ওযুঃ ওযু করার নিয়ম ও ওযু ভঙ্গের কারণ

ওযু করার নিয়ম ও ওযু ভঙ্গের কারণ

সলামের বিধান অনুসারে, দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গ ধৌত করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের একটি পন্থা হলো ওযু। নামাজের পূর্বে মুসলমানদের ওযু করে নেয়া বাধ্যতামূলক। পবিত্র কুরআনে আছে -“নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তওবাকারীকে ভালবাসেন এবং যাহারা পবিত্র থাকে তহাদিগকেও ভালবাসেন।”

ওযু কি/কাকে বলে?

ওযু / অজু আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো নির্দিষ্ট চারটি অঙ্গ ধৌত করার মাধ্যমে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা। ইসলামি পরিভাষায় শরীর পবিত্র করার নিয়তে পরিস্কার পানি দিয়ে শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট অঙ্গপ্রত্যঙ্গ(মুখমন্ডল, হাত ও পা ধৌত করা এবং মাথা মাসেহ্) ধৌত করাকেই ওযু বলে।

কুরআন শরীফ পড়তে ও স্পর্শ করতেও ওযু করতে হয়। পবিত্র কুরআন-এ আছে -“যাহারা পাক-পবিত্র তাহারা ব্যতীত অন্য কেহ তাহা স্পর্শ করো না।“ (সূরা ওয়াক্কিয়াহ্‌, আয়াত:৭৯)

দেহ ও পরিধেয় কাপড়ের পবিত্রতা

দেহ ও পরিধেয় কাপড়ের পবিত্রতা অর্জনকে আরবিতে তাহারাত্‌ বলা হয়। অযু বা গোসলের মাধ্যমে তাহারাত্‌ অর্জন করা হয়। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেন – “পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ধর্মের অর্ধেক।“ (সহীহ মুসলিম)

পবিত্র কুরআনে সুরা মায়েদাতে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন–

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ

উচ্চারণ- ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু ইজা কুমতুম ইলাস সালাতি ফাগসিলু ওঝুহাকুম ওয়া আইদিয়াকুম ইলাল মারাফিক্বি ওয়ামসাহু বিরুউসিকুম ওয়ারঝুলাকুম ইলাল কা’বাইন। (সূরা মায়িদা : আয়াত ৬)

অর্থঃ “হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখ-মন্ডল ও দুই হাত কনুই সহ ধৌত করবে, এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করবে, আর দুইপা গোড়ালীসহ ধৌত করবে।” [সূরা মায়িদাহঃ আয়াত-৬]

ওযুর ফরজসমূহ

ওযুর ফরজ চারটি। এ চারটি থেকে কোনো একটি বাদ গেলে আর ওযু হবে না। এ জন্য ওযু করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে। ধীরে ধীরে ধারাবাহিকতার সহিত ওযুর ফরজগুলো আদায় করতে হবে। ওযুর ফরয চারটিঃ-

১. মুখ মন্ডল ধৌত করা।

২. দুই হাত কনুই সহ ধৌত করা।

৩. মাথার এক-চতুর্থাংশ ভাগ মাসেহ করা এবং 

৪. টাখনুসহ দুই পা ধৌত করা।এছাড়াও আমরা যে মিসওয়াক করি, গড়গড়া করি, কব্জি পর্যন্ত হাত ধৌত করি, বা নাকে পানি দেই ইত্যাদি করা, এগুলো সুন্নত। 

তাই যথাযথভাবে ওযু করতে, সময়ের এবং পানির অভাব যদি না থাকে তবে অবশ্যই তিনবার করে এগুলোও পালন করতে হবে। 

ওযুর সুন্নত

অজুর সুন্নতগুলো হলো –

  • অজুর নিয়ত করা
  • ওযু শুরু করার আগে বিসমিল্লাহ পড়া
  • দু হাত কবজি পর্যন্ত তিনবার ধোয়া
  • মেসওয়াক বা দাঁতন দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা
  • গড়গড়া সহ তিনবার কুলি করা (রোজাদার হলে গড়গড়া না করা)
  • নাকে পানি দিয়ে বাম হাত দিয়ে নাক পরিষ্কার করা
  • সম্পূর্ণ মুখমন্ডল তিনবার ধৌত করা
  • দাড়ি খেলাল করা
  • দুই হাতের কনুইসহ তিনবার ধৌত করা
  • সমস্ত মাথা একবার মাসেহ্ করা
  • টাখনু সহ উভয় পা তিনবার ধৌত করা
  • পায়ের আঙ্গুল খেলাল করা
  • অজুর ফরজ আদায়কালে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।

ওযুর করার  সঠিক নিয়ম

১. “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম-আমি নামাযের উদ্দেশ্যে, পবিত্রতা লাভের ও আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ওযু করিতেছি” বলে প্রথমে দুই হাতের কবজি পর্যন্ত ধৌত করতে হবে। প্রথমে ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাত দিয়ে ডান হাতের কবজি পর্যন্ত এবং এরপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কবজি পর্যন্ত প্রত্যেক ক্ষেত্রে তিনবার করে ধৌত করতে হবে।

২. ডান হাতে পানি নিয়ে তা মুখে দিয়ে ভালোভাবে কুলি করতে হবে  তিনবার। যেন কোন প্রকার খাদ্যকণা মুখের ভিতর না থাকে। [রোজা থাকা অবস্থায়ও এটাই করতে হবে, তবে অনেক হুঁশিয়ার থাকতে হবে যেন পানি পেটে না যায়]

৩. ডান হাতে পানি নিয়ে নাকে পানি দিয়ে বাম হাতের কনিষ্ঠাংগুলি আর বৃদ্ধাংগুলি দ্বারা নাকের ভিতর পরিষ্কার করতে হবে। 

পানি এমনভাবে প্রবেশ করাতে হবে যেন নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছায়। নাকের ভিতর কিছু থাকলে নাক ঝাড়তে হবে। এভাবে তিনবার এবং প্রতিবারই পরিষ্কার পানি দিতে হবে নাকে।

৪. এবারে মুখমন্ডল অর্থাৎ কপালের উপরে যেখান থেকে স্বাভাবিকভাবে মাথার চুল গজায় সেখান থেকে নিচের থুতনির নীচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে আরেক কানের লতি পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্থান, পানি দিয়ে তিনবার ধৌত করতে হবে। দাঁড়ি থাকলে তা খিলাল করতে হবে। যেন দাঁড়ি পরিষ্কার হয় এবং সম্ভব হলে দাঁড়ির গোড়ায় পানি পৌঁছায় (পাতলা দাঁড়ির ক্ষেত্রে). গোঁফের খেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এভাবে তিনবার করতে হবে।

৫. এবারে বাম হাত দিয়ে পানি দ্বারা ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ভালভাবে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। তারপর একি ভাবে ডান হাত দিয়ে বাম হাতও পরিষ্কার করতে হবে। কারো হাতে আংটি থাকলে দেখতে হবে আংটির নিচেও যেন পানি প্রবেশ করে। নখেও যেন কোন ময়লা না থাকে।

৬. মাথা মাসেহ করাটা একটু খেয়াল করে করতে হবে। বৃদ্ধাংগুলি আর শাহাদাত আংগুলি আলাদা রেখে দুই হাত দিয়ে কপালে চুল শুরু হবার জায়গা থেকে পিছনে মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করতে হবে। তারপর একই ভাবে হাত উল্টিয়ে মাথার তিন-চতুর্থাংশ পিছন থেকে সামনে মাসেহ করতে হবে। এবারে শাহাদাত আংগুলি দ্বারা কানের ভিতরের অংশ আর বৃদ্ধাংগুলি দ্বারা কানের বাইরের অংশ পরিষ্কার করতে হবে। এরপর হাতের পিছনের অংশ দিয়ে ঘাড় মাসেহ করতে হবে।

৭. এরপর ডান হাত দিয়ে পানি ঢেলে বাম হাত দিয়ে ডান পা টাখনু বা গোঁড়ালি পর্যন্ত ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে এমনভাবে যেন আংগুলের ভিতরও কোন ময়লা না থাকে। প্রথমে ডান পায়ের কনিষ্ঠ আংগুল থেকে খিলাল করতে হবে, বাম পা এর ক্ষেত্রে বৃদ্ধাংগুলি থেকে শুরু করতে হবে। এভাবে তিনবার।

ওযু শেষ হবার পর নিচের দু’আ পড়তে হবে-

أَََشْهَدُ أَنْ لا إلَه إِلّا الله وَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ

”আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু-লা-শারীকা লাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আ’বদুহু-ওয়া রাসূলুহু।”

অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন মা’বুদ নাই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রাসূল।

ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি

কোন ব্যক্তি ওযু করার পর নির্দিষ্ট কিছু কাজ না করলে তার ওযু কার্যকর থাকে। কিন্তু ঐ কাজগুলো যখনই করা হয় তখনই ওযু অকার্যকর হয়ে যায় বা অযু ভেঙ্গে যায়। 

 ওযু ভঙ্গের কারণ ৭টিঃ

(১) পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া। যেমন – বায়ু, পেশাব-পায়খানা, পোকা ইত্যাদি। -হেদায়া-১/৭

কুরআনুল হাকিমে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন,

أَوْ جَاء أَحَدٌ مَّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ

অথবা, তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসলে (নামাজ পড়তে পবিত্রতা অর্জন করে নাও)। -সুরা মায়িদা-৬

হযরত আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, শরীর থেকে যা কিছু বের হয়, তার কারণে ওযু ভেঙে যায়…।` -সুনানে কুবরা লিল বাইহাকি, হাদিস নং-৫৬৮

(২) রক্ত, পূঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া। -হেদায়া-১/১০

হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু -এর যখন নাক দিয়ে রক্ত ঝড়তো, তখন তিনি ফিরে গিয়ে অজু করে নিতেন। -মুয়াত্তা মালিক-১১০

(৩) মুখ ভরে বমি করা।

(৪) থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া।

হাসান বসরি (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি তার থুথুতে রক্ত দেখে তাহলে থুথুতে রক্ত প্রবল না হলে তার ওপর অজু করা আবশ্যক হয় না। -মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস নং-১৩৩০

(৫) চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে।

হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সিজদা অবস্থায় ঘুমালে অজু ভঙ্গ হয় না, তবে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ভেঙ্গে যাবে, কেননা চিৎ বা কাৎ হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়। [ফলে বাতকর্ম হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে]। -মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-২৩১৫, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-২০২

(৬) পাগল, মাতাল বা অচেতন হলে।

হযরত হাম্মাদ (রহ.) বলেন, যখন পাগল ব্যক্তি সুস্থ হয়, তখন নামাজের জন্য তার অজু করতে হবে। -মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং-৪৯৩

(৭) নামাজে উচ্চস্বরে হাসি দিলে।

হযরত ইমরান বিন হুসাইন রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি নামাজে উচ্চস্বরে হাসে, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে। হযরত হাসান বিন কুতাইবা (রহ.) বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি উচ্চস্বরে হাসি দেয়, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে। -সুনানে দারা কুতনি, হাদিস নং-৬১২

উলঙ্গ হয়ে গোসল করার সময় ওযু করলে সেই ওযু দিয়ে নামাজ কি হবে?

গোসলখানায় যদি কোনো পর্দাহীনতা হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা জায়েয আছে। (মাহমুদিয়া ৪/৩৮৭)। তেমনি পর্দার ক্রটি না হলে খোলাস্থানেও উলঙ্গ হয়ে গোসল করা জায়েয আছে এবং গোসলের অযুতে নামাযও জায়েয।

যে পানি দিয়ে অযু করা যাবে

১.বৃষ্টির পানি 

২.কূয়ার পানি যা ডাকা থাকে 

৩. ঝর্ণার, সাগর, নদীর পানি 

৪. বরফ গলা পানি 

৫. বড় পুকুর বা টেঙ্কের পানি

যে পানি দিয়ে অযু হবে না

১.অপরিচ্ছন্ন বা অপবিত্র পানি 

২. ফল বা গাছ নিসৃতঃ পানি 

৩. কোন কিছু মিশানোর কারণে যে পানির বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ এবং গারত্ব পরিবর্তিত হয়েছে। 

৪. অল্প পরিমাণ পানি: যাতে অপবিত্র জিনিস মিশে গেছে (যেমনঃ মূত্র, রক্ত, মল বা মদ)। 

৫. অযু বা গোসলের জন্য ব্যবহৃত পানি। 

৬. অপবিত্র (হারাম) প্রাণী, যেমনঃ শূকর, কুকুর ও অন্যান্য হিংস্র প্রানীর পানকৃত পানির অবশিষ্ট।

কুরআন ও হাদীসের আলোকে ওযুর ফজিলত

কুরআন ও হাদীসের আলোকে ওযুর  কিছু ফজিলত আলোকপাত করা হলো ঃ

১)ওযু কারিকে আল্লাহ তা’আলার ভালবাসেন

 অযু /ওযু অর্থ হলো পবিত্রতা, আর পবিত্রতা অর্জনকারীকে আল্লাহ তাআলা ভালবাসেন। তিনি বলেন –

ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟﺘَّﻮَّﺍﺑِﻴﻦَ ﻭَﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻤُﺘَﻄَﻬِّﺮِﻳﻦَ

“নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তওবাকারীদের এবং পবিত্রতা অর্জন কারীদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা বাকারাঃ ২২২)

২) পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ রাসুল (সঃ)  বলেছেন


ﺍﻟﻄُّﻬُﻮﺭُ ﺷَﻄْﺮُ ﺍﻹِﻳﻤَﺎﻥِ          “পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ।” (মুসলিম)

৩) ওযু কারীর জন্য  জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে

 যেমন  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি সুন্দর ভাবে অযু করবে অত:পর অযুর শেষে নিম্ন বর্ণিত দু’আ পাঠ করবে তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে, সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।”দু’আটির বাংলা উচ্চারণ-

 “আশহাদুআল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া

রাসূলুহু। আল্লাহুম্মাজআলনী মিনাত্ তাওয়্যাবীনা ওয়াজআলনী মিনাল মুতাত্বহহিরীন।” (তিরমিযী)

৪) ওযু কারীর জন্য জান্নাতের সুসংবাদ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

“যে কোন ব্যক্তি সুন্দর ভাবে অযু করে, একনিষ্ঠতার সাথে দুরাকাআত নামায আদায় করে তার জন্যে জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়।” (মুসলিম)

৫) অযু এক নামায হতে অন্য নামাযের মধ্যে সংঘঠিত গুনাহের কাফফারাহ স্বরূপ

রাসুল (সঃ) এরশাদ করেনঃ

ﻣَﻦْ ﺃَﺗَﻢَّ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀَ ﻛَﻤَﺎ ﺃَﻣَﺮَﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻓَﺎﻟﺼَّﻠﻮَﺍﺕُ

ﺍﻟْﻤَﻜْﺘُﻮﺑَﺎﺕُ ﻛَﻔَّﺎﺭَﺍﺕٌ ﻟِﻤَﺎ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻦَّ

“যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী পরিপূর্ণ ভাবে অযু সম্পাদন করে, (তার জন্য) ফরয নামাযগুলোর মধ্যবর্তী সময়ে সংঘঠিত গুনাহের কাফ্ফারা হয়ে যায়।” (মুসলিম)

৬) ওযুর মাধ্যমে  গুনাহ দূর হয়

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল (সঃ) বলেছেন: “যখন একজন মুসলিম বা মু’মিন ব্যক্তি অযু করে, সে যখন তার চেহারা ধৌত করে পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার চেহারার গুনাহ সমূহ দূর হয়ে যায় যা তার দৃষ্টি দ্বারা হয়েছে। এমনিভাবে সে যখন তার দুহাত ধৌত করে তার হাতের গুনাহ সমূহ যা হাত দিয়ে ধরার মাধ্যমে করেছে তা পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে দূর হয়ে যায়। আবার যখন দু’পা ধৌত কওে পায়ের গুনাহ সমূহ যা পা দিয়ে চলার মাধ্যমে হয়েছে তা পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে দূর হয়ে যায়। শেষ পর্যন- সে গুনাহ হতে সম্পূর্ণ পবিত্র হয়ে যায়। (মুসলিম)

৭) অযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলো কিয়ামতের দিন আলোকিত হবে

আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত তিনি বলেন, সাহাবাগণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার উম্মত যারা আপনার পরে আসবে তাদেরকে আপনি কিভাকে পরিচয় পাবেন? তিনি বললেন”“আমার উম্মতগণ কিয়ামতের দিন অযুর স্থানগুলো আলোকীত অবস্থায় উপস্তিত হবে।” (মুসলিম)

৮) ঘূমানোর পূর্বে অযু করার দুআ কবুল হওয়ার কারণ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোন মুসলিম ব্যক্তি যখন অযু করে নিদ্রায় যায়, রাত্রিতে জেগে দুনিয়া এবং আখেরাতের কোন কল্যাণের দুআ করলে দুআ কবুল করা হয়।” (নাসাঈ)

পরিশেষে

নামাজ তথা ইবাদত-বন্দেগিতে ওজুর গুরুত্ব অত্যধিক। যখনই ইবাদত-বন্দেগি করার ইচ্ছা পোষণ করবে তখন ওযুর চারটি কাজ গুরুত্ব সহকারে ধারাবাহিকভাবে আদায় করে এবাদাত শুরু করতে হবে।

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তুমি সালাতে দাড়ানোর ইচ্ছে করবে, তখন প্রথমে তুমি যথানিয়মে অযু করবে। তারপর কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যে অংশ তোমার পক্ষে সহজ হবে, তা তিলাওয়াত করবে। তারপর তুমি রুকূ’ করবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর মাথা তুলে ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর সাজদাহ করবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর আবার মাথা তুলে বসবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর ঠিক এভাবেই তোমার সালাতের যাবতীয় কাজ সমাধা করবে। (শব্দ বিন্যাস বুখারীর এবং ইবনু মাজাহতে মুসলিমের সানাদে রয়েছে যার অর্থও হচ্ছে ধীর-স্থির হয়ে দাড়াবে।’ আর আহমদে রয়েছে, তুমি তোমার পিঠকে এমনভাবে সোজা করবে যেন সকল হাড় যার যার স্থানে পৌছে যায়।)”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *