ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম, নিয়ত ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসআলা

ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম, নিয়ত ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসআলা

ঈদের দিন ঈদ নামাজ পড়ার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর আনন্দের দিনের সূচনা হয়। ঈদ আরবী শব্দ। এমন দিনকে ঈদ বলা হয় যে দিন মানুষ একত্র হয় ও দিনটি বার বার ফিরে আসে।

এটা আরবী শব্দ عاد يعود থেকে উৎপত্তি হয়েছে। যার অর্থ ফিরে আসা। অনেকে বলেন এটা আরবী শব্দ العادة আদত বা অভ্যাস থেকে উৎপত্তি হয়েছে। কেননা মানুষ ঈদ উদযাপনে অভ্যস্ত।

সে যাই হোক, যেহেতু এ দিনটি বার বার ফিরে আসে তাই এর নাম ঈদ। এ শব্দ দ্বারা এ দিবসের নাম রাখার তাৎপর্য হলো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ দিবসে তার বান্দাদেরকে নেয়ামত ও অনুগ্রহ দ্বারা বার বার ধন্য করেন ও বার বার তার এহসানের দৃষ্টি দান করেন।

যেমন রমজানে পানাহার নিষিদ্ধ করার পর আবার পানাহারের আদেশ প্রদান করেন। ছদকায়ে ফিতর, হজ-যিয়ারত, কুরবানীর গোশত ইত্যাদি নেয়ামত তিনি বার বার ফিরিয়ে দেন।

আর এ সকল নেয়ামত ফিরে পেয়ে ভোগ করার জন্য অভ্যাসগত ভাবেই মানুষ আনন্দ-ফুর্তি করে থাকে।

ইসলামে ঈদের প্রচলন

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসলিম উম্মাহর প্রতি রহমত হিসেবে ঈদ দান করেছেন। হাদীসে এসেছে— 

‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনাতে আগমন করলেন তখন মদিনা বাসীদের দুটো দিবস ছিল, যে দিবসে তারা খেলাধুলা করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন এ দু দিনের কি তাৎপর্য আছে? মদিনা বাসীগণ উত্তর দিলেন : আমরা মূর্খতার যুগে এ দু দিনে খেলাধুলা করতাম। তখন রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন :

‘আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ দু দিনের পরিবর্তে তোমাদের এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ দুটো দিন দিয়েছেন। তা হল ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর।’[ আবু দাউদ : ৯৫৯] 

শুধু খেলাধুলা, আমোদ-ফুর্তির জন্য যে দুটো দিন ছিল আল্লাহ তাআলা তা পরিবর্তন করে এমন দুটো দিন দান করলেন যে দিনে আল্লাহর শুকরিয়া, তার যিকির, তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সাথে সাথে শালীন আমোদ-ফুর্তি, সাজ-সজ্জা, খাওয়া-দাওয়া করা হবে। 

ঈদের তাৎপর্য

ইতিপূর্বে আলোচিত আনাস রা. বর্ণিত হাদীস থেকে ঈদের তাৎপর্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেছে। তা হল আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উম্মতে মুহাম্মদীকে সম্মানিত করে তাদের এ দুটো ঈদ দান করেছেন। আর এ দুটো দিন বিশ্বে যত উৎসবের দিন ও শ্রেষ্ঠ দিন রয়েছে তার সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন ও সেরা ঈদ

ইসলামের এ দু’টো উৎসবের দিন শুধু আনন্দ-ফুর্তির দিন নয়। বরং এ দিন দুটোকে আনন্দ-উৎসব এর সাথে সাথে জগৎসমূহের প্রতিপালকের ইবাদত-বন্দেগী দ্বারা সুসজ্জিত করা হবে।

যিনি জীবন দান করেছেন, দান করেছেন সুন্দর আকৃতি, সুস্থ শরীর, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, পরিবার-পরিজন, যার জন্য জীবন ও মরণ তাকে এ আনন্দের দিনে ভুলে থাকা হবে আর সব কিছু ঠিকঠাক মত চলবে এটা কীভাবে মেনে নেয়া যায়? তাই ইসলাম আনন্দ-উৎসবের এ দিনটাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত-বন্দেগী, তার প্রতি শুকরিয়া-কৃতজ্ঞতা প্রকাশ দ্বারা সু-সজ্জিত করেছে।

ঈদের দিনের করণীয়

ঈদের দিনে কিছু করণীয় আছে যা নীচে আলোচনা করা হল : 

গোসল করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা

ঈদের দিন গোসল করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা মুস্তাহাব। কেননা এ দিনে সকল মানুষ সালাত আদায়ের জন্য মিলিত হয়। যে কারণে জুমআর দিন গোসল করা মুস্তাহাব সে কারণেই ঈদের দিন ঈদের নামাজের পূর্বে গোসল করা মুস্তাহাব। হাদীসে এসেছে— 

ইবনে উমার রা. থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত যে তিনি ঈদুল-ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। সায়ীদ ইবনে মুসাইয়াব রহ. বলেন : ঈদুল ফিতরের সুন্নত তিনটি : ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া, ঈদগাহের দিকে রওয়ানার পূর্বে কিছু খাওয়া, গোসল করা। [ ইরওয়া উল গালিল : ২/১০৪ ] 

এমনিভাবে সুগন্ধি ব্যবহার ও উত্তম পোশাক পরিধান করা মুস্তাহাব। হাদীসে এসেছে— 

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত যে, উমার রা. একবার বাজার থেকে একটি রেশমি কাপড়ের জুব্বা আনলেন ও রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে দিয়ে বললেন : আপনি এটা কিনে নিন। ঈদের সময় ও আগত গণ্যমান্য প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাতে পরিধান করবেন। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন :

‘এটা তার পোশাক যার আখেরাতে কোন অংশ নেই।’ [ বুখারী : ৯৪৮ ] 

এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের দিনে উত্তম পোশাক পরিধান করার প্রয়োজনীয়তার প্রতি সম্মতি দিয়েছেন। আর উক্ত পোশাকটি রেশমি পোশাক হওয়ায় তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। কেননা, ইসলামী শরীয়তে পুরুষদের রেশমি পোশাক পরিধান জায়েয নয়। 

ইবনে উমার রা. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত যে তিনি দু ঈদের দিনে সুন্দরতম পোশাক পরিধান করতেন। [ বায়হাকী : ১৯০১ ] 

ইমাম মালেক রহ. বলেন:

‘আমি ওলামাদের কাছ থেকে শুনেছি তারা প্রত্যেক ঈদে সুগন্ধি ব্যবহার ও সাজ-সজ্জাকে মুস্তাহাব বলেছেন।’ (আল-মুগনি: ইবনে কুদামাহ) 

ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেছেন: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু ঈদেই ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সুন্দরতম পোশাক পরিধান করতেন। [ যাদুল মায়াদ ] 

এ দিনে সকল মানুষ একত্রে জমায়েত হয়, তাই প্রত্যেক মুসলিমের উচিত হল তার প্রতি আল্লাহর যে নেয়ামত তা প্রকাশ ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করনারথে নিজেকে সর্বোত্তম সাজে সজ্জিত করা। হাদীসে এসেছে— 

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :

‘আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দার উপর তার প্রদত্ত নেয়ামতের প্রকাশ দেখতে পছন্দ করেন।’ [ সহীহ আল-জামে হাদীস নং ১৮৮৭ ] 

ঈদের দিনে খাবার গ্রহণ প্রসঙ্গে

সুন্নত হল ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদের নামাজ আদায়ের পূর্বে খাবার গ্রহণ করা। আর ঈদুল আজহার দিন ঈদের নামাজের পূর্বে কিছু না খেয়ে সালাত আদায়ের পর কুরবানীর গোশত খাওয়া সুন্নত। হাদীসে এসেছে— 

বুরাইদা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের নামাজের পূর্বে খেতেন না। সালাত থেকে ফিরে এসে কুরবানীর গোশত খেতেন। [ আহমদ : ১৪২২ ] 

ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদের নামাজের পূর্বে তিনটি, পাঁচটি অথবা সাতটি এভাবে বে-জোড় সংখ্যায় খেজুর খাওয়া সুন্নত। যেমন হাদীসে এসেছে— 

সাহাবী আনাস রা. বর্ণিত তিনি বলেন :

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন কয়েকটি খেজুর না খেয়ে বের হতেন না, আর খেজুর খেতেন বে-জোড় সংখ্যায়। [ বুখারী : ৯০০ ] 

সম্ভবত আল্লাহর রাব্বুল আলামীনের হুকুম অতি তাড়াতাড়ি আদায় করার ইচ্ছায় রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ করতেন। কেননা দীর্ঘ এক মাস সিয়াম আদায়ের পর আল্লাহর নির্দেশ হল পানাহার করা।

এটা করতে যেন দেরি না হয়ে যায় এজন্য তিনি উপস্থিতভাবে খেজুর হলেও খেয়ে নিতেন। যিনি কুরবানী দেবেন, তার জন্য সুন্নত হল ঈদুল আজহার দিনে প্রথমে কুরবানী দিয়ে তার গোশত খাওয়া। আর যিনি কুরবানী দেবেন না তিনি ঈদের নামাজের পূর্বে কিছু খেতে পারেন। 

ঈদের নামাজ পড়তে পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া 

ঈদগাহে তাড়াতাড়ি যাওয়া উচিত। যাতে ইমাম সাহেবের নিকটবর্তী স্থানে বসা যায় ও ভালো-কাজ অতি তাড়াতাড়ি করার সওয়াব অর্জন করা যায়, সাথে সাথে সালাতের অপেক্ষায় থাকার সওয়াব পাওয়া যায়। ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া হল মুস্তাহাব। হাদীসে এসেছে— 

আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : ‘সুন্নত হল ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া।’ ইমাম তিরমিযী হাদিসটি বর্ণনা করে বলেন হাদিসটি হাসান।

তিনি আরো বলেন : অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম এ অনুযায়ী আমল করেন। এবং তাদের মত হল পুরুষ ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাবে, এটা মুস্তাহাব। আর গ্রহণযোগ্য কোন কারণ ছাড়া যানবাহনে আরোহণ করবে না। [ তিরমিযী : ১৮৭ ] 

আর একটি সুন্নত হল : যে পথে ঈদগাহে যাবে সে পথে না ফিরে অন্য পথে ফিরে আসবে। যেমন হাদীসে এসেছে— 

জাবের রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন :

‘নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের দিনে পথ বিপরীত করতেন।’ [ বুখারী : ৯৩৩ ] 

অর্থাৎ যে পথে ঈদগাহে যেতেন সে পথে ফিরে না এসে অন্য পথে আসতেন। 

তিনি এটা কেন করতেন ? এর ব্যাখ্যায় উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন হিকমত বর্ণনা করেছেন। অনেকে বলেছেন : যেন ঈদের দিনে উভয় পথের লোকদেরকে সালাম দেয়া ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায় এ কারণে তিনি দুটো পথ ব্যবহার করতেন।

আবার অনেকে বলেছেন ইসলাম ধর্মের শৌর্য-বীর্য প্রকাশ করার জন্য তিনি সকল পথে আসা-যাওয়া করতেন যেন সকল পথের অধিবাসীরা মুসলমানদের শান-শওকত প্রত্যক্ষ করতে পারে।

আবার কেউ বলেছেন গাছ-পালা তরুলতা সহ মাটি যেন অধিক হারে মুসলমানদের পক্ষে সাক্ষী হতে পারে সে জন্য তিনি একাধিক পথ ব্যবহার করতেন।

আসল কথা হল, হিকমত ও উদ্দেশ্য যাই হোক, আর তা বুঝে আসুক বা না আসুক, আমাদের কর্তব্য হল আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সুন্নত অনুসরণ করা। [যাদুল-মায়াদ] 

ঈদের নামাজ – তাকবীর আদায় 

হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে পৌঁছা পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতেন। ঈদের সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতেন। যখন সালাত শেষ হয়ে যেত তখন আর তাকবীর পাঠ করতেন না।

আর কোন কোন বর্ণনায় ঈদুল আজহার ব্যাপারে একই কথা পাওয়া যায়। আরো প্রমাণিত আছে যে ইবনে উমার রা. ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে ঈদগাহে আসা পর্যন্ত উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করতেন। ঈদগাহে এসে ইমামের আগমন পর্যন্ত এভাবে তাকবীর পাঠ করতেন।

আগে আলোচিত হয়েছে যে, সুন্নত হল মসজিদ, বাজার, রাস্তা-ঘাট সহ সর্বত্র উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল মানুষ এ সুন্নতের প্রতি খুবই উদাসীন। আমাদের সকলের কর্তব্য হবে এ সুন্নতটি সমাজে চালু করার জন্য প্রচেষ্টা চালান।

শেষ রমজানের সূর্যাস্তের পর থেকে ঈদুল ফিতরের সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করবে। বিশেষভাবে ঈদগাহের উদ্দেশ্যে যখন বের হবে ও ঈদগাহে সালাতের অপেক্ষায় যখন থাকবে তখন গুরুত্ব সহকারে তাকবীর পাঠ করবে।

ঈদের নামাজ

ঈদের নামাজের হুকুম

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন— 

‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও কুরবানী কর।’ [সূরা কাউসার : ০২] 

অধিকাংশ মুফাসসিরে কেরামের মতে এ আয়াতে সালাত বলতে ঈদের সালাতকে বুঝানো হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা এ সালাত আদায় করেছেন। কোন ঈদেই ঈদের নামাজ পরিত্যাগ করেননি। ইমাম আবু হানীফা রহ. বলেছেন : ‘ঈদের সালাত প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব। তবে ফরজ নয়।’ 

ইবনে তাইমিয়া রহ. ও এ মত পোষণ করেন। আর ঈদের সালাত যে ওয়াজিব এর আরেকটা প্রমাণ হল, যদি কোন সময় জুমআর দিনে (শুক্রবার) ঈদ হয় তখন সে দিন যারা ঈদের নামাজ আদায় করেছে তারা জুমআর সালাতের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ করে। অর্থাৎ জুমআর সালাতে অংশ না নিলে কোন গুনাহ নেই।

তবে এলাকার ইমামের কর্তব্য হল, সে ঈদের দিনে জুমআর সালাতের ব্যবস্থা করবে, যাদের আগ্রহ আছে তারা যাতে শরিক হতে পারে। মনে রাখতে হবে ঈদের দিন জুমআর সালাত পরিত্যাগ করার অনুমতি আছে। আর এ অনুমতির ভিত্তিতে কেউ জুমআর সালাত ত্যাগ করলে তার অবশ্যই জোহরের সালাত আদায় করতে হবে।

তবে উত্তম আমল হবে জুমআর দিনে ঈদ হলে জুমআ ও ঈদের সালাত উভয়টাই আদায় করা। কোন অবস্থাই কেউ যেন ঈদের নামাজ আদায়ে অলসতা না করে। শিশু-সন্তানদের ঈদ নামাজ-এ নিয়ে যাবে ও ব্যবস্থা থাকলে মেয়েদের যেতে উৎসাহিত করবে।

মনে রাখতে হবে ঈদের সালাত ইসলামের একটি শিআ’র তথা মহান নিদর্শন। শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী রহ. বলেছেন : ‘প্রত্যেক জাতির এমন কিছু উৎসব থাকে যাতে সকলে একত্র হয়ে নিজেদের শান-শওকত, সংখ্যাধিক্য প্রদর্শন করে।

ঈদ মুসলিম জাতির এমনি একটি উৎসব। এ কারণেই তো শিশু, নারী, এমন মহিলা যারা সাধারণত ঘরের বাইরে বের হয় না ও ঋতুবতী মেয়ে লোক -যাদের সালাত আদায় করতে হয় না—এদের সহ সকলকেই এ দিনে ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হওয়া মুস্তাহাব। [ হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ ] 

ঈদের নামাজের জামাতে মহিলাদের অংশগ্রহণের নির্দেশ 

পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের জামাতে ও জুমআর সালাতে মহিলাদের অংশ গ্রহণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেয়েদেরকে ঈদের সালাতে অংশ গ্রহণ করার হুকুম (নির্দেশ) দিয়েছেন। যেমন হাদীসে এসেছে— 

‘উম্মে আতিয়া রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশ করেছেন আমরা মেয়েরা যেন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে সালাতের জন্য বের হয়ে যাই ; পরিণত বয়স্কা, ঋতুবতী ও গৃহবাসিনী সকলেই বের হবে। কিন্তু ঋতুবতী মেয়েরা (ঈদগাহে উপস্থিত হয়ে) সালাত আদায় থেকে বিরত থাকবে তবে কল্যাণ ও মুসলিমদের দোয়ায় অংশ নেবে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মাঝে কারো কারো ওড়না নেই। (যা পরিধান করে সে ঈদের সালাতে যেতে পারে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : তার বোন তাকে নিজের ওড়নাগুলো থেকে একটি ওড়না পরিধান করাবে।’ [ মুসলিম : ১৪৭৫ ] 

দুঃখের বিষয় হল আজকে দেখা যায় অনেকে মেয়েদের ঈদের সালাতে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত করেন। অনেকে বাধা দেন। আবার কোথাও মহিলাদের জন্য ঈদের সালাতের ব্যবস্থা করা সম্ভব হলেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না বা এটাকে একেবারে অপ্রয়োজনীয় মনে করা হয়।

বলা হয়, বর্তমান যুগ ফিতনার যুগ, কোন নিরাপত্তা নেই ইত্যাদি বলে কত অজুহাত সৃষ্টি করা হয়—যাতে মেয়েরা ঈদের সালাতে অংশ না নেয়। আসলে কোন অজুহাতই এ ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নির্দেশ ও তাঁর সুন্নাহর বিপরীতে যত অজুহাত ও যুক্তি দেয়া হোক না কেন সবই প্রত্যাখ্যান করতে হবে।

যেমন আমরা এ হাদিসটিতে দেখি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন অজুহাত গ্রহণ করেননি। কেউ বলেছিল অনেকের ওড়না নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তার বোন তাকে ওড়না ধার দেবে।’ এমনকি যারা ঋতুবতী ছিল তাদেরকেও নির্দেশ দেয়া হল যে, তোমরা ঈদগাহে যাবে।

তাদের সালাত আদায় বৈধ না হওয়া সত্ত্বেও ঈদের জামাত ও সালাত প্রত্যক্ষ করবে। তাই আমাদের কর্তব্য হবে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মৃতপ্রায় এ সুন্নতকে বাস্তবায়ন করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আমাদের মনে রাখতে হবে যুগের ফিতনা ও মেয়েদের ফিতনা সম্পর্কে আমাদের চেয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক বেশি সচেতন ছিলেন। 

ঈদের নামাজ আদায়ের সময় : 

সূর্যোদয়ের পর যখন তা এক লেজা (অর্ধ হাত) পরিমাণ উপরে উঠে তখন থেকে শুরু করে সূর্য ঠিক মাথার উপরে আসা পর্যন্ত সময়টা হল সালাতুল ঈদ আদায়ের ওয়াক্ত। এ সময়ের মাঝে যে কোন সময় ঈদের সালাত আদায় করা যায়।

ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেছেন : নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতরের সালাত দেরি করে আদায় করতেন আর ঈদুল আজহার সালাত প্রথম ওয়াক্তে তাড়াতাড়ি আদায় করতেন। [ যাদুল-মায়াদ ] 

ঈদুল ফিতরে ঈদ নামাজ একটু দেরিতে আদায় করতেন, যাতে মুসলমানগণ সদকাতুল ফিতর আদায় করার প্রয়োজনীয় সময় পায়। আর ঈদুল আজহার সালাত তাড়াতাড়ি আদায় করতেন, যাতে মুসলমানগণ সালাত শেষ করে দুপুরের পূর্বে কুরবানীর পশু জবেহ সম্পন্ন করতে পারে। 

ঈদের নামাজ কোথায় আদায় করবেন ? 

হাদীসে এসেছে :— 

আবু সাইদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হতেন…।’[ বুখারী : ৯০৩] 

ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন: ‘রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ হল তিনি সর্বদা ঈদের নামাজ ঈদগাহে আদায় করতেন।’[ যাদুল-মায়াদ ] 

ইবনে কুদামাহ রহ. বলেন: ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো উত্তম কাজ পরিত্যাগ করেননি। কখনো পরিপূর্ণতা বাদ দিয়ে অপূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি অনুসরণ করেননি। তার চেয়ে বড় কথা হল আমাদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর আনুগত্যের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এসব দিকে লক্ষ্য করে আমাদের অবশ্যই ঈদের সালাত ঈদগাহে (উন্মুক্ত প্রান্তরে) আদায় করা উচিত।’ 

আর রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো ঈদের সালাত মসজিদে আদায় করেছেন এমন কোন বর্ণনা নেই। অবশ্য আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ বর্ণিত একটি হাদীসে জানা যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার কোন এক অসুবিধা থাকায় মসজিদে ঈদের সালাত আদায় করেছেন।

তবে এ হাদিসটিকে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দীন আলবানী দুর্বল বলে প্রমাণ করেছেন। তাই আমাদের অলসতা পরিত্যাগ করে কিছুটা কষ্ট করে হলেও ঈদের সালাত ঈদগাহে আদায় করার ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিত। এ দিনে মুসলিমগণ এক সম্মেলনে মিলিত হবেন। মসজিদ এ কাজের জন্য যথাযথ প্রশস্ত স্থান হতে পারে না।

মসজিদে সালাত আদায়ের ফযীলত থাকা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। এমনিভাবে মসজিদের ফযীলত থাকা সত্ত্বেও নফল নামায ঘরে আদায় করা উত্তম। 

ঈদের নামাজের পূর্বে কোন নামাজ/সালাত নেই 

হাদীসে এসেছে :— 

ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত,

‘নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল-ফিতরের দিনে বের হয়ে দু রাকাআত ঈদের সালাত আদায় করেছেন। এর পূর্বে ও পরে অন্য কোন নামায আদায় করেননি।’ [ বুখারী : ৯৩৫ ] 

সুন্নত হল ঈদের সালাতের ওয়াক্তে শুধু ঈদের নামায আদায় করবে অন্য কোন নফল নামায আদায় করবে না। তবে যদি কোন অসুবিধার কারণে ঈদের সালাত মসজিদে আদায় করতে হয় তাহলে মসজিদে প্রবেশ করে দু রাকাআত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করা যেতে পারে। 

ঈদের নামাজে আযান

হাদীসে এসেছে :— 

ইবনে আব্বাস ও জাবের রা. থেকে বর্ণিত তারা বলেন:

‘ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সালাতে আযান দেয়া হতো না। [ বুখারী : ৯০৭ ] 

জাবের ইবনে সামুরা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: ‘আমি একাধিকবার রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাথে দু ঈদের সালাত আদায় করেছি কোন আযান ও ইকামাত ব্যতীত।’ [ মুসলিম : ১৪৬৭ ] 

ঈদের নামাজ আদায়ের পদ্ধতি 

ঈদের সালাত হল দু’রাকাআত। হাদীসে এসেছে— 

উমার রা.বলেন:

‘জুমআর সালাত দু রাকাআত, ঈদুল ফিতরের সালাত দু রাকাআত, ঈদুল আজহার সালাত দু রাকাআত ও সফর অবস্থায় সালাত হল দু রাকাআত।’ [ নাসায়ী : ১৪০৩ ] 

ঈদের নামাজ শুরু হবে তাকবীরে তাহরীমা দিয়ে। 

ঈদ নামাজ-এ অতিরিক্ত প্রত্যেক তাকবীরের পর হাত উঠাতে হবে। তাকবীর সমূহ আদায় করার পর সুরা ফাতেহা পড়বে, তারপর প্রথম রাকাতে সূরা আ’লা’ পড়বে আর দ্বিতীয় রাকাতে সূরা গাশিয়াহ পড়বে। অথবা প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা কাফ পড়বে আর দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কামার পড়বে। 

এভাবে পড়া মুস্তাহাব। কেউ এভাবে না পড়ে অন্য সূরা দিয়ে পড়লে কোন ক্ষতি নেই। সালাত শেষ হওয়ার পর ইমাম সাহেব খুতবা দেবেন। মনে রাখা দরকার, ঈদের খুতবা হবে সালাত আদায়ের পর। সালাত আদায়ের পূর্বে কোন খুতবা নেই। হাদীসে এসেছে— 

আবু সায়ীদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল-আজহার দিন ঈদগাহের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতেন। ঈদগাহে প্রথম সালাত শুরু করতেন। সালাত শেষে মানুষের দিকে ফিরে খুতবা দিতেন, এ খুতবাতে তিনি তাদের ওয়াজ করতেন, উপদেশ দিতেন, বিভিন্ন নির্দেশ দিতেন। আর এ অবস্থায় মানুষেরা তাদের কাতারে বসে থাকতো।’ [ বুখারী : ৯০৩ ] 

এ হাদীস দ্বারা যে কয়েকটি বিষয় প্রমাণিত হল তার মাঝে: ঈদের নামাজের পূর্বে কোন ওয়াজ-নসিহত বা খুতবা হবে না। ইমাম সাহেব ঈদগাহে এসে সালাত শুরু করে দেবেন। 

ঈদের খুতবা শ্রবণ 

ঈদ নামাজ-এর পর ইমাম দুটো খুতবা দেবেন। সে খুতবায় তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রশংসা, গুণ-গান ও অধিক পরিমাণে তাকবীর পাঠ করবেন। তবে ঈদের নামাজ আদায়কারীকে ঈদের খুতবা শুনতেই হবে এমন কথা নেই। যেমন হাদীসে এসেছে— 

আব্দুল্লাহ বিন সায়েব রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ঈদ উদযাপন করলাম। যখন তিনি ঈদের নামাজ শেষ করলেন, বললেন:

‘আমরা এখন খুতবা দেব। যার ভাল লাগে সে যেন বসে, আর যে চলে যেতে চায়, সে যেতে পারে।’ [আবু দাউদ : ৯৫৭ ] 

আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে খুতবা শুনলে অনেক সওয়াব অর্জন করা যাবে। তাতে যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যিকির আছে, দ্বীনি শিক্ষা বিষয়ক কথা-বার্তা রয়েছে তেমনি রয়েছে ফেরেশতাদের আগমন ও আল্লাহ তা‘আলার সাকীনা ও রহমত। তাই এটা অবহেলা করে হারানো উচিত নয়। 

ঈদ নামাজ-এর কাযা আদায় প্রসঙ্গে 

কারো যদি ঈদের নামাজ ছুটে যায় তাহলে সে কি করবে। কাজা করা দরকার কিনা? এ বিষয়ে উলামাদের একাধিক মত রয়েছে। তবে বিশুদ্ধ মত হল কাজা আদায় করবে। এরপর কথা থেকে যায় সে কাজা আদায় করতে যেয়ে কত রাকাআত আদায় করবে। চার রাকাআত না দু রাকাআত? এ বিষয়ে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত। ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন : ‘যদি কেউ ঈদের নামাজ ধরতে না পারে তবে দু রাকাআত কাজা আদায় করবে।’ আতা রহ. বলেছেন:

‘যদি ঈদের সালাত ছুটে যায় তবে কাজা হিসেবে দু রাকাআত আদায় করবে।’

হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বলেছেন:

‘যদি ঈদের সালাত ছুটে যায় তবে ইমামের সাথে দু রাকাআত আদায় করবে।’

অর্থাৎ কাযা করবে জামাতের সাথে। মূলত দু রাকাআত কাজা আদায় করা যুক্তি সংগত। ইমাম মুযনী সহ একদল ফিকাহবিদ বলেছেন,

‘ঈদের সালাত ছুটে গেলে তা কাজা করার প্রয়োজন নেই।’

আর ইমাম সওরী ও ইমাম আহমদ বিন হান্বল রহ. বলেছেন,

‘যদি কেউ একা একা ঈদের সালাতের কাজা আদায় করে তবে সে দু রাকাআত আদায় করবে। আর যদি জামাতের সাথে আদায় করে তবেও দু রাকাআত।’ [ ফাতহুল বারী ] 

ইমাম আবু হানীফা রহ. বলেছেন :

‘যদি কেউ ঈদের সালাত কোন কারণে আদায় করতে না পারে তবে সে ইচ্ছা করলে কাজা আদায় করতে পারে, আর না করলে কোন অসুবিধা নেই। যদি আদায় করে তবে চার রাকাআতও আদায় করতে পারে আবার দু রাকাআত।’ 

ঈদে শুভেচ্ছা বিনিময়ের ভাষা

একে অপরকে শুভেচ্ছা জানানো, অভিবাদন করা মানুষের সুন্দর চরিত্রের একটি দিক। এতে খারাপ কিছু নেই। বরং এর মাধ্যমে অপরের জন্য কল্যাণ কামনা ও দোয়া করা যায়। পরস্পরের মাঝে বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়। ঈদ উপলক্ষে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানানো শরীয়ত অনুমোদিত একটি বিষয়। বিভিন্ন বাক্য দ্বারা এ শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। যেমন : 

(ক) হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বলেছেন: ‘জোবায়ের ইবনে নফীর থেকে সঠিক সূত্রে বর্ণিত যে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন সাক্ষাৎকালে একে অপরকে বলতেন: 

‘আল্লাহ তাআলা আমাদের ও আপনার ভাল কাজগুলো কবুল করুন।’ [আল মুজামুল কাবির লিত তাবারি : ১৭৫৮৯] 

(খ) ঈদ মুবারক বলে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। 

(গ) প্রতি বছরই আপনারা ভাল থাকুন: وَكُلُّ عَامٍ وَأَنْتُمْ بِخَيْرٍ বলা যায়। এ ধরনের সকল মার্জিত বাক্যের দ্বারা শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। তবে প্রথমে উল্লেখিত বাক্য (تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ) দ্বারা শুভেচ্ছা বিনিময় করা উত্তম। কারণ সাহাবায়ে কেরাম রা. এ বাক্য ব্যবহার করতেন ও এতে পরস্পরের জন্য কল্যাণ কামনা ও আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে দোয়া রয়েছে। আর যদি কেউ সব বাক্যগুলো দ্বারা শুভেচ্ছা বিনিময় করতে চায় তাতে অসুবিধা নেই। যেমন ঈদের দিন দেখা হলে বলবে— 

‘আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমার ও আপনার সৎ-কর্ম সমূহ কবুল করুন। সারা বছরই আপনারা সুখে থাকুন। আপনাকে বরকতময় ঈদের শুভেচ্ছা।’ 

আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ খবর নেয়া ও তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া

সদাচরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে আত্মীয়-স্বজনের মাঝে সবচেয়ে বেশি হকদার হল মাতা ও পিতা। তারপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন। আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ ও তাদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং সকল প্রকার মনোমালিন্য দূর করার জন্য ঈদ হল একটা বিরাট সুযোগ। কেননা হিংসা-বিদ্বেষ ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে খারাপ সম্পর্ক এমন একটা বিষয় যা আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে দেয়। হাদীসে এসেছে— 

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। যে আল্লাহর সাথে শিরক করে তাকে ব্যতীত সে দিন সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। কিন্তু ঐ দু ভাইকে ক্ষমা করা হয় না যাদের মাঝে হিংসা ও দ্বন্দ্ব রয়েছে। তখন (ফেরেশতাদেরকে) বলা হয় এ দুজনকে অবকাশ দাও যেন তারা নিজেদের দ্বন্দ্ব-বিবাদ মিটিয়ে মিলে মিশে যায়! এ দুজনকে অবকাশ দাও যেন তারা নিজেদের দ্বন্দ্ব-বিবাদ মিটিয়ে মিলে মিশে যায়! এ দুজনকে অবকাশ দাও যেন তারা নিজেদের দ্বন্দ্ব-বিবাদ মিটিয়ে মিলে মিশে যায়!! ’ (তাহলে তাদেরও যেন ক্ষমা করে দেয়া হয়)। [ মুসলিম : ৪৬৫২ ] 

এ হাদীস দ্বারা স্পষ্টভাবে অনুধাবন করা যায় যে নিজেদের মাঝে হিংসা, বিবাদ, দ্বন্দ্ব রাখা এত বড় অপরাধ যার কারণে আল্লাহর সাধারণ রহমত তো বটেই বিশেষ ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। হাদীসে আরো এসেছে— 

আবু আইয়ুব আনসারী রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :

‘কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয় যে তার ভাইকে তিন দিনের বেশি সময় বয়কট করবে বা সম্পর্ক ছিন্ন রাখবে। তাদের অবস্থা এমন যে দেখা সাক্ষাৎ হলে একজন অন্য জনকে এড়িয়ে চলে। এ দুজনের মাঝে ঐ ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে প্রথম সালাম দেয়।’ [ মুসলিম : ৪৬৪৩ ] 

এ সকল হাদীসে ভাই বলতে শুধু আপন ভাইকে বুঝানো হয়নি বরং সকল মুসলমানকেই বুঝানো হয়েছে। হোক সে ভাই অথবা প্রতিবেশী কিংবা চাচা বা বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী, সহপাঠী বা অন্য কোন আত্মীয়। তাই যার সাথে ইতিপূর্বে ভাল সম্পর্ক ছিল এমন কোন মুসলমানের সাথে সম্পর্ক খারাপ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায়। যদি কেউ এমন অন্যায়ে লিপ্ত হয়ে পড়ে তার এ অন্যায় থেকে ফিরে আসার এক মহা সুযোগ হল ঈদ।

ঈদে যা বর্জন করা উচিত

ঈদ হল মুসলমানদের শান-শওকত প্রদর্শন, তাদের আত্মার পরিশুদ্ধতা, তাদের ঐক্য সংহতি ও আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উৎসব। কিন্তু দুঃখজনক হল বহু মুসলিম এ দিনটাকে যথার্থ মূল্যায়ন করতে জানে না। তারা এ দিনে বিভিন্ন অইৈসলামীক কাজ-কর্মে মশগুল হয়ে পড়ে। এ ধরনের কিছু কাজ-কর্মের আলোচনা করা হল : 

কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য রাখে এমন ধরনের কাজ বা আচরণ করা 

মুসলিম সমাজে এ ব্যাধি ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা পোশাক-পরিচ্ছদে, চাল-চলনে, শুভেচ্ছা বিনিময়ে অমুসলিমদের অন্ধ অনুকরণে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। এর মাধ্যমে তারা যেমন সাংস্কৃতিক দৈন্যতার পরিচয় দিচ্ছে অপর দিকে নিজেদের তাহজীব-তামাদ্দুনের প্রতি অনীহা দেখাচ্ছে। এ ধরনের আচরণ ইসলামে শরীয়তে নিষিদ্ধ। হাদীসে এসেছে— 

সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্যতা রাখবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে।’ [ আবু দাউদ ৩৫১২ ] 

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, ‘এ হাদীসের বাহ্যিক অর্থ হল, যে কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য রাখবে সে কাফের হয়ে যাবে। যদি এ বাহ্যিক অর্থ (কুফরীর হুকুম) আমরা না-ও ধরি তবুও কমপক্ষে এ কাজটি যে হারাম তাতে সন্দেহ নেই।’ [ আবু দাউদ ৩৫৭৪ ] 

পুরুষ কর্তৃক মহিলার বেশ ধারণ করা ও মহিলা কর্তৃক পুরুষের বেশ ধারণ: 

পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন ও সাজ-সজ্জার ক্ষেত্রে পুরুষের মহিলার বেশ ধারণ ও মহিলার পুরুষের বেশ ধারণ করা হারাম। ঈদের দিনে এ কাজটি অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। হাদীসে এসেছে— 

ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ সকল মহিলাকে অভিসম্পাত করেছেন যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে এবং ঐ সকল পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন যারা মহিলার বেশ ধারণ করে। [ সহীহ আল-জামে হাদীস নং ৪৫৮৪ ] 

ঈদের দিনে কবর যিয়ারত 

কবর যিয়ারত করা শরীয়ত সমর্থিত একটা নেক আমল। যেমন হাদীসে এসেছে— 

আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :

‘আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, হ্যাঁ এখন তোমরা কবর যিয়ারত করবে। কারণ কবর যিয়ারত হৃদয়কে কোমল করে, নয়নকে অশ্র“সিক্ত করে ও পরকালকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে তোমরা শোক ও বেদনা প্রকাশ করতে যেয়ে সেখানে কিছু বলবে না।’ [ আবু দাউদ : ১৭৪৬ ] 

কিন্তু ঈদের দিনে কবর যিয়ারতকে অভ্যাসে পরিণত করা বা একটা প্রথা বানিয়ে নেয়া শরীয়ত সম্মত নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :— 

‘তোমরা আমার কবরে ঈদ উদযাপন করবে না বা ঈদের স্থান বানাবে না…।’ [ সুনানে আবু দাউদ : ২০৩৮ ] 

যদি ঈদের দিনে কবর যিয়ারত করা হয়, তাহলে তা কবরে ঈদ উদযাপন বলে গণ্য হয়। মনে রাখা প্রয়োজন যে ‘ঈদ’ মানে যা বার বার আসে। প্রতি বছরে অথবা প্রতি মাসে বা প্রতি সপ্তাহে। যদি বছরের কোন একটি দিনকে কবর জিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করে নেয়া হয় আর তা প্রতি বছরে করা হয় তা হলে এটার নামই হল কবরে ঈদ উদযাপন। আর সেটা যদি সত্যিকার ঈদের দিনে হয় তবে তা আরো মারাত্মক বলে ধরে নেয়া যায়। যখন আল্লাহর রাসূলের কবরে ঈদ পালন নিষিদ্ধ, তখন অন্যের কবরে ঈদ উদযাপন করার হুকুম কতখানি নিষিদ্ধের পর্যায়ে পড়ে তা একটু অনুমান করা যেতে পারে। 

বেগানা মহিলা পুরুষের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ

মহিলাদের খোলা-মেলা অবস্থায় রাস্তা-ঘাটে বের হওয়া

মনে রাখা প্রয়োজন যে খোলামেলা ও অশালীন পোষাকে রাস্তা-ঘাটে বের হওয়া ইসলামী শরীয়তে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন :— 

‘আর তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন মূর্খতার যুগের মত নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’ [ মুসলিম : ৩৯৭১] 

হাদীসে এসেছে— 

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :

‘জাহান্নামবাসী দু’ ধরনের লোক আছে যাদের আমি এখনও দেখতে পাইনি। (আমার যুগের পরে দেখা যাবে) একদল লোক যাদের সাথে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে, তা দিয়ে তারা লোকজনকে প্রহার করবে। আর এক দল এমন মেয়ে-লোক যারা পোশাক পরিধান করেও উলঙ্গ মানুষের মত হবে। অন্যদের আকৃষ্ট করবে ও তারা অন্যদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের ন্যায়। ওরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবে না। যদিও তার সুগন্ধি বহু দূর থেকে পাওয়া যাবে।’ [ মুসলিম : ৩৯৭১ ] 

মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ 

অনেককে দেখা যায় অন্যান্য সময়ের চেয়ে এই গুনাহের কাজটা ঈদের দিনে বেশি করা হয়। নিকট আত্মীয়দের মাঝে যাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ শরীয়ত অনুমোদিত নয়, তাদের সাথে অবাধে দেখা-সাক্ষাৎ করা হয়। হাদীসে এসেছে— 

সাহাবী উকবাহ ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :

‘তোমরা মেয়েদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখবে।’ আনসারী সাহাবীদের মধ্য থেকে এক লোক প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল ! দেবর-ভাসুর প্রমুখ আত্মীয়দের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি উত্তরে বললেন : ‘এ ধরনের আত্মীয়-স্বজন তো মৃত্যু।’ [ মুসলিম : ৪০৩৭ ] 

এ হাদীসে আরবী ‘হামউ’ শব্দ নেয়া হয়েছে। এর অর্থ এমন সকল আত্মীয় যারা স্বামীর সম্পর্কের দিক দিয়ে নিকটতম। যেমন স্বামীর ভাই, তার মামা, খালু প্রমুখ। তাদেরকে মৃত্যুর সাথে তুলনা করার কারণ হল, এ সকল আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমেই বে-পর্দাজনিত বিপদ আপদ বেশি ঘটে থাকে। যেমনটি অপরিচিত পুরুষদের বেলায় কম ঘটে। 

গান-বাদ্য 

ঈদের দিনে এ গুনাহের কাজটাও বেশি হতে দেখা যায়। গান ও বাদ্যযন্ত্র যে শরীয়তে নিষিদ্ধ এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। আবার যদি হয় অশ্লীল গান তাহলে তো তা হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোন ভিন্নমত নেই। হাদীসে এসেছে— 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :

‘আমার উম্মতের মাঝে এমন একটা দল পাওয়া যাবে যারা ব্যভিচার, রেশমি পোশাক, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল (বৈধ) মনে করবে।’ [ বুখারী : পৃ: ২৯৪ অধ্যায়: ১৭ ] 

এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় গান-বাদ্য নিষিদ্ধ। কারণ হাদীসে বলা হয়েছে ‘তারা হালাল মনে করবে’। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় মূলত এটা হারাম। ইসলামী শরীয়ত কিছু কিছু পর্বে বিনোদনের অনুমতি দিয়েছে। তাই অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম নিম্নোক্ত কয়েকটি সময়ে দফ (একদিকে খোলা ঢোল জাতীয় বাদ্য) বাজানোকে জায়েয বলেছেন.

বিবাহের অনুষ্ঠানে : 

হাদীসে এসেছে— 

রবী বিনতে মুয়াওয়াজ রা. বর্ণনা করেন : ‘যখন আমার বিবাহের অনুষ্ঠান হচ্ছিল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার কাছে এসে আমার বিছানায় এমনভাবে বসলেন যেমন তুমি বসেছ। তখন কয়েকজন বালিকা দফ বাজাচ্ছিল ও আমাদের পূর্ব-পুরুষদের মাঝে যারা বদর যুদ্ধে নিহত হয়েছিল তাদের প্রশংসামূলক সংগীত পরিবেশন করছিল। এ সংগীতের মাঝে এক বালিকা বলে উঠল, ‘আমাদের মাঝে এমন এক নবী আছেন যিনি জানেন আগামী কাল কি হবে।’ তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ‘এ কথা বাদ দাও এবং যা বলছিলে তা বল।’ [ বুখারী: ৪৭৫০ ] 

ঈদের সময়ে : 

যেমন হাদীসে এসেছে— 

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, একদিন আবু বকর রা. আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন দু জন আনসারী বালিকা বুয়াছ যুদ্ধে তাদের বীরত্ব সম্পর্কিত গান গাচ্ছিল, কিন্তু তারা পেশাদার গায়িকা ছিল না। আবু বকর রা. বললেন : ‘আশ্চর্য, আল্লাহর রাসূলের ঘরে শয়তানের বাদ্য !’ এদিনটা ছিল ঈদের দিন। আবু বকর রা. এর একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন :

‘হে আবু বকর ! প্রত্যেক জাতির ঈদ আছে, আর এদিন হল আমাদের ঈদ।’ [ বুখারী : ৮৯৯ ]