বাজারে ফল কিনতে গেলেই সবার প্রথমে নজর আসে এমন একটি বারোমাসি ফলের নাম বলতে বললেই অনেকেরই মাথায় আসবে আপেলের কথা।কারণ আপেলের আছে আকর্ষণীয় রঙ যা আমাদের আকৃষ্ট করে আবার এর অনন্য স্বাদ ও গঠনাকৃতির জন্য আপেল ফলটি আমাদের সবার নজর কাড়ে। তাই আপেল ও আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানুন এই আর্টিকেল পড়ে।
আপেল কি ??
আপেলের ফলকে “The King of Delicious Fruits” বলা হয়। এর কারণ মূলত আপেলের নানা গুণের জন্যই বলা হয়ে থাকে। আপেল হলো রসালো, পামজাতীয় একটি ফল যার বীজ (গুচ্ছ) ভিতরে থাকে এবং বাইরের আবরণের দিকে আবৃত করে মাংসের মতো ঝিল্লি থাকে।
অন্যান্য দেশে আপেলকে শীতকালীন ফল বলা হয় কিন্তু এটি আসলে বারোমাসেই পাওয়া যায় । আপেল ফল সাধারণত গোলাকার হলেই গাছ থেকে কেটে নেওয়া হয়।
আমরা যারা নিয়মিত আপেল খাই, আপেলের উপকারিতা ও পুষ্টি গুণ জেনে খেলে কতটা ভালো লাগবে ভেবে দেখুন তো। আপনাদের জানাতেই আপেলের পুষ্টি সম্পর্কে আজ আলোচনা করা হবে।
আপেলের পুষ্টিগুণ
প্রথমেই প্রতি ১০০ গ্রাম আপেলের পুষ্টি দেখে নিই।
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ | পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
পানি | ৮৬ % | আয়রন | ০.১২ মিলিগ্রাম |
ক্যালরি | ৫২ কিলোক্যালরি | ক্যালসিয়াম | ৬ মিলিগ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ১৩.৮১ গ্রাম | ফসফরাস | ১৪ মিলিগ্রাম |
প্রোটিন | ০.২৬ গ্রাম | ভিটামিন সি | ৪.৬ মিলিগ্রাম |
ফ্যাট | ০.১৭ গ্রাম | নিয়াসিন | ০.০৯১ মিলিগ্রাম |
ফাইবার | ২.৪ গ্রাম | রিবোফ্লাবিন | ০.০২৬ মিলিগ্রাম |
সুগার | ১০.৩৯ গ্রাম | থায়ামিন | ০.০১৭ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৫ মিলিগ্রাম | ফোলেট | ৩ মাইক্রোগ্রাম |
পটাসিয়াম | ১০৭ মিলিগ্রাম | ক্যারোটিনয়েডস | ৫২ মাইক্রোগ্রাম |
আপেলের কি কি পুষ্টি আছে তা তো জেনে নিলাম এবার আসি আপেলের গুণ নিয়ে।
আপেলের উপকারিতা
১) ওজন কমাতে
আমরা যারা ওজন কমাতে চাই তাদেরকে অনান্য ডায়েটের পাশাপাশি আপেল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু জানেন কি আপেল কিভাবে আমাদের ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে?
আপেলে আছে ফাইবার, লো ফ্যাট, লো ক্যালরি যেটিই মূলত ওজন কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার আমাদের পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা রাখতে সহায়তা করে বলে অতিরিক্ত ক্ষুধা নিবারণ করা যায় ও ক্যালরি গ্রহণ কম করা হয় ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
২) ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
আমাদের দেশে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা নেই এমন মানুষ কমই পাওয়া যাবে। পেটের নানা সমস্যা হলেই আমাদেরকে সবাই শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার নির্দেশ দেয়।
কারণ এতে বিদ্যমান ফাইবার পানি শোষণ করে ধরে রাখে ও কোলনের সমস্যা থেকে দূরে রাখে। ফাইবার মল নরম করে ও মল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
৩) স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে
কে না চায় বলুন স্মৃতিশক্তি একটু প্রখর করতে। আমাদের মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারে “অ্যাসিটোকোলিন” নামক একটি যোগ আছে যেটি আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা সঠিকভাবে বজায় রাখে ,এলঝাইমা ও ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করে ও মানসিক চাপ কমায়।
আপেল এই অ্যাসিটোকোলিন এর কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ও নিউটনের অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
৪) উজ্জ্বল ত্বক
ত্বকের যত্নে কোনো ছাড় নয়। তাই যেখানেই ত্বকের কথা শুনি সেখানেই আমরা কান পাতি।
কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন যে, ভিটামিন ‘সি’ ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় । অ্যান্টি অক্সিডেন্ট,ভিটামিন “এ” আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। আর আপেলেই আছে সেসব উপকারিতা।
⇒ আপেলের অন্যান্য পুষ্টিগুণ যেমন রিবোফ্লাবিন, এসব পুষ্টি উপাদান ত্বক টানটান করে,বার্ধক্যের ছাপ স্পষ্ট হতে বাঁধা দেয়,ত্বক উজ্জ্বল করে। ⇒ যাদের ত্বক সেনসিটিভ, অল্পতেই ত্বক লাল বা ফুলে যায় তাদের জন্য আপেল উপকারী। ⇒ আপেল ত্বকের প্যাথোজেন (ত্বকের সমস্যা সমাধায়ক) হিসেবে কাজ করে ও ত্বকে জমে থাকা অপ্রয়োজনীয় (ময়লা) ও অতিরিক্ত তেল বের করে দেয়।
৫) কোলেস্টরল লেভেল কমায়
বাসায় যাদের বয়স্ক মানুষ আছে তাদের অনেকেরই কোলেস্টরল সমস্যা আছে ।
আপেলের পেকটিন ও সলিউবল (soluble) ফাইবার রক্তের খারাপ কোলেস্টরল (LDL) কমিয়ে ভালো কোলেস্টরল (HDL) বৃদ্ধি করে। এছাড়াও এটি ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়।
৬) হাঁপানি সমস্যায়
আপেল পলিফেনল নামক ফাইটোক্যামিক্যাল উপাদান রয়েছে যা হাঁপানি থেকে পুনরুদ্ধার করে, শ্বাসজনিত সমস্যার উন্নতি করে ও ফুসফুসের কার্যকারীতা সচল রাখে।
যে সকল মায়েরা হাঁপানি সমস্যায় ভোগেন তারা গর্ভাবস্থায় আপেল ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেলে বাচ্চার হাঁপানি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
৭) ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই
কয়দিন আগে এক বন্ধুর বাবা মারা গেলেন, জিজ্ঞেস করলাম কি শারীরিক সমস্যা হয়েছিল আঙ্কেলের? বললো ক্যান্সার ধরা পড়ছিল।
নিয়মিত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে ও রঙিন ফলমূল ও শাকসবজি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে ঝুঁকি কমায়।
কারণ ভিটামিন সি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করে ও ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি প্রতিহত করে ও মেরে ফেলে। তাই নিয়মিত ফলমূল খান আর ফলমূলের মনে আপেল অন্যতম।
৮) লিপিড অক্সিডেশন কমায়
বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল যুক্ত খাবারগুলো আমাদের অসুস্থতার হাত থেকে রক্ষা করে।
আপেলে ফ্লাভোনয়েডস নামক ফাইটোক্যামিক্যাল ও ক্যারোটিনয়েডস আছে যা লিপিড অক্সিডেশন কমায় ও শরীরের মেদ জমতে দেয় না।
৯) হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে
একটু ভাজা খাবার আর একটু বেশি খাবার খেলেই হজম সমস্যা যেন নিত্য দিনের সঙ্গী।
আপেল আমাদের অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে ফলে হজমে উন্নতি হয় ,পেট ফাঁপা কমায় ফলে খাবারের রুচি আসে ।
১০) মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষায়
আপেলকে প্রাকৃতিক টুথব্রাশ বলা হয়। টুথব্রাশ মানেই এই না যে, আপেল দাঁত পরিষ্কার করে।
আপেল কামড়ানো বা চিবানোর ফলে আপেলের রস মুখের খারাপ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে দাঁতের ক্ষয়রোগে সাহায্য করে।
কোন কোন উপায়ে আপেল খাওয়া যায়?
বর্তমানে বাজারে আপেলের জ্যাম,জেলি, জুস পাওয়া যায়। সেইভাবেও আমরা আপেল খেতে পারি । তবে প্রসেসিং করলে আপেলের পুষ্টিগুণ আস্ত আপেল থেকে কমে যায়।
তাছাড়া ত্বকের যত্নে আপেলের পেস্ট করে, মাস্ক করে মুখে লাগাতে পারেন, এটি ত্বকের Ph ব্যালেন্স করে। তবে সর্বপ্রথম উচিত হবে ডায়েটে রাখা তারপর ত্বকে প্রয়োগ করা।
গোটা আপেলের প্রয়োজনীয়তাঃ আপেলের জুস করে, আপেলের খোসা ছাড়িয়ে আমরা অনেকেই খাই কিন্তু জুস করলে, খোসা ছাড়ালে ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার কমে যায়। ফলে সঠিক পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হতে হয়। তাই সঠিক পুষ্টি পেতে জুস নয়, গোটা আপেল খান।
আপেলের নিরাপদে রাখার উপায় কি?
বাজারে থেকে কিনে আনা আপেল লবণ ও ভিনেগার দিয়ে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন ও সর্বশেষ পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে করে রাসায়নিক পদার্থ থাকলে দূর হবে ও জীবানুমুক্ত হবে।
সকালে আপেল খেলে কি হয়??
সকালে যদি আমরা আপেল খাই তবে এটি অন্ত্রের গতিপথকে উত্তেজিত করে ও এর প্যাকটিন ল্যাকটিক অ্যাসিডকে রক্ষা করে এবং কোলন ব্যাকটেরিয়া আরও ভালোভাবে বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।
কোন জাতের আপেল ভালো??
আমাদের দেশে ছোট বড় লাল ,হলদে, সবুজ নানা রঙ ও সাইজের আপেল পাওয়া যায়। তবে লাল আপেল একটু স্বাদের মিষ্টি হয় সবুজ আপেলের তুলনায়। তবে পুষ্টি বিবেচনায় সবুজ আপেল খাওয়া উচিত।
আরও পড়ুনঃ আনারসের ১০টি আশ্চর্য উপকারিতা এবং ঔষধি গুণ জেনে নিন
আপেলের অপকারিতা
⇒ রাতে খেলে গ্যাস হয়
আমরা যদি রাতে বা সন্ধ্যায় আপেল খাই তাহলে এটি পেটে গ্যাস তৈরি করে। এছাড়াও আপেলে জৈব অ্যাসিড পাকস্থলীর অ্যাসিডকে সাধারণ স্তরের তুলনায় আরও বাড়িয়ে দেয় ফলে পেটে অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়।
তাই এটি আমরা আপেল ঘুম থেকে ওঠার পরে বা খাবারের কয়েক ঘন্টা পর খেতে পারি।
⇒ ফরমালিনযুক্ত থাকলে
আজকাল ফরমালিন ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ ফলমূল (আপেল) ও অন্যান্য খাবারে মিশিয়ে দেওয়া হয় যাতে দীর্ঘদিন ধরে ভালো থাকে, কিন্তু এই আপেল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
⇒ ওজন বেড়ে যায়
অতিরিক্ত আপেল খেলে ওজন বেড়ে যায়, কারণ আপেলে কার্বোহাইড্রেট আছে যা ওজন বাড়াতে সহায়ক। এছাড়াও অতিরিক্ত খেলে অনেকের গ্যাস হতে পারে।
⇒ সুগার লেভেল বেড়ে যায়
ডায়াবেটিস রোগীরাও আপেল খেতে পারেন, তবে সেটি হতে হবে পরিমাণে অল্প বা একটি মাঝারি সাইজের অর্ধেক। ডায়াবেটিস রোগীরা অতিরিক্ত আপেল খেলে সুগার লেভেল বেড়ে যাবে।
আপেলের চাষ
বর্তমানে বাংলাদেশেই আপেল চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। এটিকে শীতকালীন ফল হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন অনেকেই। কিন্তু এখন আপেলের বিভিন্ন জাত উদ্ভাবন হয়েছে।ফলে বারোমাসেই এই ফল এখন পাওয়া যায় ।
এই ফলের চারা রোপনের ১১ মাস বয়সেই চারা গাছগুলো বেশ বড় হয়ে ওঠে। আমাদের এই আবহাওয়ায় আপেল গাছে ফুল আসে প্রায় ফেব্রুয়ারীর মাসের দিকে এবং এই ফল পাকে আগাস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই।
আপেলের কথা তো গেল, আমরা কি জানি আপেল ফারমেন্টেড করে আপেল সিডার ভিনেগার তৈরি করা হয় যেটিতে আপেলের চেয়ে অনেক বেশি উপকারিতা আছে।
এখন জানব আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে।
সালাদের সাথে কিংবা ছোলা-মুড়ির সাথে একটু ভিনগার না হলেই যেন নয়। ভিনেগার যখন খাচ্ছেন উপকারী দেখে একটি ভিনেগার খান।যেমন- আপেল সিডার ভিনেগার।
আপেল সিডার ভিনেগার কি??
আপেলের সিডার ভিনেগার নাম শুনলেই বোঝা যায় এটি আপেলের দ্বারা তৈরি। মূলত দু’ বার ফারমেন্টেড করার পর আপেল সিডার ভিনেগার বানানো হয়।যারা হেলদি লাইফস্টাইল মেইনটেইন করে তারা আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতার কথা কম বেশি জানে।
এই আপেল সিডার ভিনেগারে ম্যালিক এসিড , এসিটিক এসিড, এনজাইম, ম্যাগনেসিয়াম, প্রোবায়োটিক উপাদান ও পলিফেনল রয়েছে।
আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা
১৷ হেলদি লাইফস্টাইলের পাশাপাশি আপেল সিডার ভিনেগার খেলে ওজন কমে এবং এটি আমাদের খাবারে তৃপ্তি আনতে সহায়তা করে। ২৷ এই ভিনেগার প্রাকৃতিক কোষ্ঠশোধন হিসেবে কাজ করে ফলে হজমে উন্নতি হয়।আর হজম প্রক্রিয়া ভালো হলেই পুষ্টি শোষণ ভালোভাবে ঘটে। ৩৷ যাদের ব্লাড সুগার সব সময় হাই থাকে তাদের জন্য এটি আদর্শ একটি বেভারেজ। যেহেতু এটি ব্লাড সুগার কমায় তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে যারা ওষুধ ও ইনসুলিন নেন তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। কেননা সুগার লেভেল বেশি কমে গেলে অজ্ঞান হয়ে মৃত্যু আশঙ্কা থাকে। ৪৷ যাদের পেটে অতিরিক্ত ফ্যাট আছে তারা নিয়ম মেনে নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার খেলে পেটের মেদ কমে যাবে। ৫৷ যাদের কোলেস্টরল সমস্যা আছে তারাই জানে রক্তে কোলেস্টরল বাড়লে কি কি সমস্যা হয়। কোলেস্টরল বেড়ে গেলে হার্টের সমস্যার সৃষ্টি হয় তাই কোলেস্টরল লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভিনেগার খেতে হবে। এই জন্য খাবার খাওয়ার প্রায় ৩০ মিনিট আগে এক গ্লাস পানিতে এক টেবিল চামচ থেকে দুই টেবিল চামচ ভিনেগার মিশিয়ে খেতে হবে।তবে খালি পেটে যাদের এসিডিটি আছে তারা খালি পেটে খাবেন না,তারা খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পরে করে খেলেও হবে । ৬৷ ডায়াবেটিস রোগীদের শর্করা লেভেল কমাতে যেমন সাহায্য করে তেমনি এটি ডায়াবেটিস প্রতিরোধের ভূমিকা রাখে। ৭৷ এই ভিনেগার শরীরের দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে ও শরীরকে জীবাণু, ব্যাক্টিরিয়া, ফাঙ্গাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং লিভার ডিটক্সিফিকেশন করতে সাহায্য করে। ৮৷ ভিনেগার চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায় ব্যবহৃত হয়। ত্বকের কোমলতা বজায় রাখে, ব্রণ দূর করে ও চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে, চুল পড়া রোধে সাহায্য করে ভিনেগার। ৯৷ যাদের ঠান্ডা সমস্যা তারা ভিনেগার মিশ্রিত পানি দিয়ে গড়গড়া করলে সর্দি, কাশি কমে যায়। ১০৷ যাদের শরীরে ঘামের দুর্গন্ধ থাকে তারা নিয়মিত গোসলেরর সাথে ভিনেগার মিশিয়ে গোসল করতে পারেন।
আপেল সিডার ভিনেগার কি কি উপায়ে খাওয়া যায়?
যেকোনো খাবার সংরক্ষণে আদিম কাল থেকেই ভিনেগার ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ঈদে ফ্রিজ ছাড়া গরুর মাংস সংরক্ষণ, আচার সংরক্ষণ, সস বানাতে ভিনেগার প্রয়োজন হয়। মূলত এটি প্রাকৃতিক প্রিজারভেটিভ হিসেবে কাজ করে।
আপেল সিডার ভিনেগার পানি মিশ্রিত করে জুস করে, মধুর সাথে পানি মিশিয়ে ও স্যুপের সাথে খাওয়া যায়। এছাড়াও রান্নার কাজে এমনকি দই তৈরিতেও ভিনেগার ব্যবহার করা হয়।
আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম জানুন নিচের ভিডিও থেকে।
সর্বোচ্চ কতটুকু ভিনেগার খাওয়া যাবে?
দিনে সর্বোচ্চ ১ থেকে ২ টেবিল চামচ ভিনেগার খাওয়া যাবে । কিন্তু বাচ্চাদেরকে খাওয়ার ব্যাপারে আরো কম দিতে হবে।
আপেল সিডার ভিনেগারের অপকারিতা
⇒ ত্বকের জন্য উপকারী হলেও ভিনেগার কখনো ত্বকে প্রয়োগ করার দরকার নেই বলতে ত্বক জ্বলে যেতে পারে। ⇒ ভিনেগার এসিডিক জাাতীয়, তাই বেশি খেলে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ⇒ যাদের বুক জ্বালা ও এসিডিটি সমস্যা আছে তারা ভিনেগার কম খাবেন বা এড়িয়ে চলাই উত্তম। ⇒ যাদের অ্যালার্জি আছে ভিনেগারে তারা ভিনেগার এড়িয়ে চলুন ও বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও সচেতন থাকুন।
আপেল সিডার ভিনেগারের দাম কত?
আপনার নিশ্চয়ই মনে হতে পারে এই ভিনেগারের দাম তো বেশি অনেক। বাংলাদেশে আপেল সিডার ভিনেগার বিভিন্ন দামে বিক্রি হয়।
তবে ভালো মানের আপেল সিডার ভিনেগার ৫০০ মিলিগ্রাম প্রায় ৪০০-৫০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। ভিনেগার পরিমাণে খুব বেশি খাওয়া লাগে না তাই একটি কিনেই অনেক মাস পার করতে পারবেন।
আপেল ও আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা তো দেখলেন। প্রাকৃতিক খাদ্যের মাধ্যমেই আমরা কতটা সুস্থ থাকতে পারি প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদান গ্রহণ করলেই বোঝা যায়। তাই ত্বকের যত্নে কৃত্রিম পণ্য ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন ও অতিরিক্ত পরিমাণে না জেনেই, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া মুড়ির মতো ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকুন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন ।
Reference:
https://www.researchgate.net/publication/8566240_Apple_phytochemicals_and_their_health_benefits
https://www.researchgate.net/publication/288944473_ROOTSHEALTH_BENEFITS_OF_APPLES
https://www.researchgate.net/publication/322953260_STUDY_ABOUT_THE_NUTRITIONAL_AND_MEDICINAL