পাসপোর্ট শব্দের উৎপত্তি ফরাসী ভাষা থেকে। বৈধ ভাবে যেকোনো দেশে যেতে চাইলে প্রথমে অফিসিয়াল ভাবে যা প্রয়োজন পরে তা হলো পাসপোর্ট। তাই পাসপোর্ট করার নিয়ম এবং পাসপোর্ট করতে যা যা লাগে তা সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা উচিত।
পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে একজন ব্যাক্তির নাগরিকত্ব পরিচয় এর স্বীকৃতি দে পাসপোর্ট। পাসপোর্ট ছাড়া কোনো দেশে যদি আপনি প্রবেশ করেন, তবে তা অনুপ্রবেশ হিসেবেই গণ্য করা হবে তা আপনি নদী, রেল, কিংবা বিমান যেপথেই যান না কেন।
পাসপোর্ট কি
বাংলাদেশী পাসপোর্ট বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য বিদেশ ভ্রমনের একটি অফিসিয়াল দলিল। জন্ম বা অভিবাসন সূত্রে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের নাগরিকদের দিয়ে থাকেন।
বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিস বা বিদেশে বাংলাদেশী দূতাবাস থেকে পাসপোর্ট দেয়া হয়ে থাকে।
আকারে ছোট একটি বই যাতে আপনার ও আপনার দেশ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সেই সাথে আপনার বিদেশ ভ্রমনের অনুমতিসহ তথ্যাবলি উল্লেখ থাকে।
বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়ে ইসরায়েল ছাড়া অন্য সকল দেশে ভ্রমন কিংবা প্রবেশ করা যায় বৈধ ভাবে।
পাসপোর্ট প্রকারভেদ
পাসপোর্ট মূলত তিন ধরণের হয়ে থাকে। যেমন –
১. হাতে লিখা পাসপোর্ট
২. মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP – Machine Readable Passport)
৩. ই-পাসপোর্ট (E-Passport)
হাতে লিখা পাসপোর্ট
হাতে লিখা পাসপোর্ট অনেকটা পুরনো সময়ের পাসপোর্ট বলা যায়। কিছু কিছু দেশে যদিও এখনো হাতে লেখা পাসপোর্ট এর প্রচলন আছে।
তবে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের পর থেকে আর কোনো হাতে লিখা পাসপোর্ট ইস্যু করা হচ্ছে না। তার বদলে নিয়ে এসেছে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা MRP। হাতে লেখা পাসপোর্ট যদি থাকে তবে তা নবায়ন করে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট করা হচ্ছে।
মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP – Machine Readable Passport)
মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা MRP হল এমন একটি পাসপোর্ট যা একটি নির্দিষ্ট যন্ত্র বা মেশিন দ্বারা শনাক্ত করা যায়। এই পাসপোর্টের সকল তথ্য এমন ভাবে থাকে যা একমাত্র মেশিন শনাক্ত করতে পারে।
বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের MRP পাসপোর্ট দেয়া শুরু করেছে। এই পাসপোর্টের কোথাও ব্যাক্তির বিস্তারিত তথ্য থাকে না। এর পরিবর্তে পাসপোর্ট এর পরিচিতি পাতার একটি বিশেষ অংশে সংকেত এর মতো থাকে যা দেখে কিছুই বুঝা যায় না। এই অংশে তথ্যগুলো “coded” থাকে।
ইমিগ্রেশন অফিসাররা যন্ত্রের সাহায্যে তথ্যাবলি এবং ব্যাক্তির পরিচয় নিশ্চিত করেন। এর ফলে ভুয়া পাসপোর্টজনিত অপরাধ অনেক অংশেই কমে গিয়েছে।
এমআরপি পাসপোর্টধারীরা সাভাবিকভাবেই দেশ-বিদেশ যেতে পারবেন।
পাসপোর্ট আবেদনের ধরন ও পাসপোর্ট করার খরচ
পাসপোর্ট আবেদন সাধারণত দুই ধরণের হয়ে থাকে। সাধারণ এবং জটিল। এই আবেদন এর ধরণের উপর পাসপোর্ট করার নিয়ম ও খরচ নির্ভর করে থাকে।
সাধারণ পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রে ফি দিতে হয় ৪০২৫ টাকা। ২১ কর্ম দিবসের মধ্য পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার তারিখ দিয়ে থাকে।
যদিও নিজে করলে ২১ দিনে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। সাধারণত ৪০-৫০ দিনের মতো সময় লাগে। এর আগেও অনেকে পেয়ে যান ভাগ্য ভালো থাকলে।
জরুরী পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ফি দিতে হয় ৮৬২৫ টাকা। ২ কর্ম দিবসের মধ্যে সুপার এক্সপ্রেস এর মাধ্যমে পাওয়ার ডেইট দিয়ে থাকে। যদিও নিজে করলে ১৫-২০ দিনের মতো সময় লেগে যায় হাতে পেতে।
পাসপোর্ট (Passport) করার নিয়মাবলী বা ধাপসমুহ
পাসপোর্ট করতে হলে অফিসিয়াল কিছু নিয়মাবলী এবং ধাপ মেনে এগুতে হয়। যেমনঃ
- ফি জমা দেয়া
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সংগ্রহ
- পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ
- পাসপোর্ট ফরম এবং সংযুক্তি সত্যায়িত করা
- আবেদন ফরম পাসপোর্ট অফিসে জমা দেয়া
- পুলিশ ভেরিফিকেশন
- পাসপোর্টের স্ট্যাটাস চেক করা
- পাসপোর্ট সংগ্রহ করা
পাসপোর্ট ফি জমা
পাসপোর্টের কাজ শুরু হয় পাসপোর্ট ফি জমা দেয়ার মাধ্যমে। পাসপোর্টের ফি অনলাইন-অফলাইন দুইভাবে দেয়া যায়।
অফলাইন অর্থাৎ পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আবেদন করলে ফি জমা দিতে হবে ব্যাংক-এ।
অনলাইনে আবেদন করলে অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া শেষে সেখান থেকেই পাসপোর্ট ফি জমা দেয়ার অপশন থাকে। পাসপোর্ট ফি বা খরচ অনেকাংশেই নির্ভর করে কতো দিনের ভিতর আপনি পাসপোর্ট পেতে চান তার উপর।
পাসপোর্ট পাওয়ার দু-ধরণের সুযোগ আছে। সাধারণ – যাতে ২১ বা এর থেকে বেশি সময়ে পাসপোর্ট হাতে আসে। জরুরী – যাতে ২-৭ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যায়।
বিভিন্ন পাসপোর্টের ফি সমূহ
৪৮ পাতার ৫ বছর মেয়াদ সম্বলিত পাসপোর্ট
পাসপোর্টের ধরণ | কর্মদিবস | টাকা |
সাধারণ পাসপোর্ট | ১৫ | ৪,০২৫ টাকা |
জরুরী পাসপোর্ট | ৭ | ৬,৩২৫ টাকা |
অতি জরুরী পাসপোর্ট | ২ | ৮,৬২৫ টাকা |
৪৮ পাতার ১০ বছর মেয়াদ সম্বলিত পাসপোর্ট
পাসপোর্টের ধরণ | কর্মদিবস | টাকা |
সাধারণ পাসপোর্ট | ১৫ | ৫,৭৫০ টাকা |
জরুরী পাসপোর্ট | ৭ | ৮,০৫০ টাকা |
অতি জরুরী পাসপোর্ট | ২ | ১০,৩৫০ টাকা |
৬৪ পাতার ৫ বছর মেয়াদ সম্বলিত পাসপোর্ট
পাসপোর্টের ধরণ | কর্মদিবস | টাকা |
সাধারণ পাসপোর্ট | ১৫ | ৬,৩২৫ টাকা |
জরুরী পাসপোর্ট | ৭ | ৮,৬২৫ টাকা |
অতি জরুরী পাসপোর্ট | ২ | ১২,০৭৫ টাকা |
৬৪ পাতার ১০ বছর মেয়াদ সম্বলিত পাসপোর্ট
পাসপোর্টের ধরণ | কর্মদিবস | টাকা |
সাধারণ পাসপোর্ট | ১৫ | ৮,০৫০ টাকা |
জরুরী পাসপোর্ট | ৭ | ১০,৩৫০ টাকা |
অতি জরুরী পাসপোর্ট | ২ | ১৩,৮০০ টাকা |
ব্যাংক-এ পাসপোর্ট ফি জমা দেয়া
অফলাইনে আবেদন এর ক্ষেত্রে পাসপোর্ট অফিস এর নির্ধারিত টাকা ব্যাংক এ গিয়ে জমা দিতে হয়। পাসপোর্টের টাকা জমা দেয়ার জন্য একটি স্লিপ দেয়া হয়। যাতে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে স্লিপ সহ টাকা জমা দিতে হয়।
টাকা জমা দেয়ার পর ব্যাংক দুই পার্টের একটা রশিদ দিয়ে থাকে। এর এক পার্ট কাস্টমার কপি এবং অন্য পার্ট পাসপোর্ট অফিসের কপি। পাসপোর্ট আবেদন ফর্মের উপর আঠা দিয়ে লাগাতে হয়। টাকা জমা দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু লক্ষণীয় বিষয় –
- যে এলাকার পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট করানো হয় সে এলাকার ব্যাংক শাখায় টাকা জমা দিলে ভালো।
- পেমেন্ট ভ্যারিফিকেশনে সুবিধার জন্য ব্যাংক স্লিপ এবং পাসপোর্ট-এ একই নাম ব্যবহার করা উচিত।
- টাকা জমা দেয়ার ৬ মাস এর ভিতর পাসপোর্টের আবেদন না করলে পুনরায় নতুন করে ব্যাংক এ টাকা দিতে হবে।
- মানি রিসিট এর ট্রানজেকশন নাম্বারটি গুরুত্বপূর্ণ তাই এটি সংরক্ষন করুন।
- রিসিট-এর নির্দেশনা গুলো ভালোভাবে পড়লে পাসপোর্ট ফর্মের এর কিছু বিভ্রান্তি দূর হয়।
যে যে ব্যাংক গুলোতে পাসপোর্ট করার টাকা জমা দেয়া যায় তা হলো –
- সোনালি ব্যাংক
- প্রিমিয়ার ব্যাংক
- ট্রাস্ট ওয়ান ব্যাংক
- ব্যাংক এশিয়া
- ওয়ান ব্যাংক
- ঢাকা ব্যাংক
অনলাইন আবেদনে ফি জমা দেয়া
অনলাইনে পাসপোর্ট ফি জমা দেয়ার জন্য পাসপোর্ট এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এরপর সঠিক তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করতে হয়।
শেষের দিকে ব্যাংক এর বিভিন্ন গেটওয়ের(ব্যাংক কার্ড, বিকাশ বা রকেট) মাধ্যমে পেমেন্ট করা যায়। ব্যাংক তাদের ফি হিসেবে খুব সামান্য (৩-৫ টাকা) কেটে রাখে।
এই ক্ষেত্রে টাকা পে করার পর একটা ফরম পাওয়া যায়। এই ফরম এর পেইজ দুইটা প্রিন্ট করে একটা নিজের জন্য। অন্যটি পাসপোর্ট ফরম এর জন্য ব্যবহার করা হয়।
আরেকটি পদ্ধতি হল ই-চালান এর মাধ্যমে। এখানে সোনালী ব্যাংকের কার্ড, ভিসা, মাস্টারকার্ড, ডিবিবিএল নেক্সাস কার্ড, কিউক্যাশ, রকেট ও বিকাশ ব্যবহার করে ফি দেয়া যায়।
পাসপোর্টের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সংগ্রহ করা
পাসপোর্ট করার নিয়ম এর মধ্যে আবেদনের স্বপক্ষে কিছু দলিল বা কাগজপত্র জমা দিতে হয়। চলুন জেনে নেই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে।
- পাসপোর্ট ফরম পূরণকৃত – ২ কপি
- সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজ ছবি – ২ কপি
- ন্যাশনাল আইডি কার্ড/স্মার্ট কার্ড অথবা জন্ম নিবন্ধন এর সত্যায়িত ফটোকপি
- ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, গাড়িচালক ও অন্যান্য পেশার লোকদের ক্ষেত্রে পেশাগত সনদের
সত্যায়িত ফটোকপি - সরকারী চাকুরীজীবীদের জন্য No Objection Certificate (NOC) বা Government Order(GO) সরকারি আদেশ দিতে হয়
- নাগরিক সনদপত্র (আসল বা সত্যায়িত ফটোকপি).
আবেদন পত্র জমা দেয়ার সময় সকল কাগজের মূল কপি সাথে রাখলে ভালো। অনেকসময় আবেদন গ্রহনের সময় এটা দেখতে চাওয়া হয়।
পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ
অফলাইন ও অনলাইন দুই ভাবে পাসপোর্টের আবেদন ফরম পূরণ করা যায়।
অফলাইনে পাসপোর্টের আবেদন ফরম পূরণ করতে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে পাসপোর্টের ফরম চাইলে অফিস থেকে তা বিনামূল্যে দেয়া হয়।
পাসপোর্ট এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে Download Form অপশন-এ গিয়ে DIP Form1 ওপেন করে pdf ফরমেটে download করে print করে নিন।
হাতে লিখে ফরম পূরণ করা হয় বলে কয়েক কপি ফটোকপি করে রাখা ভালো। এতে লিখায় ভুল হলে তা সুন্দর করে আবার লিখা যায়।
অনলাইনে ফরমপূরণ এর ক্ষেত্রে
অনলাইনে ফর্ম ফিলাপ করতে প্রথমে তাদের ওয়েবসাইটে যেতে হবে। এরপর এখানে দেয়া সবকিছু ঠিকমতো পড়ে নিন।
I have read the above information & the relevant guidance notes
লিখা box-এ চেক মার্ক করে Continue to online enrollment বাটনে ক্লিক করলেই আপনাকে ফর্ম পূরনের পেইজে নিয়ে যাবে।
এই ধাপে ব্যাক্তিগত সব তথ্য দিতে হয়। ভালো করে চেক করে তথ্য দিতে হয় যাতে এখানে কোন ভূল না হয় বা কোন ফেইক ইনফরমেশন না থাকে।
পাসপোর্ট করার নিয়ম এর সর্বশেষ ধাপে আপনাকে আপনার পেমেন্ট ইনফরমেশন দিতে হয়। সেখানে গিয়ে অফলাইন সিলেক্ট করতে হয়, এরপর যে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছেন সেটা এবং ব্রাঞ্চ সিলেক্ট করতে হয়। আপনার টাকা জমা দেয়া ব্রাঞ্চ লিস্টে খুজে না পেলে সেন্ট্রাল ব্রাঞ্চ ব্যাবহার করতে হবে।সব শেষে ব্যাংকের জমা রিসিটের নাম্বারটি দিতে হবে।
আর অনলাইনেই ফি দিতে চাইলে ঘরে বসেই অন্য ব্যাংকগুলোর একটা সিলেক্ট করে ফি জমা দেয়া যাবে।
আপনার ফর্ম ফিলাপ হয়ে গেল। এবার ফর্মটি ডাউনলোড করে দুই সেট প্রিন্ট করুন।
মনে রাখবেন প্রিন্ট কাগজের উভয় দিকে হবে। মানে এক সেটে পেইজ থাকবে দুটো এবং পৃষ্টা নাম্বার হবে ৪ অর্থাৎ এপিঠ-ওপিঠ প্রিন্ট হবে।
মানে হাতে লেখার ফরমটা যেভাবে প্রিন্ট করা হয় ঠিক সেরকম হবে এইটাও। এক সেট পাসপোর্ট অফিস রাখবে আরেক সেট পুলিশ ভ্যারিফিকেশনের জন্য SB OFFICE-এ পাঠানো হবে।
ফর্মের ছবি লাগানোর জায়গায় আঠা দিয়ে পাসপোর্ট সাইজের সদ্য তোলা ছবিটি লাগিয়ে নিন প্রিন্ট হয়ে গেলে। ২ সেটের জন্য ছবি ২ কপি।
আর যে কোন একটা কপিতে আপনাকে ব্যাংক থেকে যে রশিদটি দেয়া হয়েছিলো সেটার পাসপোর্ট অফিস কপি পার্টটা কেটে আঠা দিয়ে হাতের ডান দিকের উপরের দিকে লাগিয়ে নিতে হবে।
ভূলেও ছবি এবং রিসিট কোন ভাবেই পিন দিয়ে লাগাতে যাবেন না, অবশ্যই অবশ্যই আঠা দিয়ে লাগাবেন।
পাসপোর্ট করার নিয়ম ফরম ও কাগজপত্র সত্যায়িত করা
সঠিক ভাবে ফরম রেডি করে ফেললে এর পরের ধাপ সেগুলো সত্যায়িত করা।
দুই সেট আবেদন ফরম এর সাথে জন্ম নিবন্ধন / জাতীয় পরিচয় পত্র, নাগরিক সনদের ফটোকপি পিন দিয়ে লাগিয়ে নিতে হবে। এখন ফর্মের সেট দুটি পাসপোর্ট অফিসের যে কার কাছ থেকে সত্যায়িত করে নিতে হবে।
যেসকল ব্যাক্তি পাসপোর্ট ফরম ও কাগজ সত্যায়িত করতে পারবেন তারা হলেন –
সংসদ সদস্য, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, ডেপুটি মেয়র, কাউন্সিলরগণ, গেজেটেড কর্মকর্তা,
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, উপজেলা/ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও পৌর কাউন্সিলরগণ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক,
বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক, নোটারী পাবলিক ও স্বায়ত্তশাসিত/আধাসরকারি/রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার জাতীয় বেতন স্কেলের ৭ম ও তদুর্ধ্ব গ্রেডের গ্রেডের কর্মকর্তাগণ।
পাসপোর্ট অফিসে আবেদন ফরম জমা দেয়া
আপনার আবেদন ফরম সত্যায়িত হয়ে গেলে এর পরের ধাপ তা পাসপোর্ট অফিসে জমা দেয়া। অনলাইনে ফরম পূরণ করা হলে ফরমেই লিখা থাকবে তা কোন অফিস এ জমা দিতে হবে।
তবে যদি হাতে পূরন করে থাকেন তবে আপনার ঠিকানা সিটি কর্পোরেশন এর ভেতর হলে রিজিওনাল অফিস। আর সিটি কর্পোরেশন এর বাইরে হলে তা আঞ্চলিক অফিসে জমা দিতে পারবেন।
সব কিছু ঠিক-ঠাক করে সকাল সকাল পাসপোর্ট অফিসে ফর্ম গুলোর দুই সেট নিয়ে চলে যাবেন। সাথে অবশ্যই সব কিছুর অরিজিনাল কপিও রাখবেন, অনেক সময় তা দেখতে চান। তখন দেখানোর প্রয়োজন পড়ে।
আপনার সিরিয়াল নাম্বার আসলে ফর্ম গুলো জমা দিন এবং তারা আপনার ফর্ম গুলো চেক করে দেখবেন। যদি ফর্মে কোন ভূল থাকে, তারা দেখিয়ে দিবেন যে কোথায় ভূল হয়েছে। ভূল হলে সেটা ঠিক করে দিন।
আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে পারেন, সেগুলোর উত্তর আত্মবিশ্বাস এর সাথে দিন।সব কিছু ঠিক থাকলে আপনার আবেদন জমা নেয়া হবে। এরপর কোন রুমে যেতে হবে সেটা বলে দিবে। সেখানে গিয়ে আঙ্গুলের ছাপ, ছবি তুলতে হবে, এবং সিগনেচার দিয়ে একটা রশীদ দেয়া হবে।
রশিদটি ভালো করে দেখুন ইনফরমেশনে কোন ভুল আছে কি না। কারণ এই রশিদে যে ইনফরমেশন দেখাবে আপনার পাসপোর্টে তা হুবুহু সেইম ই প্রিন্ট হবে।
তাই কিছু ভূল দেখতে পেলে সাথে সাথে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানানো উচিত।
কারণ পাসপোর্ট প্রিন্ট হয়ে গেলে তা আর সংশোধন করতে পারবেন না। ভুল শুধরানোর জন্য আবার আরেকটি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা লাগবে। এর মানে আরো সময় ও টাকা দুই লাগবে।
এছাড়া মৌলিক তথ্যগুলো এখন সংশোধন করা যায় না। এই রশীদটি যত্ন করে রাখুন কারণ পাসপোর্ট তৈরি হলে আনার সময় এই রশীদ জমা দিতে হয়।
পুলিশ ভেরিফিকেশন
আবেদন পত্র জমা দেয়ার কিছুদিনের মধ্যেই পুলিশ ভ্যারিফিকেশনের জন্য ডাকা পাসপোর্ট করার নিয়ম এর একটি। পুলিশ পাসপোর্ট আবেদনকারীর বাড়িতে আসতে পারে অথবা আবেদনকারীকে তাদের অফিসেও যেতে বলতে পারে।
এক্ষেত্রে আবেদনকারীকে কিছু ডকুমেন্ট তৈরি রাখতে বলা হয়। যেমন, জায়গা/জমির কাগজ, ইউটিলিটি বিলের কপি ইত্যাদি। ব্যাক্তিভেদে একেক জনের কাছে একেকটা চাওয়া হয়।
পাসপোর্ট আবেদন ফর্মে যদি স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা ভিন্ন হয় তাহলে দুই জায়গাতেই ভেরিফিকেশন হয়ে থাকে। আর একই ঠিকানা হলে এক জায়গাতেই হয়।
এবার আপনার অফিসিয়াল কাজ সব শেষ, অপেক্ষার পালা।
পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করা
অনলাইনে মাঝে মাঝে ঢুকে আপনার পাসপোর্ট এখন কোন অবস্থায় আছে চেক করতে পারবেন।
এই লিঙ্কে গিয়ে আপনার এনরোলমেন্ট আইডি (পাসপোর্ট এর ছবি তোলার পরে আপনাকে যে রশিদ দেয়া হবে সেখানে লিখা থাকবে) এবং জন্ম তারিখ দিতে হয়।
তখনই আপনার পাসপোর্ট এর স্ট্যাটাস দেখতে পারবেন। এছাড়া স্ট্যাটাস চেক এসএমএস করেও জানতে পারবেন।
পাসপোর্ট সংগ্রহ করা
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনার পাসপোর্টের ধরন অনুযায়ী ৭ দিন বা ২০-৩০ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যাবেন।
পাসপোর্ট তৈরি হলে আপনাকে মোবাইলে এসএমএস দিয়ে জানানো হবে। তাছাড়া অনলাইনে স্ট্যাটাস চেক করেও জানতে পারবেন। তাছাড়া কোনো ধরনের ভুল থাকলে পাসপোর্টে সংশোধনের প্রক্রিয়াও রয়েছে।
পাসপোর্ট করার নিয়ম কিংবা পাসপোর্ট করতে কী কী লাগে এসব নিয়ে পরিপূর্ণ ধারণা দিতে এই আর্টিকেল। এছাড়া পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে কিংবা কোন ভূল হলে তা সংশোধন এর উপায় জানতে পড়ুন।