমান ফাইবার আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। যাদের শরীরে ফ্যাট বেশি তাদের বেশি পানি পান করা প্রয়োজন, তাই লেবু পানি খেলে পানির চাহিদা পূরণ হওয়ার সাথে সাথে ওজনও কমে।
৩৷ কোলেস্টরল লেভেল কমায়
লেবুতে ফ্যাটের পরিমাণ তেমন নেই বললেই চলে । লেবু আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টরল এলডিএল (LDL) কমিয়ে ভালো কোলেস্টরল (HDL) বাড়াতে সাহায্য করে।
৪৷ হজম সমস্যা দূরীকরণে
লেবুতে বিদ্যমান আছে সাইট্রিক এসিড। এটি আমাদের পেটের পরিবেশ ভালো রাখে। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনালের নানা সমস্যা যেমন – পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা ,খাবার হজম না হওয়া ইত্যাদি লেবু দূর করে।কারণ লেবু শরীরকে ডিটক্সিফিকেশন করে দূষিত পদার্থ বের করে দেয় ফলে খাবার হজমে সমস্যা হয় না।
৫৷ এনিমিয়া দূর করতে
ভিটামিন সি উদ্ভিজ্জ উৎসের আয়রণ সমৃদ্ধ খাবার শোষণে (absorption) ভূমিকা রাখে। তাই লেবু পরোক্ষভাবে এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতা কমাতেও ভূমিকা রাখে। কচু পাতায় আয়রন রয়েছে, কচু শাকের সাথে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার লেবু খেলে আয়রন শোষণ ঘটতে সাহায্য করবে।
৬। কিডনির পাথর দূর করতে
লেবুতে বিদ্যমান সাইট্রিক এসিড কিডনির পারথরকে ভেঙে দেয় এবং প্রস্রাবনালীর মাধ্যমে তা বের করে দেয়। এক্ষেত্রে লেবুর শরবত খেলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
৭৷ ক্ষত সারাতে
যেকোনো অপারেশনের ক্ষত, কোথাও কেটে যাওয়ার ক্ষত দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে ভিটামিন সি। শরীরে ক্ষত হয়েছে এমন অবস্থায় লেবু নিয়মিত খেলে দ্রুত ক্ষত সেরে যাবে।
৮৷ পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে
পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে লেবু চা খুবই উপকারী । তবে এই চা এর সাথে আরো কিছু উপাদান যোগ করা প্রয়োজন ( দারচিনি,আদা,তেজপাতা, লবঙ্গ) এবং এই চা এর সাথে কোনো লিকার যোগ করা যাবে না। আবার সাথে কাঁচা হলুদের রস দিলে আরো বেশি উপকার পাওয়া যায়।
৯৷ টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
লেবু বা লেবুর শরবত রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা এটি খেতে পারেন । এমনকি যাদের ডায়াবেটিস নেই তারা খেলেও ডায়াবেটিস এ আক্রান্তের ঝুঁকি কমবে।
১০৷ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
বাসায় হঠাৎ করে করে কারো ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেলে লেবু পানি খাওয়ালে খুব তাড়াতাড়ি ফল পাওয়া যায়। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে লেবু পানি নিয়মিত খাওয়া উচিত।
১১৷ এনার্জি যোগাতে সাহায্য করে
গরমের দিনে পানিশূন্যতা রোধে লেবু পানি খুবই কার্যকরী, এতে বিদ্যমান সোডিয়াম ও পটাসিয়াম আমাদের লবণের ঘাটতি মেটায় ও পটাসিয়াম আমাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে ও দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে।
১২৷ ফুসফুসের সুরক্ষায়
লেবু শরীরে চর্বি ও লিপিডের মাত্রা কম রাখে যা তাই এটি ফুসফুসের জন্য ভালো কাজ করে থাকে। কারণ ওজন বেশি থাকলে ফুসফুসের কার্যকারিতা কমে যায়।
১৩৷ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়
লেবুতে বিদ্যমান বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।বিশেষ করে স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে লেবু খুবই অপরিহার্য।
১৪৷ গর্ভবতী নারীদের সুস্বাস্থ্যে
লেবুর রস শুধুমাত্র গর্ভবতী মায়ের জন্যে উপকারী নয় বরং এটি গর্ভের শিশুর জন্যও অনেক বেশী উপকারী। লেবুতে উপস্থিত ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম,ফসফরাস শিশুর হাড়, মস্তিষ্ক ও দেহের কোষ গঠনে সহায়তা করে।
১৫৷ লিভার ভালো রাখতে
লেবুতে বিদ্যমান এসিড আমাদের দেহের টক্সিক পদার্থ দূর করে। এর সাথে লিভারের দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।
১৬। সিজনাল সমস্যা সমাধানে
লেবুর পানি আমাদেরকে সিজনাল ঠান্ডা কাশি, জ্বর থেকে মুক্তি দেয়। এছাড়াও এটি স্কার্ভি প্রতিরোধ করে ও আমাদের নার্ভ সিস্টেমকে সচল রাখে।
১৭৷ PH (পিএইচ) ব্যালেন্স রক্ষা করে
লেবু আমাদেরহ দেহের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স রক্ষা করতে সহায়তা করে। এটি পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইটোক্যামিক্যাল সমৃদ্ধ একটি ফল।
লেবুর অপকারিতা
- অতিরিক্ত লেবু খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি হয়। সাথে বমি বমি ভাব এবং বমি ও হতে পারে।
- অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত লেবু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- বেশি পরিমানে লেবুর শরবত পান করলে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
- শরীরের ওজন কমানোর জন্য একটানা লেবুর শরবত খেলে শরীরে পুষ্টিগুনের অভাব দেখা দিতে পারে।
- লেবুর রস প্রচণ্ড এসিডধর্মী। তাই কখনও সরাসরি লেবুর রস মুখে লাগাবেন নাহ। এতে আপনার ত্বক পুড়ে যেতে পারে।
- লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিডের কারণে দীর্ঘদিন ধরে লেবু খাওয়ার ফলে মুখের মধ্যে থাকা নরম কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কি কি খাবেন?
ওজন কমাতে লেবু পানি কীভাবে কাজ করে ?
আস্ত লেবুতে ফাইবার রয়েছে যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়াও লেবু পানি খেলে প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যায় ফলে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায় ও ফ্যাট বার্ন হয়। লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় নিচে দেয়া হলঃ
মধু ও উষ্ণ গরম লেবু পানির ভূমিকা
ওজন কমাতে সাধারণভাবে লেবু খাওয়ার চেয়ে মধু ও উষ্ণ গরম পানির শরবত বেশি উপকার করে।যারা ওজন কমাতে ইচ্ছুক তারা অন্যান্য ডায়েটের পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় মধু ও লেবুর উষ্ণ পানি কার্যকর ভূমিকা রাখে।
লেবু ও মধুর শরবত প্রস্তুত প্রণালী
প্রথমে এক গ্লাস হালকা বা উষ্ণ গরম পানি, এক টেবিল চামচ লেবুর রস, এক টেবিল চামচ মধু নিতে হবে। হালকা গরম জলে লেবু ও মধু মিশিয়ে খেতে হবে।চাইলে এর সঙ্গে গ্রিন টিও মেশাতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রথম পানীয় হিসেবে খালি পেটে এটি পান করে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
সতর্কতা
▪︎ আগে জল হালকা গরম পানি করে তারপর লেবু ও মধু মেশাতে হবে। মধু বা লেবু মেশানো জল কখনোই চুলায় গরম করতে যাবেন না।
▪︎ এই মিক্সড পানীয় যদি হালকা গরম পানিতে না মিশিয়ে খাওয়া হয় তাহলে বিপরীত ফল হতে পারে অর্থাৎ ওজন কমার বদলে বেড়ে যেতে পারে।
▪︎ যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, তাঁরা এটি খালি পেটে খাবেন না। কারণ লেবু অ্যাসিডিক,এতে পেট ফাঁপা হতে পারে।
▪︎ লেবুর এসিড দাঁতের এনামেলের জন্য ক্ষতিকর। তাই এই পানীয় পানের সঙ্গে সঙ্গে মুখ ধুয়ে নিতে ভুলবেন না।তবৈ সেটি অতিরিক্ত পান করলে তবেই দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। এই পানীয় দৈনিক এক গ্লাস পান করায় যথেষ্ট ।
ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায় লেবুর কাজ
ত্বকের সমস্যায় লেবু
লেবু ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায় ব্যবহৃত হয়। এটি ত্বকের কালো দাগ দূর করে, ব্রণ ও পিম্পল কমাতে সাহায্য করে ,ত্বক টানটান রাখে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তোলে।
ত্বকের জন্য লেবু পাতা
বাইরের ধূলাবালি, রোদে ত্বকের যে ক্ষতি হয় সেটি নিরাময় করে লেবু পাতা। এক্ষেত্রে লেবু পাতার পেস্ট ত্বকে লাগানো যায় আবার লেবু পাতার চাও খাওয়া যায়। তবে অনেকেরই লেবু পাতায় অ্যালার্জি সমস্যা থাকে তারা অবশ্যই লেবু পাতার পেস্ট ত্বকে লাগানো থেকে বিরত থাকুন। লেবু পাতার তেলও স্কিনে মালিশ করা যায়।
মধু ও লেবু
মধু ত্বককে নরম, কোমল ও আদ্র রাখে আর এর সাথে লেবুর রস মিশালে আরো ভালো কাজ করে। এই মিক্সডটি রোদে পোড়া ভাব দূর করতে, ব্রণ কমাতে, ত্বকের বয়স ধরে রাখতে সহায়তা করে।
পুদিনা ও লেবু পাতার পেস্ট
এই দুটি উপাদানের পেস্ট মিক্সড করে ত্বকে লাগালে ব্রণের দাগ নিমেষেই দূর হয়ে যায়।
অ্যালোভেরা ও লেবুর রস
পুদিনা পাতার পেস্ট, অ্যালোভেরার জেল ও লেবুর রস বা পাতার পেস্ট মিক্সড করে লাগালে ত্বকের ময়লা দূর হয় ও প্রাকৃতিক ক্লিনার ও ফেইসওয়াশের কাজ করে।
সতর্কতা
• ভিটামিন সি অধিক তাপে ও দীর্ঘক্ষণ বাতাসের সংস্পর্শে থাকলে নষ্ট হয়ে যায়। তাই লেবু কাটার সাথে সাথেই খেয়ে ফেলা উত্তম।
• লেবুর সব উপকারিতা পেতে চাইলে যারা রান্নার কাজে লেবুর রস ব্যবহার করেন, তারা কখনো চুলায় রেখে লেবুর রস দিবেন না, রান্না শেষ হলে নামিয়ে তারপর রস ব্যবহার করবেন।
• যাদের অ্যালার্জি আছে লেবুতে তারা লেবু খাবেন না।
• আবার রূপচর্চার ক্ষেত্রে মুখে দীর্ঘদিন ধরে লেবুর রস ব্যবহার করা ঠিক নয় এতে কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও দীর্ঘদিন ধরেও লেবুর শরবত খেলে এই ক্ষতি হতে পারে। তাই পরিমাণমতো অর্থাৎ দিনে এক গ্লাস লেবু পানি খান বা এক টুকরা লেবু খাওয়াই উত্তম।
লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ঔষধি গুণাগুণ সম্পর্কে আজ এই পর্যন্তই। ধন্যবাদ।