ডায়াবেটিস সবার কাছেই খুবই পরিচিত একটি শব্দ। বর্তমানে এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব, যে পরিবারে কোনো ডায়াবেটিস রোগী নেই। আর এই ডায়াবেটিস কমানোর উপায় আছে কি? তা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন জাগে।
ডায়াবেটিস কমানোর উপায় গুলো জানার আগে প্রথমেই জেনে নিই ডায়াবেটিস কি? কেন হয় এবং এর সাধারণ লক্ষণ কি কি?
ডায়াবেটিস কি ? (What is diabetes ?)
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যাকে ডায়াবেটিস মেলিটাস বলে। ডায়াবেটিস এর কারণে মূলত আমাদের রক্তে গ্লুকোজ বা সুগারের পরিমাণ অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায়।
ডায়বেটিস হওয়ায় আপনার শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা কার্যকর ভাবে ব্যবহার করতে পারে না। স্ট্রোক, হার্ট ডিসিজ, কিডনি ইত্যাদি বিভিন্ন রোগের জন্য এই ডায়াবেটিস মেলিটাস দায়ী।
ডায়াবেটিস কেন হয় ?
আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি তা মুলত কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা। আর এই শর্করাই হচ্ছে গ্লুকোজ এর উৎস। রক্তে গ্লুকোজ প্রবশের পরেই শুরু হয় ইনসুলিনের কাজ।
ইনসুলিন এক ধরনের হরমোন যা গ্লুকোজকে মানুষের দেহের কোষগুলোতে পৌঁছে দেয়। সেই গ্লুকোজ থেকেই শক্তি উৎপাদন হয়। এখন যদি কোনও কারণে স্বাভাবিক কর্মদক্ষতা হারিয়ে ফেলে তাহলে রক্তে গ্লুকোজ এর মাত্রা বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ (diabetes symptoms)
চলুন জেনে নিই ডায়াবেটিস রোগের লক্ষন সমূহ
- ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা
- তৃষ্ণা বৃদ্ধি পাওয়া
- ওজন কমে যাওয়া
- বার বার প্রসাবে যাওয়া
- চোখে ঝাপসা দেখা
- অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া
- মিষ্টি খাবারের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হওয়া
- বমি বমি ভাব ও মাঝে মধ্যে মাথা ব্যথা করা
- মুখ শুকিয়ে যাওয়া
ডায়াবেটিস এর প্রকারভেদ
কয়েকটি ভিন্ন ধরণের ডায়াবেটিস রয়েছে:
- টাইপ 1 ডায়াবেটিস : শরীরে যখন কোন ইনসুলিন তৈরি হয় না, সেটাই টাইপ 1 ডায়াবেটিস।
- টাইপ 2 ডায়াবেটিস : শরীরে যখন ইনসুলিন তৈরি হয় না বা হলেও তা সঠিক ভাবে কাজ করে না, সেটাই টাইপ 2 ডায়াবেটিস।
- প্রি ডায়াবেটিস : যখন সুগার লেভেল স্বাভাবিক লেভেল থেকে একটু বেশি থাকে, সেটাই প্রি ডায়াবেটিস।
কিভাবে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস কি না? ডায়াবেটিস এর স্বাভাবিক মাত্রা কত?
আপনার উপরোক্ত লক্ষণগুলো থাকলে রক্তের সুগার লেভেল টেস্ট করাতে পারেন। সুগার লেভেল এর মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রা থেকে বেশি হলে বুঝতে হবে আপনার শরীরে ডায়াবেটিস রয়েছে।
ডায়াবেটিস মাত্রা (diabetes range)তে সুগাল লেভেল কত হলে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস?
ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা একেবারে নিরাময় করতে পারবেন না, কিন্ত আপনি ডায়াবেটিস কমিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। নিচে কিছু সহজ পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস কমানোর উপায় দেয়া হলঃ
১) নিয়মিত ব্যায়াম করুন
নিয়মিত ব্যায়াম আপনাকে একটি মাঝারি ওজন পেতে এবং সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
দ্রুত হাঁটাচলা,ওজন উত্তোলন, দৌড়ানো, নাচ, হাইকিং, বাইক চালানো, এবং সাঁতার কাটা ইত্যাদি ব্যায়ামগুলো করতে পারেন।
সেরা ব্যায়ামগুলোর মধ্যে একটি সহজ ব্যায়াম হচ্ছে হাঁটাহাঁটি করা। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটবেন। এটি ইনসুলিন মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
নিয়মিত ব্যায়াম ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। তাছাড়া প্রি ডায়াবেটিস থেকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া থেকেও রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
২) খাদ্য তালিকা থেকে চিনি ও শর্করা জাতীয় খাবার বাদ দিন
চিনিযুক্ত এবং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খেলে ডায়াবেটিস ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস হয়ে যেতে পারে।
প্রি -ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। তাই চিনি ও শর্করা জাতীয় খাবার বেশি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত হারে বেড়ে যেতে পারে।
৩৭ টি গবেষণার দেখা গেছে যে, দ্রুততম সর্বোচ্চ কার্বোহাইড্রেট গ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা ৪০% বেশি।
তাই ডায়াবেটিস ঝুঁকি কমাতে এই সব খাবার এড়ানো উচিৎ।
৩) নিয়মিত পানি পান করুন
নিয়মিত পানি পান রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক সীমার মধ্যে রাখতে সাহায্য করে। ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের পাশাপাশি, এটি প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত চিনি বের করিয়ে আপনার কিডনিকে ভাল রাখতে সাহায্য করে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা বেশি পানি পান করে তাদের রক্তে সুগার লেভেল বাড়ার ঝুঁকি কম।
তাই নিয়মিত পানি পান করলে রক্তকে রিহাইড্রেট করতে সাহায্য করে। রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
আর চিনিযুক্ত পানীয় রক্তে, গ্লুকোজ বাড়ায়, ওজন বাড়ায় এবং সেই সাথে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়ায়।
৪) ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া বাড়ান
ফাইবারযুক্ত খাবার রক্তে সুগার সুনিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা এবং হার্টের রােগাশঙ্কা কমাতে সাহায্য করে।
দুই ধরণের ফাইবার রয়েছে:
- অদ্রবণীয় : বাদাম, টমেটো, গাজর ইত্যাদি
- দ্রবণীয় : ওটস, বার্লি, আপেল, ডাল ইত্যাদি
যদিও উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু দ্রবণীয় ফাইবার স্পষ্টভাবে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে বেশি ভূমিকা পালন করে।
যেসব খাবারে ফাইবার বেশি থাকে তার মধ্যে রয়েছেঃ মিষ্টি আলুর শাক, কলমি শাক, পুদিনা পাতা, পুঁইশাক, মুলা,ঢেঁড়স, ডাঁটা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, গাজর ,ফল ইত্যাদি।
দৈনিক মহিলাদের প্রায় ২৫ গ্রাম এবং পুরুষদের প্রায় ৩৮ গ্রাম ফাইবার যুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিৎ। প্রতি ১০০০ ক্যালরির জন্য এটি প্রায় ১৪ গ্রাম।
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
৫) কম গ্লাইসেমিক খাবার গ্রহণ করুন
গ্লাইসেমিক সূচক আমরা কীভাবে খাবার শোষণ করি বা হজম করি তা পরিমাপ করে। রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধির হারকে প্রভাবিত করে ।
কম গ্লাইসেমিক খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে সুগার লেভেল কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
যদিও খাবারের গ্লাইসেমিক সূচক গুরুত্বপূর্ণ, তবে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণও গুরুত্বপূর্ণ।
নিম্ন থেকে মাঝারি গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবারের তালিকা দেয়া হলঃ
- বার্লি
- ইয়োগার্ট
- ওটস
- মটরশুটি
- মসুর ডাল
- গমের পাস্তা ইত্যাদি
কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার বাছাই করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন।
৬) স্ট্রেস লেভেল ম্যানেজ করুন
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ রক্তে সুগার লেভেলকে প্রভাবিত করে।
গ্লুকাগন এবং কর্টিসলের মতো এক ধরনের হরমোন স্ট্রেসের সময় নিঃসৃত হয়। এই হরমোনগুলি রক্তে সুগার লেভেল বাড়িয়ে দেয়।
ব্যায়াম এবং মেডিটেশন স্ট্রেস হ্রাস করে এবং রক্তে সুগার লেভেল কমায়।
ব্যায়াম বা রিলাক্সেশন মানসিক চাপ কমায়। ফলে রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
৭) পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান
পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়।
পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভাব রক্তের সুগার লেভেল এবং ইনসুলিন মাত্রাকেও প্রভাবিত করে। যা ক্ষুধা এবং ওজন বৃদ্ধি করতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব গ্রোথ হরমোন কমায় এবং কর্টিসলের মাত্রা বাড়ায়। এই দুটোই রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পর্যাপ্ত ঘুম আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে। এভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
৮) আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনেগারের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি রক্তে সুগার লেভেল কমাতে সহায়তা করে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভিনেগার আপনার শরীরের শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করে।
এটি পানিতে মিশ্রিত করে উচ্চ কার্বোহাইড্রেট খাবার খাওয়ার আগে পান করতে পারেন।
যাইহোক, যদি আপনি ডায়াবেটিসের ঔষধ খান তাহলে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার আগে আপনার অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।
৯) দারুচিনি
দারুচিনি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি এবং ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রন করে। এটি রক্তের সুগার লেভেলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, দারুচিনি রক্তে সুগারের মাত্রা ২৯% পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।
আপনি ১ কাপ গরম পানিতে ১/২ থেকে ১ চা চামচ দারুচিনি মিশিয়ে প্রতিদিন পান করতে পারেন। আপনি চা, মসৃণ এবং মিষ্টান্নগুলিতে দারচিনি মিশিয়েও খেতে পারেন।
ডায়াবেটিস কমানোর উপায় আরও সহজভাবে জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন।
১০) মেথি
মেথি বীজ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে। কারণ ফাইবার যুক্ত থাকায় এটি রক্তে সুগার লেভেল কমাতে সাহায্য করে।
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে মেথি ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের সুগার লেভেলকে কার্যকরভাবে কমিয়ে দিতে পারে।
ডায়াবেটিস কমানোর জন্য ২ চা চামচ মেথি বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং প্রতিদিন সকালে খালি পেটে সেই পানি পান করুন। এ ছাড়া গরম বা ঠান্ডা পানি বা দুধের সাথেও মেথি বীজের গুঁড়ো খেতে পারেন।
১১) পরিমিত ওজন বজায় রাখুন
একটি পরিমিত ওজন বজায় রাখা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।
এমনকি শরীরের ওজন ৭% কমলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৫৮% পর্যন্ত কমতে পারে। এটি একটি সাধারণ ডায়াবেটিস ওষুধের চেয়েও ভাল কাজ করে বলে মনে হয়।
এক গবেষণায় দেখা গেছে যে , প্রি ডায়াবেটিস সহ ১০০০ এরও বেশি মানুষের প্রতি কেজি (২.২ পাউন্ড) ওজন হারানোর জন্য, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১৬% কমেছে, সর্বোচ্চ ৯৬% পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।
অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিস বাড়ানোর সম্ভাবনা বাড়ায়। আর যদি ওজন কমিয়ে নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলেন তাহলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যাবে।
দেহের ওজন স্বাস্থ্যকর মাত্রায় নিয়ন্ত্রিত রাখার মধ্য দিয়ে ডায়াবেটিস সহ আরও বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।
আরও পড়ুনঃ ওজন কমানোর উপায় : সহজেই দ্রুত ওজন কমানোর ২২টি টিপস
১২) ডায়েটে কম কার্বোহাইড্রেট খাবার রাখুন
ডায়েটে খুব কম কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার রাখা আপনাকে ডায়াবেটিস এড়াতে সাহায্য করতে পারে।
ফলে ধারাবাহিকভাবে রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে এবং অন্যান্য ডায়াবেটিসের ঝুঁকির কারণগুলি হ্রাস করতে সহায়তা করে।
১২ সপ্তাহের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রি ডায়াবেটিক ব্যক্তিরা কম চর্বিযুক্ত বা কম-কার্বযুক্ত খাবার খায়। ফলে লো-কার্ব গ্রুপে রক্তে শর্করার পরিমাণ ১২% এবং ইনসুলিন ৫০% হ্রাস পেয়েছে। এদিকে, কম চর্বি গ্রুপে , রক্তে শর্করার পরিমাণ মাত্র ১% এবং ইনসুলিন ১৯% হ্রাস পেয়েছে।
আপনি যদি শর্করা খাওয়া কমিয়ে দেন, তাহলে খওয়ার পর আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি বাড়বে না।
অতএব, আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে আপনার কম ইনসুলিনের প্রয়োজন হবে।
তাই কেটোজেনিক বা খুব কম কার্ব ডায়েট অনুসরণ করলে রক্তে শর্করার এবং ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে।
১৩) অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা জেলে রয়েছে একটি শক্তিশালী উপাদান যার নাম ফাইটোস্ট্যারলস। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, ফাইটোস্ট্যারলস টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য উপকারী।
দিনে ২ বার পানির সঙ্গে হলুদ, তেজপাতা ও অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে পান করুন। যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
১৪) নিয়মিত সুগার লেভেল পরীক্ষা করুণ
নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজের লেভেল পরিমাপ এবং পর্যবেক্ষণ করুণ। যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
উদাহরণস্বরূপ, নিয়মিত সুগার লেভেল পর্যবেক্ষণ ,খাবার বা ওষুধের অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে হবে কিনা তা নির্ধারণ করতে সহায়তা করে।
এটি নির্দিষ্ট খাবার আপনার শরীরে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় তা জানতেও সহায়তা করবে।
১৫) ধূমপান ছেড়ে দিন
ধূমপান হৃদরোগ, এমফিসেমা এবং ফুসফুস, স্তন, এবং ক্যান্সার সহ অনেক গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে।
একটি এক মিলিয়নেরও বেশি লোকের গবেষণার দেখা গেছে, গড় ধূমপায়ীদের মধ্যে ৪৪% এবং যারা প্রতিদিন ২০ টিরও বেশি সিগারেট খায় তাদের মধ্যে ৬১% ডায়াবেটিসের ঝুঁকি রয়েছে।
বিশেষ করে ভারী ধূমপায়ীদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেক বেশি। সময়ের সাথে এই ঝুঁকি কমতে পারে।
১৬) ভিটামিন ডি লেভেল ঠিক রাখা
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি পায় না এবং যাদের রক্তে ভিতামিন ডি এর মাত্রা কম, তাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি।
অনেক স্বাস্থ্য সংস্থা ভিটামিন ডিয়ের মাত্রা কমপক্ষে ৩০ এনজি/মি.লি. বজায় রাখার সুপারিশ দিয়েছেন।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যাদের রক্তে ভিটামিন ডিয়ের মাত্রা কম তাদের চেয়ে যাদের রক্তে ভিটামিন ডিয়ের মাত্রা বেশি তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৪৩% কম।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ভিটামিন ডি গ্রহণ করে তাদের ইনসুলিন উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, রক্তে সুগার লেভেল স্বাভাবিক হয়, ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
সূর্যের আলো, সামদ্রিক মাছ যেমনঃ টুনা, সার্ডিন, ডিমের কুসুম, মাশরুম ইত্যাদি ভিটামিন ডি এর ভালো উৎস।
১৭) প্রক্রিয়াজাত খাবার কমান
আপনার স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিমাণ কমিয়ে নিন।
গবেষণায় দেখা গেছে যে উদ্ভিজ্জ তেল, পরিশোধিত শস্য ইত্যাদি খাওয়া কমালে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমতে সাহায্য করে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার (যেমনঃ ফ্রাইস, পিজ্জা, বার্গার ইত্যাদি) খাওয়ার ফলে উচ্চ কোলেস্টেরল, হজমে সমস্যা এবং হৃদরোগের মতো বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে। এই সব খাবার দেহের ইনসুলিনের মাত্রাকে ভারসাম্যহীন করে ফেলে। যা থেকে ডায়াবেটিস রোগও দেখা দিতে পারে।
১৮) কফি বা চা পান
গবেষণায় দেখা গেছে যে কফি বা চা ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে , টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি প্রতিদিন কফি পানে ৮–৫৪% কমে যেতে পারে।
কফি এবং চাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা পলিফেনল নামে পরিচিত এবং যা ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করতে পারে।
কফি বা চা রক্তের শর্করার লেভেল কমাতে সাহায্য করে যা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
১৯) প্রাকৃতিক ঔষধ
কিছু ভেষজ আছে যা ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়াতে এবং ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
কারকিউমিন
কারকিউমিন হল মসলা হলুদের একটি উপাদান, যা তরকারির অন্যতম প্রধান উপাদান।
গবেষণায় দেখা গেছে যে ,আর্থ্রাইটিসের বিরুদ্ধে এবং প্রি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি কার্যকরী হতে পারে।
এটি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
২৪০ প্রি ডায়াবেটিক প্রাপ্তবয়স্কদের নয় মাসের গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ৭৫০ মিলিগ্রাম কারকিউমিন গ্রহণ করে তাদের মধ্যে কারও ডায়াবেটিস হয় নি।
এছাড়াও, কারকিউমিন গ্রুপ সুগার লেভেলকে নিয়ন্ত্রিত করে ডায়াবেটিস কমাতে সহায়তা করে।
বারবেরিন
বারবেরিন বিভিন্ন ঔষধিতে পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটি কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়।
এছাড়াও, টাইপ 2 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে বারবেরিন রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
প্রকৃতপক্ষে, ১৪ টি গবেষণার একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, বারবারিন রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে আনার জন্য মেটফর্মিনের মতোই কার্যকর, যা প্রাচীনতম এবং বহুল ব্যবহৃত ডায়াবেটিসের ওষুধ ।
যেহেতু বারবেরিন ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে এবং শর্করার মাত্রা কমাতে কাজ করে। সেহেতু এটি প্রি -ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।
যেহেতু রক্তে শর্করার উপর এর প্রভাব এত প্রবল, তাই এটি ডাক্তার দ্বারা অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত অন্যান্য ডায়াবেটিস ওষুধের সাথে ব্যবহার করা উচিত নয়।
২০) ঘরোয়া উপায়
কিছু প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায় রয়েছে যেগুলো দ্বারা আপনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। নিচে কয়েকটি আলোচনা করা হলঃ
করলা
করলা ইনসুলিন-পলিপেপটাইড-পি সমৃদ্ধ যা হাইপারগ্লাইসেমিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ক্যারোটিন এবং মমর্ডিসিন নামক দুটি উপাদান করলাতে থাকে যা রক্তে সুগার লেভেল কমাতে সহায়তা করে।
সপ্তাহে একবার ডায়াবেটিস কমাতে করলা তরকারি খান। এ ছাড়া আপনি করলার টুকরোগুলি কেটে রস তৈরি করুণ।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এই রস পান করুন। যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
নিম
নিম বিটা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে। যা রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে এবং হাইপোগ্লাইকাইমিক ড্রাগের উপর নির্ভরতা কমায় ।
নিম ডায়াবেটিস নিরাময়ে ভূমিকা পালন করে।
আমের পাতা
আমের পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসার জন্য কার্যকরী ঘরোয়া উপায়। আমের পাতা ডায়াবেটিসের প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এতে ভিটামিন সি, এ এবং ট্যানিন থাকে ।
আমের পাতাগুলি ধুয়ে শুকিয়ে গুঁড়ো করে প্রতিদিন সকালে ও রাতে এই গুঁড়ো পানি পান করুন। কিছু তাজা আমের পাতা সিদ্ধ করে এক গ্লাস পানিতে সারা রাত ঠান্ডা করে রাখার জন্য রেখে দিন। তারপর সকালে উঠে খালি পেটে তা পান করুণ।
তাছাড়া আমলকি, তুলসি পাতা, সজনে পাতা ইত্যাদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
ডায়াবেটিস কমানোর উপায় নিয়ে আজ এই পর্যন্তই। ধন্যবাদ।