অনেক সময়ই আমাদের শরীর খুব অল্পতেই ক্লান্ত লাগে, মাথা ঝিমঝিম করে, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। এমনকি দেহের বর্ণ ফ্যাকাশে হতে থাকে।এসব লক্ষণে আমরা মনে করি কিছু দিন বিশ্রাম নিলেই হয়ত ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু লক্ষণ গুলো যখন চরম আকার ধারণ করে, তখন ডাক্তারের কাছে গিয়ে রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে সচরাচর যে রোগটি ধরা পড়ে তা হল রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া।
রক্তশূন্যতা কোন রোগ নয়,বরং নানা রোগের উপসর্গ। মূলত রক্তে হিমোগ্লোবিনের অভাবে রক্তশূন্যতা হয়ে থাকে। রক্তশূন্যতা দূর করার উপায় হিসাবে শুধুমাত্র কিছু খাদ্যাবাসই যথেষ্ট।
কি কি খাবার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াবে তা জানার আগে চলুন জেনে নিই রক্তশূন্যতা কি এবং কেন হয়? হিমোগ্লোবিন কি? রক্তে হিমোগ্লোবিনের কাজ কি? রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারণ কি?
রক্তশূন্যতা কি?
সাধারণত কোন মানুষের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায় তখন তাকে আমরা রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া বলে থাকি।
বাংলাদেশে সামগ্রিকভাবে প্রায় ৪১.৮% মানুষ রক্তশূন্যতায় ভুগছে।
আপাতদৃষ্টিতে রক্তশূন্যতাকে খুব বড় কোন রোগ হিসাবে মনে করা হয় না। কিন্তু এর থেকে যেকোন সময় খুব বড় ধরনের রোগের সূচনা হতে পারে।
কেন রক্তশূন্যতা হয়?
মানুষের শরীরে আয়রনের অভাবে রক্তশূন্যতা হতে পারে।রক্তক্ষয়,লোহিত রক্তকণিকা ভেঙ্গে যাওয়া বা এর উৎপাদন কমে গেলে দেহে আয়রনের অভাব হতে পারে।
তাছাড়াও, খাদ্যে অপুষ্টি,দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, আর্থ্রাইটিস, কিডনি বা লিভার ফেইলিওর ,যক্ষ্মাসহ ইত্যাদি নানা রোগে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।সাধারণত পুরুষের তুলনায় মেয়েরা রক্তশূন্যতায় বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
রক্তশূন্যতার লক্ষণ কি?
শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।প্রকৃতপক্ষে, গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়া খুব স্বাভাবিক । কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ এমনকি শিশুদের শরীরেও হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে। চলুন এক নজরে দেখে নিই রক্তশূন্যতার লক্ষণসমূহঃ
- দুর্বলতা/ক্লান্তি
- শ্বাসকষ্ট
- মানসিক অবসাদ/বিষন্ন্তা
- অনিদ্রা
- ফ্যাকাশে ভাব
- হাত-পা ফুলে যাওয়া
- হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
- খাবার গিলতে অসুবিধা হওয়া
- নারীদের অনিয়মিত পিরিয়ড
- হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি
- নখ ভেঙ্গে যাওয়া,চুল ফেটে যাওয়া ইত্যাদি।
সাধারণত পুরুষরে চেয়ে নারীদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতা বেশি থাকে।গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ৯ g/dL এর চেয়ে কমে গেলে তা মা ও শিশু উভরের জন্যই গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হিমোগ্লোবিন কি?
হিমোগ্লোবিন হচ্ছে এক ধরনের আয়রনসমৃদ্ধ প্রোটিন যা আমাদের লোহিত রক্তকণিকায় থাকে।হিমোগ্লোবিন সংক্ষেপে Hgb নামেও পরিচিত।এটি আমাদের দেহে অক্সিজেন বহন করে। হিমোগ্লোবিনই রক্তের ঘনত্ব বজায় রাখে এবং রক্তকে লাল করে থাকে।
রক্তে হিমোগ্লোবিনের কাজ কি?
হিমোগ্লোবিন মূলত আমাদের সারা দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করে। আমরা প্রশ্বাসের সাথে যে অক্সিজেন নিই তা সরাসরি আমাদের ফুসফুসে জমা হয়।হিমোগ্লোবিন ফুসফুস থেকে সেই অক্সিজেন সারা দেহে ছড়িয়ে দেয়।
তাছাড়া হিমোগ্লোবিন আমাদের দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে বিষাক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড ফুসফুসে বহন করে নিয়ে যায়। হিমোগ্লোবিন রক্তে যে কোনো দূষিত পদার্থ মিশতে বাধাঁ দেয়।এছাড়াও, আমাদের শরীরের বিষাক্ত গ্যাস বাইরে বের করে দেয়।
হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক পরিমাণ কত?
একজন মানুষের শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা তার বয়স,লিঙ্গ অথবা পূর্ববর্তী কোন রোগ ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ পুরুষ ও নারী ভেদে ভিন্ন হতে পারে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের রক্তে গড় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নারীদের তুলনায় সামান্য বেশি হয়ে থাকে।
- একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের রক্তে গড় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ১৩.৫-১৭.৫ গ্রাম এবং নারীদের ক্ষেত্রে তা ১২-১৫.৫ গ্রাম।
শিশুদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কত ?
সাধারণত প্রাপ্ত বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের রক্তে গড় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেশি হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় একজন শিশুর অক্সিজেনের পরিমাণ খুব বেশি থাকায় অক্সিজেন পরিবহনের জন্য অনেক বেশি লোহিত রক্ত কনিকার প্রয়োজন হয়।
কিন্তু শিশু জন্মের কয়েক সপ্তাহ থেকে এই কনিকার মাত্রা কমতে থাকে। শিশু জন্মের পর থেকে লোহিত রক্তকনিকার মাত্রা ছেলে মেয়ে উভয়েরই সমান হয়ে থাকে। ১২ বছর বয়স থেকে শিশুর রক্তে লোহিত রক্তকনিকার মাত্রা লিঙ্গভেদে পরিবর্তিত হতে থাকে।
চলুন দেখে নিই শিশুদের রক্তে গড় হিমোগ্লোবিনের মাত্রাঃ
বয়স | নারী (গ্রাম/ ডেসিলিটার) | পুরুষ (গ্রাম/ ডেসিলিটার) |
০-৩০ দিন | ১৩.৪ -১৯.৯ | ১৩.৪ -১৯.৯ |
৩১-৬০ দিন | ১০.৭- ১৭.১ | ১০.৭- ১৭.১ |
২-৩ মাস | ৯.০-১৪.১ | ৯.০-১৪.১ |
৩-৬ মাস | ৯.৫-১৪.১ | ৯.৫-১৪.১ |
৬-১২ মাস | ১১.৩-১৪.১ | ১১.৩-১৪.১ |
১-৫ বছর | ১০.৯-১৫.০ | ১০.৯-১৫.০ |
৫-১১ বছর | ১১.৯-১৫.০ | ১১.৯-১৫.০ |
১১-১৮ বছর | ১১.৯-১৫.০ | ১২.৭-১৭.৭ |
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কত থাকা দরকার?
একজন মায়ের শরীর থেকে গর্ভাবস্থায় শিশু তার প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টি গ্রহণ করে থাকে।ফলে মায়ের দেহে লোহিত রক্তকনিকার ঘনত্ব কমতে থাকে। ফলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও কমে যায়। ফলস্বরূপ গর্ভবতী মহিলারা রক্তশূন্যতা সহ নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। এতে তাদের শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যাহত হয়।তাই গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার নিয়মিত হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করা আবশ্যক।
গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা হলোঃ
ইউনিট | প্রথম ট্রাইমেস্টার | দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার | তৃতীয় ট্রাইমেস্টার |
গ্রাম/ডেসিলিটার (g/dL) | ১১.৬-১৩.৯ | ৯.৭-১৪.৮ | ৯.৫-১৫.০ |
রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারণ কি?
বিভিন্ন কারণে একজন মানুষের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যেতে পারে। আয়রন,ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১২ এবং ফলিক অ্যাসিড ইত্যাদির অভাবে হিমগ্লোবিন কমতে থাকে। এছাড়াও লিভার বা কিডনির সমস্যা, এইডস, লিউকোমিয়া,সিরোসিস ,জিনগত অস্বাভাবিকতা,ক্ষত স্থান থেকে রক্ত পরার কারণেও হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হতে পারে। গর্ভবতী মায়েদের অপুষ্টির জন্য হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে।
হিমোগ্লোবিনের অভাবে কি রোগ হয়?
রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে সারাদেহে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। ফলে শরীরে নানাবিধ রোগ দেখা দিতে পারে।
- রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে অ্যানিমিয়া দেখা দেয়।
- শিশুদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে অনকোলজি (ক্যান্সার),পেটে সমস্যা, সংক্রামক রোগ, অটোইমিউন রোগ ,বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
হিমোগ্লোবিন কমে গেলে করণীয় কি?
আমদের দেহে আয়রনের সরবারাহ কমে গেলেই রক্তে হিমোগ্লোবিন কমতে থাকে। রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে আমাদের শরীরে রক্তশূন্যতা সহ মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।তাই রক্তশূন্যতা দূর করার উপায় হল হিমোগ্লোবিন বাড়ানো। ওরাল আয়রন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া হল রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর নিশ্চিত উপায় যা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে নিতে হবে।
- রক্তে হিমোগ্লোবিন মূলত আয়রন, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন সি এবং ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতিতে কমে যেতে পারে। তাই নিয়মিত এই ধরনের খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
- শিশুদের রক্তে যদি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায় সেক্ষেত্রে মায়ের উচিত আয়রনযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া। একজন মায়ের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই মাংস (যকৃত, জিহ্বা, গরুর মাংস) এবং লেবু, শাকসবজি, ফল, বাদাম, শুকনো ফল অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
- ৬ মাস থেকে শিশুদের ধীরে ধীরে চর্বিহীন মাংস এবং সামুদ্রিক মাছ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। এই সময়ে শিশুকে শাকসবজি এবং ফলমূলের সাথে পরিচয় করাতে হবে।
তাছাড়া গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাখতে ক্যাফেইন এবং গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কারণ এগুলো আয়রনের সঠিক শোষণকে বাঁধা প্রদান করে।
আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কমানোর উপায় : ২০টি সহজ উপায়ে ডায়াবেটিস কমান
রক্তশূন্যতা দূর করার উপায় : রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর উপায়
হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি ছোট-বড় যেকোন মানুষের হতে পারে। হিমোগ্লোবিন কমে গেলে শরীরের অক্সিজেন সরবরাহ কমে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এমন কিছু খাবার আছে যা খেলে সহজেই রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানো যায়।চলুন দেখে নিই রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর উপায়ঃ
১) আয়রনযুক্ত খাবার
আয়রনসমৃদ্ধ খাবার শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমান বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।আয়রনযুক্ত খাবারের মধ্যে আছে – খেজুর, বেদনা,তরমুজ,জলপাই, আমলকী ইত্যাদি ফল। এসব ফল নিয়মিত খেলে শরীরে হিমোগ্লোবিন বাড়বে।
ড্রাই ফ্রুটস যেমন কিসমিস, আলমন্ড, শুকনো খেজুরে রয়েছে প্রচুর আয়রন। এছাড়াও মুরগির কলিজা, ঝিনুক, কুমড়ার বিচি, পালং শাক ,শতমূলী , লাল চাল, ব্রকোলি ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে।
২) সামুদ্রিক মাছ
সামুদ্রিক মাছে রয়েছে ওমেগা-৩, ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি। ইলিশ, কোরাল, রূপচাঁদা, বাইলা, চিংড়ি, ফোঁপা, লইট্টা ও লাইখ্যা সহ প্রভৃতি মাছে আছে প্রচুর মিনারেল ও ভিটামিন।সামুদ্রিক মাছ আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে।
৩) মাংস
প্রাণিজ প্রোটিন যেমনঃ গরুর মাংস,খাসির মাংস এবং কলিজা আয়রনের খুব ভালো উৎস। যেহেতু আয়রন হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সহায়তা করে তাই রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে খাদ্যতালিকায় মাংস রাখুন।
৪) ডিম
সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে প্রতিদিন একটা করে ডিম খাবেন। ডিমের সাদা অংশে প্রোটিন ও কুসুমে রয়েছে ভাল ফ্যাট, আয়রন, ভিটামিন। অপুষ্টি, রক্তাল্পতা ও ডায়বেটিকস রোধে ডিম কার্যকর ভূমিকা রাখে।
৫) দুধ ও মধু
দুধ একটি আদর্শ খাদ্য।দুধে খুব বেশি আয়রন না থাকলেও এটি শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও ভিটামিন জোগায়। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম যা রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে রক্তশূন্যতা দূর করে।তাই আমাদের উচিৎ প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ খাওয়া।
মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ। মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।ফলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ উপকার করে থাকে। তাই প্রতিদিন এক চামচ মধু লেবুর সাথে মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
৬) ছোলা, সয়াবিন ও বিনস
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ছোলা, সয়াবিন ও বিনস জাতীয় খাবার দেহের প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট , ফসফরাস সহ সকল ঘাটতি পূরণ করে। সকাল বেলা এক মুঠ কাঁচা ছোলা খেলে ক্যান্সার, হৃদরোগের ঝুঁকি , কোষ্ঠ্যকাঠিন্য সহ নানা রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৭) ভিটামিন সি
ভিটামিন সি ছাড়া আমাদের দেহে আয়রনের ঘাটতি পুরোপুরি মিটে না। ভিটামিন সি জাতীয় ফল যেমনঃ কমলা, পেঁপে,আঙুর,মাল্টা, আনারস, জাম ইত্যাদি আমাদের শরীরে আয়রনের অভাব পূরণ করে এবং রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।তাই প্রতিদিন যেকোন একটি ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন।
৮) ফলিক অ্যাসিড
ফলিক অ্যাসিড আমাদের দেহের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি ভিটামিন যা ভিটামিন বি৯ নামেও পরিচিত।এটি আমাদের শরীরে লোহিত রক্ত কনিকা গঠন করে। তাছাড়া একজন গর্ববতী মা নিয়মিত ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করলে তার অনাগত সন্তানের জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
আমাদের শরীর নিজ থেকে ফলিক অ্যাসিড উৎপাদন করতে পারে না। তাই ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমনঃ বাঁধাকপি, পালংশাক,শিম,মটরশুটি,লেবু ও লেবু জাতীয় ফল ,বাদাম,কলা ইত্যাদি আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
৯) ডালিম
ডালিম এমন একটি ফল যা পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস,জিংক ও ভিটামিন সি দ্বারা সমৃদ্ধ। এছাড়াও ডালিম ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যেমন-থায়ামিন, রাইবোফ্লাবিন, নিয়াসিন এবং আয়রনের অন্যান্য উপাদানের ভাল উৎস।
ডালিমে প্রচুর আয়রন, ক্যালসিয়াম, শর্করা ও আঁশ (ফাইবার) থাকায় রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে এটি কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এটি অ্যানেমিয়া ও রক্তের নানা সমস্যা দূর করতে ভূমিকা রাখে।
১০) বিট
বিট একধরনের মূল জাতীয় সবজি।এটি মূলত পটাশিয়ামের একটি ভালো উৎস।এছাড়াও বিটের রসে রয়েছে লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সোডিয়াম ইত্যাদি যা আমাদের শরীরে লোহিত রক্ত কনিকার মাত্রা বাড়ায়। বিট সালাদে বা যতটা সম্ভব কম রান্না করে খাওয়া ভালো। কাঁচা খেলে এর গুনাগুন সবচেয়ে ভালো পাওয়া যায়।
সতর্কতাঃ
রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়া যেমন ভয়ের ব্যাপার,ঠিক তেমনি রক্তে উচ্চ হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও ডেকে আনতে পারে ভয়ানক বিপদ।সাধারণত ছেলেদের ১৮.৫ এবং মেয়েদের ১৬.৫ এর উপর হিমোগ্লোবিন থাকলে তা “পলিসাইথিমিয়া” নামক রোগের প্রধান লক্ষণ।20
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষা ছাড়া এ রোগ নির্ণয় করা যায় না।তবে এ রোগের কিছু লক্ষণ হলঃ
- গাল বা মুখ,হাত পায়ের তালু লালচে হয়ে যাওয়া
- মাথাব্যথা/মাথাঘোরা
- চুলকানি
- পেটে ব্যথা,ক্লান্তিভাব
- নাক,পাকস্থলি বা অন্ত্রে রক্তপাত ইত্যাদি।
সবশেষে বলা যায়, রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া খুবই ভয়ানক লক্ষণ। রক্তশূন্যতা গুরুত্বর পর্যায়ে চলে গেলে বাইরে থেকে রোগীর শরীরে রক্ত সঞ্চালন করতে হয়। তাই রক্তশূন্যতা থেকে বাঁচতে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক রাখা আব্যশক। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের কোনো বিকল্প নেই। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়ামই পারে আমাদের একটি সুন্দর সুস্থ জীবন উপহার দিতে।
References:
https://www.healthcare.uiowa.edu/path_handbook/appendix/heme/pediatric_normals.html
https://www.newhealthadvisor.org/hemoglobin-in-pregnancy.html