সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত বাংলা উচ্চারণ সহ অর্থ ও ফযিলত (surah baqarah last 2 ayat bangla)

ইসলাম হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার একমাত্র মনোনীত ধর্ম। আর কোরআন হচ্ছে এমন একটি গ্রন্থ যেখানে সবকিছুর সমাধান রয়েছে। আল্লাহ বলেন, এটা সেই কিতাব, এতে কোনো সন্দেহ নেই। [ সুরা : বাকারা, আয়াত : ২ ]।

পার্থিব জীবন এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে সুখ-শান্তি  দ্বারা পরিপূর্ণ করতে হলে আমাদেরকে কোরআন শরীফ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হবে। তবেই আমরা সফলকাম হতে পারব। দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণে আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজীদে বেশকিছু ফযিলতপূর্ণ আয়াত নাযিল করেছেন তন্মধ্যে একটি হচ্ছে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত।

এই আর্টিকেলে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত ,অর্থসহ উচ্চারণ অডিও এবং ফযিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত (surah baqarah last 2 ayat)

সুরা বাকারা হচ্ছে পবিত্র কোরআনের দ্বিতীয় নম্বর সুরা। এই সুরাটি মাদিনায় অবতীর্ণ হয়। এই সুরাতে ২৮৬ টি আয়াত রয়েছে এবং রুকু সংখ্যা হচ্ছে ৪০ টি। সুরা বাকারাতে অনেক ফযিলতপূর্ণ আয়াত রয়েছে। সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত ‘আয়াতুল কুরসি’ নামে পরিচিত। সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত এর ও ফযিলত অনেক। সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফযিলত সম্পর্কে যদি কেউ জানতো তবে কখনও এই আয়াতগুলো পড়া থেকে বিরত থাকতো না। 

সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এইখানে ক্লিক করুন। 

সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ (surah baqarah last 2 ayat bangla) 

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ

উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আরবি

অর্থঃ শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

আয়াত ২৮৫ঃ

آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللّهِ وَمَلآئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لاَ نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِ وَقَالُواْ سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ

উচ্চারণঃ আ-মানাররাছূলু বিমা-উনঝিলা ইলাইহি মির রাব্বিহী ওয়াল মু’মিনূনা কুল্লুন আ-মানা বিল্লাহি ওয়া মালা-ইকাতিহী ওয়া কুতুবিহী ওয়া রুছুলিহী লা-নুফাররিকুবাইনা আ‘হাদিম মির রুছুলিহী ওয়া কা-লূ ছামি‘না ওয়াআতা‘না গুফরা-নাকা রাব্বানা-ওয়া ইলাইকাল মাসীর।

অর্থঃ রসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমুহের প্রতি এবং তাঁর পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা বলে আমরা তাঁর পয়গম্বরদের মধ্যে কোন তারতম্য করিনা। তারা বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের পালনকর্তা। তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।

আয়াত ২৮৬ঃ

لاَ يُكَلِّفُ اللّهُ نَفْسًا إِلاَّ وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لاَ تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَلاَ تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَآ أَنتَ 

مَوْلاَنَا فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ

উচ্চারণঃ লা-ইউকালিলফুল্লা-হু নাফছান ইল্লা-উছ‘আহা-লাহা-মা কাছাবাত ওয়া ‘আলাইহা-মাকতাছাবাত রাব্বানা-লা-তুআ-খিযনা- ইন নাছীনা-আও আখতা’না-রাব্বানা ওয়ালা-তাহমিল‘আলাইনা-ইসরান,কামা-হামালতাহূআলাল্লাযীনামিন কাবলিনা-রাব্বানা-ওয়ালাতুহাম্মিলনা-মা-লা-তা-কাতালানা-বিহী।ওয়া‘ফু‘আন্না-ওয়াগফিরলানা-ওয়ারহামনা-আনতা মাওলা-না-ফানসুরনা-‘আলাল কাওমিল কা-ফিরীন।

অর্থঃ আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছ, হে আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে কর।

সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত ইংরেজি অনুবাদ (last 2 ayat of surah baqarah)

The Messenger ˹firmly˺ believes in what has been revealed to him from his Lord, and so do the believers. They ˹all˺ believe in Allah, His angels, His Books, and His messengers. ˹They proclaim,˺ “We make no distinction between any of His messengers.” And they say, “We hear and obey. ˹We seek˺ Your forgiveness, our Lord! And to You ˹alone˺ is the final return.”

Allah does not require of any soul more than what it can afford. All good will be for its own benefit, and all evil will be to its own loss. ˹The believers pray,˺ “Our Lord! Do not punish us if we forget or make a mistake. Our Lord! Do not place a burden on us like the one you placed on those before us. Our Lord! Do not burden us with what we cannot bear. Pardon us, forgive us, and have mercy on us. You are our ˹only˺ Guardian. So grant us victory over the disbelieving people.”

সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত ছবি (surah al baqarah)

সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত অডিও

কখন সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত নাযিল হয়েছে?

সহিহ্ মুসলিম শরিফ এ দুটি আয়াতের ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, ‘এ দুটি আয়াত রাসুল (সা.)-কে মিরাজের রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সঙ্গে আসমানে দান করা হয়েছে।’

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তিনটি জিনিস দান করা হয়: ১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, ২. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত, ৩. উম্মতদের মধ্যে যারা শিরক করে না, তাদের কবিরা গুনাহ মাফ হওয়ার সুসংবাদ।’ (মুসলিম, তাফসিরে মাজহারি)

আরও পড়ুনঃ সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, আরবি অডিও

সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফযিলত (surah baqarah last 2 ayat) 

হযরত আয়ফা ইবনু আবদিল কালাঈ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি আরজ করলো, হে আল্লাহর রাসুল! কোরআনের কোন সুরা বেশি মর্যাদাপূর্ণ? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ।

সে আবার জিজ্ঞাসা করলো, কোরআনের কোন আয়াত বেশি মর্যাদার? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আয়াতুল কুরসি– ’আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম’।

সে পুনরায় বলল, হে আল্লাহর নবি! কোরআনের কোন আয়াত এমন, যার বরকত আপনার ও আপনার উম্মাতের কাছে পৌঁছতে আপনি ভালবাসেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সুরা আল বাকারাহর শেষাংশ। কেননা আল্লাহ তাআলা তাঁর ’আরশের নীচের ভাণ্ডার থেকে তা এ উম্মাতকে দান করেছেন। দুনিয়া ও আখিরাতের এমন কোন কল্যাণ নেই যা এতে নেই। (মিশকাত ২১৬৯, দারেমি)।

জুবাইর ইবনে নুফাইর (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— 

সুরা আল-বাকারাকে আল্লাহ তাআলা এমন দুটি আয়াত দিয়ে শেষ করেছেন, যা আমাকে আল্লাহর আরশের নিচের ভাণ্ডার হতে দান করা হয়েছে। তাই তোমরা এ আয়াতগুলো শিখবে। তোমাদের স্ত্রীদেরকেও শেখাবে। কারণ, এ আয়াতগুলো হচ্ছে রহমত, (আল্লাহর) নৈকট্যলাভের উপায়। (দীন দুনিয়ার সকল) কল্যাণলাভের দোয়া। (মেশকাত: ২১৭৩)

আলী (রা.) বলেছেন, ‘এটা আমার জানা নেই—উপযুক্ত বয়সের এবং জ্ঞান-বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন কোনো মুসলমানদের মধ্যে এমন কেউ রয়েছে কিনা, যে রাতে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি ও সুরা বাকারার শেষ দুটো আয়াত তিলাওয়াত করে না।’ (তাফসির ইবনু কাসির, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা-৭৩৫)

নবী করিম (সা) এরশাদ বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত তিলাওয়াত করবে তবে এই দুই আয়াত তার জন্য যথেষ্ট হবে। যথেষ্ট বলতে এইখানে বোঝানো হয়েছে যে, যে ব্যক্তি এই আয়াতগুলো পড়বে সে ব্যক্তি সারারাত জেগে ইবাদাতের সমান সওয়াব পাবে। 

জুবাইর ইবনু নুফাইর (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুরা আল-বাকারাকে আল্লাহ এমন দুটি আয়াত দিয়ে শেষ করেছেন, যা আমাকে আল্লাহর আরশের নিচের ভান্ডার থেকে দান করা হয়েছে। তাই তোমরা এ আয়াতগুলো শিখবে, স্ত্রীদেরও শেখাবে। কারণ এ আয়াতগুলো হচ্ছে রহমত, (আল্লাহর) নৈকট্য লাভের উপায় ও (দীন দুনিয়ার সকল) কল্যাণ লাভের দোয়া।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ: ২১৭৩)

সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত বাংলা অর্থ সহ উচ্চারণ, অডিও ও ফজিলত নিয়ে আজ এই পর্যন্তই। ধন্যবাদ।

FAQ

সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত ও আমল কী?

হজরত আবু মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত রাতে পাঠ করবে, তার জন্য এ দুটি আয়াত যথেষ্ট হবে; অর্থাৎ সারারাত সে জিন  মানুষের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে এবং প্রতিটি অপ্রিয় বিষয় থেকে তাকে হেফাজত করা হবে। সহীহ বুখারি  সহীহ মুসলিম।

সুরা বাকারার শেষ তিন আয়াত কখন নাযিল হয়?

লাইলাতুল ইসরা বা মেরাজের রাতে

সুরা বাকারার ফজিলত কি?

এই সুরা পাঠে বিশেষ বরকত লাভ হয়। যা মানুষের দুনিয়া ও পরকালের জীবনে কল্যাণ বয়ে আনে। এই সুরা পাঠ থেকে বিরত থাকলে কিয়ামতের দিন যখন এই সুরার বরকত ও বিনিময় দেখবে তখন মানুষ আফসোস করবে, কেন এই সুরা পড়েনি।