১০টি প্রাকৃতিক উপায়ে চোখের নিচের কালো দাগ দূর করুন

১০টি প্রাকৃতিক উপায়ে চোখের নিচের কালো দাগ দূর করুন

চোখ সৃষ্টিকর্তার দেয়া মহা মূল্যবান নিয়ামত। দুনিয়ার যাবতীয় সৌন্দর্য এর কিছুই উপভোগ করা সম্ভব হত না, যদি চোখ না থাকত। আর চোখ নিজেই সৌন্দর্যের ধারক। কত কবিদের শত কবিতা লেখার প্রধান উপমা, আবার এই চোখই শত প্রেমিকের কাছে তার প্রেয়সীর সরলতার প্রতিমা। তাই চোখের যত্ন নেয়াটা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নতুন করে বলার কিছুই নেই।

চোখের নিচের কালো দাগ পড়ার কারণ

চোখের নিচের কালো দাগ চোখের সৌন্দর্যের বড় অন্তরায়। চোখের নিচে কালো দাগ মানুষের ব্যাক্তিত্ব কে খুব বেশি ভালো ভাবে উপস্থাপন করে না। চোখের নিচে কালো দাগ হওয়ার মূল কারন মূলত সংকুচিত রক্তনালীর হাইপারপিগমেন্টেশন। এছাড়া নানা কারনে চোখের নিচে কালো দাগ পড়তে পারে। যেমনঃ

১) চোখের নিচে কালো দাগ পড়ার অন্যতম প্রধান কারন হল, পরিমিত পরিমান না ঘুমানো, বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকা।

২) কারো কারো এলার্জির কারনে চোখের নিচে কালো দাগ দেখা যায়।

৩) এছাড়া খড় জ্বর এর কারনে চোখের নিচে কালো দাগ পড়তে পারে।

৪) কারো কারো জিনগত কারনে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে।

৫) বয়স বাড়ার সাথে চোখের নিচে কালো দাগ পড়তে পারে।

৬) অতিরিক্ত এলকোহল পান করার কারনেও চোখের নিচে কালো দাগ পড়তে পারে।

চোখে নিচে কালো দাগ দূর করার উপায়

আজ ১০টি প্রাকৃতিক উপায়ে কিভাবে চোখের নিচে কালো দাগ দূর করবেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

১) প্রচুর পরিমানে পানি পান করা

পানি শুন্যতা ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আর পানির অভাবে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে। তাই নিয়মিত পানি পান করলে, চোখের নিচের কালো দাগ দূর হয়ে যায়।

নিয়মিত কমপক্ষে ৪ লিটার পানি পান করতে হবে। বিশেষত সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পানি পান করতে হবে। আর সারাদিন সুবিধামত পানি পান করবেন, তবে খেয়াল রাখতে হবে, সন্ধ্যার পর আর খুব বেশি পানি পান করা যাবে না।

এটিই চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার সব থেকে সহজ ও কার্যকর প্রাকৃতিক উপায়।

এই ভিডিও তে দেখতে পারেন, ত্বকের জন্য পানি পান করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ।

২) ঠান্ডা পানি অথবা ঠান্ডা দুধ দিয়ে জলপট্টি দেওয়া

চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার সবচেয়ে সহজ উপায় এর মধ্যে একটি হল, একটি নরম কাপড়ে ঠান্ডা পানি কিংবা দুধ নিয়ে, সে কাপড় জলপট্টির মত চোখের উপরে নিচে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট থাকতে হবে। এসময় ধীরে ধীরে চোখের নিচের জায়গাটি মোছা যেতে পারে।

তবে সাবধানে, চোখ অনেক স্পর্শ কাতর জায়গা, তাই পট্টি দেয়ার কাপড় টা অবশ্যই নরম হতে হবে।

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে কিংবা রাতে ঘুমানোর সময় চোখে ঠান্ডা দুধ কিংবা পানির পট্টি দেয়া বেশি কার্যকর। দুধ দিলে একটু বেশি উপকার পাওয়া গেলেও হাতের কাছে পানি থাকলে পানি দিয়েই কাজটি করা যাবে।

নরমালি পানি নরমাল ফ্রিজে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা রাখলেই এনাফ। এছাড়া ডিপ ফ্রিজে ১ ঘন্টা রাখলেই চলবে। এই প্রক্রিয়ায় চোখের নিচের দাগ দূর করতে হলে খরচ নেই বললেই চলে। এক কেজি দুধ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, যা দিয়ে অনায়েসে ১ সপ্তাহ চলে যাবে। বাসার পুরনো নরম কাপড় ধুয়ে পরিষ্কার করলেই হবে।

কিভাবে ঠান্ডা পানির পট্টি দিয়ে প্রাকৃতিক ভাবে চোখের নিচের কালো দাগ দূর করবেন, তা জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন ।

৩) কমলা লেবুর রস অথবা খোসা লাগানো

কমলা লেবু এর রসে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘’এ’’ এবং ‘’সি’’ রয়েছে। এছাড়া কমলা লেবুর খোসাতেও ভিটামিন ‘’এ’’ এবং ভিটামিন ‘’সি’’ আছে। এই ভিটামিনদ্বয় চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করতে পারে।

একটি কটন বার কিংবা নরম কাপড়ে একটু খানি কমলা লেবুর রস চিপে নিন। তারপর সে কাপড় বা কটন বার নিয়ে চোখের উপরে ও নিচে যেখানে কালো দাগ আছে, সেই জায়গাগুলো ধীরে ধীরে মুছতে থাকুন। এভাবে নিয়মিত মুছলে কালো দাগ অনেকটাই কমে যাবে। 

আবার কমলা লেবুর খোসা গুড়া করে তা পানির সাথে মিশিয়ে, একই নিয়মে চোখের নিচে লাগাতে পারেন।

আশা করা যায় অল্প কিছুদিনেই এর সুফল দেখতে পাবেন। কমলা লেবু যেকোন বাজারে কিংবা ফলের দোকানে কিনতে পাওয়া যায়, ১৬০ থেকে ২০০ টাকা প্রতি কেজি।

তাই সহজেই চোখের নিচের কালো জায়গায় কমলা লেবুর রস লাগিয়ে চোখের নিচের কালো দাগ দূর করা যেতে পারে।

কিভাবে কমলা লেবু আপনার চোখের নিচে লাগাবেন তা দেখে নিন নিচের ভিডিওতে।

আরও পড়ুনঃ ২০ টি উপায়ে চুল পড়া বন্ধ করুন চোখের নিমিষেই

৪) নারিকেলের তেল চোখের নিচে লাগানো

সরাসরি নারিকেল থেকে তেল বের করে নিয়ে, তা চোখের নিচে যেখানে কালো দাগ পড়েছে সেখানে লাগানো যায়। তবে বাজার থেকে কেনা নারিকেল তেল দিলেও হবে।

এক্ষেত্রে দুইটি সুবিধা পাওয়া যায়, চোখের নিচের কালো দাগ দূর হয় সাথে রোদের থেকে ত্বককে রক্ষাও করে।

চোখের আশেপাশে মালিশ করতে হবে। ঘন্টাখানেক এভাবে রেখে, মুখ ধুয়ে ফেললেই হবে। বাজারে প্রতি পিস নারিকেল ৫০ থেকে ৮০ টাকায় পাওয়া যায় যা থেকে অবশ্য সামান্যই তেল বের করা যাবে। আর নারিকেল তেল ২০০ মিলি বোতলের দাম ১৪০-১৪৫ টাকা। যা দিয়ে সহজেই ২৫-৩০ দিন চোখের নিচে মালিশ করা যাবে।

৫) চোখের আশেপাশে আলতো ম্যাসেজ করাঃ

চোখের আশেপাশে আলতো করে ম্যাসেজ করলে ঐ স্থানের রক্ত চলাচল প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে। আর ওখানে রক্ত জমাট বাধতে দেয় না। রক্ত জমাট বাধলে তা কালচে বর্ণ ধারন করত, ফলে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ত।

আর হালকা করে ম্যাসেজের ফলে তা আর হয় না। এই ম্যাসেজ আপনি নিজে নিজে বাসায় করতে পারেন। আবার চাইলে কোন পার্লার বা স্পা তে গিয়েও করে নিতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে বেশ কিছু অর্থ খরচ করতে হবে।

পার্লার বা স্পা গুলোতে ম্যাসেজের জন্য কোয়ালিটি, লোকেশন অনুযায়ী সাধারনত গড়ে ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা নিতে পারে।

তাই এ কাজটি বাসায় করাই শ্রেয়। তবে সাবধানে যেন চোখে ব্যথা না লাগে।

নিচের ভিডিওটিতে দেখুন কিভাবে চোখের উপরে নিচে ম্যাসেজ করতে হয়।

৬) প্রচুর পরিমাণে ডার্ক চকলেট খাওয়া

চকলেট খেতে কার না ভালো লাগে? চকলেট আমাদের বেশির ভাগ মানুষেরই অনেক প্রিয়। আর সেই প্রিয় খাবারই যদি হয় চোখের নিচের কালো দাগ মুছে ফেলার অন্যতম সহায়ক তাহলে তো সোনায় সোহাগা।

আসলেই তাই, ডার্ক চকলেট খেলে চোখের নিচের কালো দাগ দূর হয়ে যায়, কারন এই চকলেট ত্বককে ক্ষতিকর আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে, আর বয়সের ছাপ পড়ার প্রক্রিয়াকে বাধা প্রদান করে।

এজন্য প্রচুর পরিমাণ ডার্ক চকলেট খেতে হবে, চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে। তবে চকলেটের দাম, বেশি হওয়াই এই প্রক্রিয়াটি অনেকটাই ব্যয়বহুল। মার্কেটে ১০০গ্রাম পিওর ডার্ক চকলেটের দাম প্রায় ৩০০ টাকার কাছাকাছি। 

৭) রাতে পরিমিত পরিমান ঘুমানো

যেহেতু ঘুমের অভাব চোখের নিচে কালো দাগ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারন তাই রাতে ঠিকমত ঘুমালে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।

রাতে অন্তত ৬-৭ ঘন্টা ঘুম আমদের জন্য আবশ্যক। তাই নিয়মিত এই সময়টুকু ঘুমানো জরুরী।

আর চোখের নিচে কালো দাগ থাকলেও ঘুমানোর ফলে জায়গাটি থেকে দাগ প্রশমিত হয়ে যাবে। ত্বক নিজের মত করে অটোমেটিকালি চোখের নিচের জায়গাটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।

৮) এভোক্যাডো স্লাইস করে কেটে চোখের নিচে লাগানো

এভোক্যাডো ফলটি আমাদের দেশে এখনও সেভাবে প্রচার লাভ করে নি। তবে ঢাকায় বেশ কিছু জায়গায় এই উপকারী ফলটি পাওয়া যায়।

চোখের নিচের দাগ দূর করতে এটি বেশ কার্যকর। এটি স্লাইস করে কেটে, টুকরাটি ১৫ থেকে ২০ মিনিট চোখের উপর দিয়ে রাখতে হবে। এভাবে কিছুদিন দিতে হবে। তাহলে চোখের নিচের কালো দাগ কিছুদিনের মধ্যেই দূর হয়ে যাবে আশা করা যায়। 

তবে এটি বেশ ব্যায়বহুল। ঢাকার কিছু কিছু জায়গাতেই কেবল এটি পাওয়া যায়, এবং এর প্রতি কেজির দাম ১০০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা।

কিভাবে এভোক্যাডো চোখের নিচে লাগাবেন তা দেখে নিতে পারেন এই ভিডিও থেকে।

৯) জুই ফুলের পেস্ট চোখের যেখানে কালো দাগ সেখানে লাগানো

জুই ফুল আমাদের দেশে প্রায় সকল এলাকাতেই কম বেশি পাওয়া যায়। এটির গন্ধ অনেক বেশি সুন্দর। তবের সৌরভ ছড়ানোর পাশাপাশি এটি আপনার চোখের নিচের কালো দাগও দূর করতে সক্ষম।

প্রথমেই কয়েকটি জুই ফুল নিয়ে সেগুলো একসাথে পিশতে হবে। কিছুক্ষন পেশার পর সুন্দর পেস্ট তৈরি হবে। সেই পেস্টটি ১৫ থেকে ২০ মিনিট কালি পড়া স্থানে লাগিয়ে রাখতে হবে। এরপর তা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। 

তাহলেই চোখের নিচের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে ২ সপ্তাহের মধ্যেই।

জুই ফুল প্রতি পিস ৪-৫ টাকায় বিক্রি হয়। তবে জুই ফুলের চাড়া এর দাম ৪০-৬০ টাকা। তাই গাছ লাগিয়ে এর সৌন্দর্য, সৌরভ উপভগ করার পাশাপাশি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে চোখের নিচের কালো দাগ দূর করা যেতে পারে।

১০) ভূট্টার গুড়া পানিতে মিশিয়ে চোখের নিচে লাগানো

ভূট্টার গুড়া, চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার জন্য যাদুর মত কাজ করে।

ভূট্টা গুড়া করে নিয়ে বা ভূট্টার আটা নিয়ে প্রথমে তা পানিতে মেশাতে হবে। পানিতে মেশানোর পর পেস্টের মত তৈরি হবে। সেই পেস্ট চোখের নিচে লাগিয়ে রাখতে হবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এরকম ১০ থেকে ১২ দিন রাখলেই চোখের নিচের কালো দাগ নিমিষেই মিশে যাবে।

ভূট্টার আটা বাজারে কর্ণ ফ্লাওয়ার নামেই বেশি পরিচিত। ২০০ গ্রাম কর্ন ফ্লাওয়ারের মূল্য ৫০ থেকে ৬০ টাকা, যা ১০-১২ দিন অনায়েসে চোখের নিচে লাগানো যাবে।

আবার চাইলে বাজার থেকে ভূট্টা কিনে গুড়া করেও কর্ণ ফ্লাওয়ার বানানো যাবে, সেক্ষেত্রে প্রতি পিস ভূট্টার দাম পড়বে ৪-৫ টাকা। আর এরকম ৫-৬টি ভূট্টা হলেই হবে।

তো আজ এ পর্যন্তই। আশা করি উপরের উপায়গুলো অনুসরন করলে আপনার চোখের নিচের কালো দাগ প্রাকৃতিক উপায়ে খুব সহজেই দূর করতে পারবেন। নিচে চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার উপায় এর সাথে সম্পর্কিত কিছু অথেন্টিক আর্টিকেল এর লিংক দিচ্ছি, চাইলে দেখে নিতে পারেন।

https://www.medicalnewstoday.com/articles/325989

https://www.doctortv.net/health-tips/374483/

https://www.femina.in/beauty/skin/all-about-dark-circles-and-how-to-treat-them-57696.html