পাসপোর্ট রিনিউ/রি-ইস্যু/তথ্য পরিবর্তন/সংশোধন-এর নিয়মাবলী

পাসপোর্ট রিনিউ/রি-ইস্যু/তথ্য পরিবর্তন/সংশোধন-এর নিয়মাবলী একটু জানা থাকলেই কাজগুলো অনেক সহজ হয়ে যায়।

নতুন করে পাসপোর্ট করার জন্য ফরম পূরণ করে বর্তমান পাসপোর্ট এর ফটোকপি ও ব্যাংকে টাকা জমার রশিদ সংযুক্ত করতে হয় এবং তখন মূল পাসপোর্টটি অবশ্যই সঙ্গে নিয়ে আসতে হয়।


এছাড়া পাসপোর্ট রিনিউ/তথ্য পরিবর্তন/সংশোধনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রমানপত্র সাথে সংযুক্ত করতে হয়। 

ক) সরকারি, আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাষিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার স্থায়ী কর্মচারী/কর্মকর্তা ও সরকারি চাকুরীজীবির স্বামী/স্ত্রী, এবং সরকারি চাকুরীজীবির নির্ভরশীল ১৫ (পনের) বৎসরের কম বয়সী সন্তান  সাধারণ ফি জমা করে জরুরি সুবিধা পাবেন।

এক্ষেত্রে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে অনাপত্তি সনদ (NOC – no objection certificate) ওয়েব সাইটে আপলোড পূর্বক দাখিল করতে হয়।

খ) অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরীজীবি ও তাদের স্বামী/স্ত্রী সাধারণ ফি জমা দিয়ে জরুরি সুবিধা পাবেন। এরজন্য অবসরের সনদ জমা দিতে হয়।

গ) বিদ্যমান মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের তথ্য পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে রি-ইস্যুর আবেদনের জন্য নিম্নরূপ কাগজপত্র প্রয়োজন পরে।

পরিবর্তনযোগ্য তথ্যকাগজপত্র
নিজের নাম/পিতা/মাতার নাম আংশিক পরিবর্তনপরিবর্তন যোগ্য নহে।
নিজের নাম/পিতা/মাতার নাম পূর্ণাঙ্গ পরিবর্তন পরিবর্তন যোগ্য নহে।
বৈবাহিক অবস্থা পরিবর্তন/বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রেনিকাহনামা/ তালাকনামা (যেখানে যে টি প্রযোজ্য)।
জন্ম তারিখ পরিবর্তনপরিবর্তন যোগ্য নহে।
স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তনপুলিশ প্রতিবেদন (এর জন্য পূরণ করা ১ কপি রি-ইস্যু ফরম ও ১ কপি সত্যায়িত নতুন আবেদন ফরম(ডিআইপি ফরম-১))।

আরও পড়ুনঃ নতুন পাসপোর্ট করার নিয়ম

পাসপোর্ট রিনিউ আবেদন প্রক্রিয়ায় সমস্যা হলে তার প্রতিকার

 

নাম বা অন্য তথ্য ভুল হলে 

পাসপোর্টের আবেদন করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করে তথ্য দেয়া হয়। তারপরও ভুল হতে পারে।  ভুল হলে আপনার অনলাইন আবেদন এর সারাংশ নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। 

পাসপোর্ট অফিসের এনরোলমেন্ট অফিসারের সহায়তায় ভুল সংশোধন করে নেয়া যায়। নাম ভুল হলেও তা সংশোধন করে নেয়া যায়।

তবে সেক্ষেত্রে সত্যতা এবং শুদ্ধতা প্রমানের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখানোর প্রয়োজন পড়ে। যেমন – জাতীয় পরিচয়পত্র(NID) অথবা জন্ম নিবন্ধন।

ভুল সংশোধন এর সুযোগ ফি পরিশোধের পরেও থাকে। নাম ভুলের ক্ষেত্রে ছারপত্রের প্রয়োজন পড়ে। যার জন্য অতিরিক্ত সময় অপেক্ষা করতে হয়।

পাসপোর্ট রিনিউ অ্যাপয়েন্টমেন্টে উপস্থিত না হতে পারলে

অনলাইনে আবেদন শেষ হলে আপনাকে পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার নির্ধারিত সময় দেয়া হবে। কোন কারণে সেখানে উপস্থিত হতে না পারলে কিংবা অ্যাপয়েন্টমেন্ট-এর সময় পরিবর্তন করতে চাইলে পরিবর্তন করা যায়। 

এক্ষেত্রে একাউন্ট-এ লগইন করে সেখানে অনলাইন নিবন্ধনে “reschedule/cancel” নামক বাটনে ক্লিক করে  অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময় বদলানো যায়। কিন্তু অ্যাপয়েন্টমেন্ট মিস না করাই উত্তম।

আবেদন করেও যদি অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পান

অনলাইনে আবেদন করার পর অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে অপেক্ষা করতে হয়। ঘন ঘন চেক করতে হয় অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর তারিখ দিলো কি না। 

এমন সমস্যাগুলো মূলত আঞ্চলিক অফিসগুলো-তে হয়ে থাকে। তাই এ সমস্যা এড়াতে বিদেশে যাওয়ার মৌসুম ছাড়া আবেদন করা উচিত।
অফ সিজনে কাজের চাপ কম থাকায় অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে খুব একটা বিরম্বনা হয় না।

পাসপোর্ট এর তথ্যের সাথে বর্তমান তথ্য না মিললে

পাসপোর্টের দেয়া তথ্যের সাথে আপনার বর্তমান তথ্য নাও মিলতে পারে। যেমন – পেশা, বৈবাহিক অবস্থা, বর্তমান ঠিকানা।

এসব তথ্য পরিবর্তন করা যায়। অনলাইন আবেদনের সময় বর্তমান তথ্য দিয়ে আবেদন করা যায়। 

কিন্তু পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আবেদন করার সময় এর প্রমান স্বরূপ অফিসিয়াল কিছু দেখাতে হয়। যেমন – বর্তমান পেশার প্রশংসাপত্র। শিক্ষার্থী হলে সেই প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড। 

বৈবাহিক অবস্থা পরিবর্তিত হলে নিকাহ-নামা বা বিয়ের সনদ দাখিল করতে হয়।

বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তিত হলে সেক্ষেত্রে আবার নতুন ঠিকানায় পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে হবে। পুলিশ ভেরিফিকেশন না করলে আবেদন বাতিল হবে এবং পরিশোধিত কোন টাকা ফেরত দেয়া হবে না।

অনলাইন আবেদনে ব্যবহৃত ইমেইল বা মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন

পাসপোর্ট রিনিউ এর অনলাইন আবেদনে ব্যবহৃত ইমেইল পরিবর্তন করার কোন পদ্ধতি বর্তমানে নেই। নতুন ইমেইল ব্যবহার করতে চাইলে পুরাতন একাউন্ট বাতিল করতে হবে।

নতুন ইমেইল দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে নতুন করে আবেদন করতে হবে। একাউন্ট এর পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে তা শুধুমাত্র ইমেইল এড্রেস দিয়ে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়।

মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করতে চাইলে তা করা সম্ভব হয়। একাউন্টে প্রবেশ করে “একাউন্ট ডেটা(Account data)” সিলেক্ট করতে হয়।

এরপর সেখানে এসএমএস নোটিফিকেশন ডিএক্টিভেট করে নতুন নাম্বার প্রবেশ করতে হয়। তখন সেখানে সব নতুন এসএমএস যাবে। একটি মোবাইল নাম্বার দিয়ে শুধু একটি একাউন্টের যাবতীয় কাজ করা যাবে।

ইমেইল এড্রেস না থাকলে অনলাইনে আবেদন করা যাবে কি

অনলাইন আবেদন এর ক্ষেত্রে ইমেইল অ্যাড্রেস অত্যাবশ্যকীয়। ইমেইল এড্রেস না থাকলে কোনোভাবেই অনলাইনে আবেদন করা যাবে না।
অনলাইনে আবেদন এর জন্য Google এর Gmail-এ গিয়ে খুব সহজেই ইমেইল খোলা যায়। 

অনলাইন আবেদন এর পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে

অনলাইন আবেদনের পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে ইমেইল দিয়ে একাউন্ট উদ্ধার করা যায়।
একাউন্ট লগইন করার স্থানে Forgot Password লিখা লিংকে ক্লিক করতে হয়। 

এরপর আবেদন করা একাউন্ট এর সাথে সংযুক্ত ইমেইল একাউন্টে লগইন করতে হবে।
নতুন পাসওয়ার্ড সহ একটি ইমেইল আসে। এ থেকে নতুন পাসওয়ার্ড পাওয়া যায়।

একাউন্ট কনফার্মেশন ইমেইল না পেলে করণীয়

একাউন্ট খোলার সময় ইমেইল এড্রেস প্রবেশ করার পরও যদি কনফার্মেশন ইমেইল না আসে, তবে ইমেইল এর বানান ভুল কিনা চেক করতে হয়।
বনান সম্পর্কে নিশ্চিত থাকলে ইমেইল একাউন্টে লগইন করে ইনবক্স এর “Spam” ফোল্ডার চেক করলে পাওয়া যায়। 

অনলাইন থেকে পিডিএফ প্রিন্ট করে আবেদন করলে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়া যাবে কি?

অনলাইন থেকে পিডিএফ প্রিন্ট করে আবেদন করা মানে অফলাইনে আবেদন করা। এক্ষেত্রে অ্যাপয়েন্টমেন্টও পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে অফলাইন আবেদন করেই করতে হয়। 

সার্টিফিকেট এবং জন্ম নিবন্ধন এর নামের বানানে ভুল থাকলে

জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী পাসপোর্ট বানান হয়। জন্ম নিবন্ধন এবং সার্টিফিকেট এর নামের বানান ভুল থাকলে পাসপোর্ট বানানোর আগে অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন কার্ড সংশোধন করে নিতে হবে।

নিয়মিত পাসপোর্ট আবেদন এর পর তা জরুরী আবেদনে পরিবর্তন 

পাসপোর্ট আবেদন চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হওয়ার আগে পর্যন্ত সম্ভব। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফি অনলাইনে বা ব্যাংক-এ গিয়ে পরিশোধ এবং স্লিপ সংরক্ষন করতে হবে।

পাসপোর্টের আবেদন করে ফেললে তা বাতিল করার উপায়

পাসপোর্ট আবেদন-এর সময় ফি পরিশোধ না করলে তিন সপ্তাহ পর এই আবেদন এর মেয়াদ স্বয়ংক্রিয় ভাবে শেষ হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই পরিচয় পত্র নাম্বার এবং জন্ম সনদ নাম্বার দ্বারা আবার আবেদন করা যাবে।

আর ফি পরিশোধ করে ফেললে আবেদনের প্রমানসহ কাছের পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।