আল কোরআন মুসলিম জাতির জন্য একটি আদর্শ। কোরআন মাজিদ যে পরে এবং কোরআন মাজিদের তিলাওয়াত যে শোনে তারা সমান সওয়াব লাভ করে। হাদিসে এসেছে তিনটি জিনিসের দিকে তাকালেই ফেরেশতারা সওয়াব লিখেন।
প্রথমত,কোরআনের দিকে তাকালেই সওয়াব,রহমতের নজরে মা-বাবার দিকে তাকালেই সওয়াব,ক্বাবা ঘরের দিকে তাকালেই সওয়াব।সূরা আর রাহমান হচ্ছে কোরআনের আলো।কোরাআনের প্রসিদ্ধ, সুন্দরতম এবং ফজিলতপূর্ণ যে সকল সুরা রয়েছে তন্মধ্যে একটি হচ্ছে সূরা আর রাহমান(surah ar rahman)। আজকে আমরা সুরা আর রাহমান বাংলা উচ্চারণ সহ অর্থ, অডিও, ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
এই আর্টিকেল পড়ে যা যা জানতে পারবেন
⇒ সুরা আর রাহমান ⇒ শানে নুযূল ⇒ বাংলা অর্থসহ উচ্চারণ ⇒ ফযিলত ⇒ বিভিন্ন ক্বারীদের কণ্ঠে ⇒ আলোচনা ও বিষয়বস্তু
সূরা আর রাহমান (surah ar rahman)
সূরা আর রাহমান পবিত্র কোরাআনের ৫৫ তম সূরা। এই সূরার আয়াত সংখ্যা ৭৮ এবং রুকু সংখ্যা ৩।সূরা আর রাহমান মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এই সূরায় জ্বীন ও মানব জাতিকে উদ্দেশ্য করে বারবার প্রশ্ন করা হয়েছে, “অতএব, তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?” এ আয়াতটি ৩১ বার রয়েছে।
সূরার নাম | সূরা আর রাহমান |
মাক্কী/মাদানী | মাক্কী সূরা |
সূরা নম্বর | ৫৫ |
আয়াত সংখ্যা | ৭৮ |
রুকু সংখ্যা | ০৩ |
অবস্থান | ২৭ পারা |
সূরা আর রাহমানের শানে নুযূল (sura ar rahman)
সূরা আর-রাহমান কখন নাযিল হয়?
সুরা আর-রাহমান পবিত্র মক্কা নগরীতে নাযিল হয়েছিল। কিন্তু আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, ইক্বরিমাহ এবং ক্বাতাদাহ উনাদের অভিমত পাওয়া যায় যে এই সূরা মাদিনায় নাযিল হয়েছে। আবার তাদেরই সূত্রে কথিত আছে যে এ সূরা মক্কায় অবতীর্ণ।
ইমাম আবু আবদুল্লাহ আল কুরতুবি তার নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন হাদিসে সূরা আর-রাহমানকে মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে বলে সিধান্ত দিয়েছেন।আল্লাহর নির্দেশে নবী করিম (সা.) মক্কার লোকদের বলতে লাগলেন তোমরা রাহমান কে মানো। রাহমানের ইবাদাত করো। তখন মক্কার কাফিররা নবী করিম (সা.) এর এই কথাগুলো শুনে বলতে লাগলো এতদিন তুমি তোমার আল্লাহকে মানতে বলেছিলে কিন্তু এখন রাহমান কেন বলতেছ? নবী কথার ওপর তারা হাসি-তামাশা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে লাগলো।
তখন আল্লাহ তায়ালা সূরা আর রাহমান নাযিল করলেন। যেখানে আর রাহমান নামের সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা উল্লেখ আছে। জিনদের উপস্থিতিতে রাসুলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক এই সূরা পাঠ করার ঘটনা মক্কাতে হয়েছিল। সূরা মক্কা অবতীর্ণ একটি সূরা। তাই এই সূরাকে মাক্কী সূরা ও বলা হয়।
আর-রাহমান অর্থ কি?
রাহমান শব্দের অর্থ পরম দয়ালু, দয়াবান। আল্লাহর যে ৯৯ টি গুনবাচক নাম রয়েছে তন্মধ্যে একটি হচ্ছে আর-রাহমান।
সুরা আর রহমান নামকরন (Surah rahman)
সূরা আর-রাহমান এর প্রথম আয়াত হচ্ছে আর রাহমান( الرحمن) ।সূরা আর-রাহমানে আল্লাহ তায়ালা রহমতের এবং নেয়ামতের আলোচনা করেছেন।এই সূরার প্রথম শব্দটিকে সূরার নাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। আর রাহমান(suarh ar rahman) সুরায় আল্লাহ তায়ালার রাহমান নামের সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা এবং আল্লাহর এই গুনবাচক নামের সাথে বাস্তব উদাহরণ এই সবকিছু উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত
সূরা আর রাহমান বাংলা অর্থসহ উচ্চারণ (surah ar rahman bangla)
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
অর্থঃ শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
الرَّحْمَنُ
উচ্চারণঃ ১) আররাহমা-নু।
অর্থঃ ১) করুণাময় মহান আল্লাহ।
﴿عَلَّمَ الْقُرْآنَ﴾
উচ্চারণঃ ২)‘আল্লামাল কুরআ-ন।
অর্থঃ ২) এ কুরআনের শিক্ষা দিয়েছেন৷
﴿خَلَقَ الْإِنسَانَ﴾
উচ্চারণঃ ৩) খালাকাল ইনছা-ন।
অর্থঃ ৩) তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।
﴿عَلَّمَهُ الْبَيَانَ﴾
উচ্চারণঃ ৪) ‘আল্লামাহুল বায়া-ন।
অর্থঃ ৪) এবং তাকে কথা শিখিয়েছেন৷
﴿الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ بِحُسْبَانٍ﴾
উচ্চারণঃ ৫) আশশামছুওয়ালকামারু বিহুছবা-ন।
অর্থঃ ৫) সূর্য ও চন্দ্র একটি হিসেবের অনুসরণ করছে।
﴿وَالنَّجْمُ وَالشَّجَرُ يَسْجُدَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৬) ওয়ান্নাজমুওয়াশশাজারু ইয়াছজূদা-ন।
অর্থঃ ৬) এবং তারকারাজি ও গাছপালা সব সিজদাবনত ৷
﴿وَالسَّمَاءَ رَفَعَهَا وَوَضَعَ الْمِيزَانَ﴾
উচ্চারণঃ ৭) ওয়াছ ছামাআ রাফা‘আহা-ওয়া ওয়াদা‘আল মীঝা-ন।
অর্থঃ ৭) আসমানকে তিনিই সুউচ্চ করেছেন এবং দাড়িপাল্লা কায়েম করেছেন৷
﴿أَلَّا تَطْغَوْا فِي الْمِيزَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৮) আল্লা-তাতাগাও ফিল মীঝা-ন।
অর্থঃ ৮) এর দাবী হলো তোমরা দাড়িপাল্লায় বিশৃংখলা সৃষ্টি করো না৷
﴿وَأَقِيمُوا الْوَزْنَ بِالْقِسْطِ وَلَا تُخْسِرُوا الْمِيزَانَ﴾
উচ্চারণঃ ৯) ওয়া আকীমুল ওয়াঝনা বিলকিছতিওয়ালা-তুখছিরুল মীঝা-ন।
অর্থঃ ৯) ইনসাফের সাথে সঠিকভাবে ওজন করো এবং ওজনে কম দিও না৷
﴿وَالْأَرْضَ وَضَعَهَا لِلْأَنَامِ﴾
উচ্চারণঃ ১০) ওয়াল আরদা ওয়া দা‘আহা-লিলআনা-ম।
অর্থঃ ১০) পৃথিবীকে তিনি সমস্ত সৃষ্টির জন্য বানিয়েছেন৷
﴿فِيهَا فَاكِهَةٌ وَالنَّخْلُ ذَاتُ الْأَكْمَامِ﴾
উচ্চারণঃ ১১) ফীহা-ফা-কিহাতুওঁ ওয়ান্নাখলুযা-তুল আকমা-ম।
অর্থঃ ১১) এখানে সব ধরনের সুস্বাদু ফল প্রচুর পরিমাণে আছে৷ খেজুর গাছ আছে যার ফল পাতলা আবরণে ঢাকা৷
﴿وَالْحَبُّ ذُو الْعَصْفِ وَالرَّيْحَانُ﴾
উচ্চারণঃ ১২) ওয়াল হাব্বুযুল‘আসফি ওয়াররাইহা-ন।
অর্থঃ ১২) নানা রকমের শস্য আছে যার মধ্যে আছে দানা ও ভূষি উভয়ই৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ১৩) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা-তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ১৩) অতএব, হে জিন ও মানব জাতি, তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?
﴿خَلَقَ الْإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ كَالْفَخَّارِ﴾
উচ্চারণঃ ১৪) খালাকাল ইনছা-না মিন সালসা-লিন কাল ফাখখা-র।
অর্থঃ ১৪) মাটির শুকনো ঢিলের মত পচা কাদা থেকে তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন৷
﴿وَخَلَقَ الْجَانَّ مِن مَّارِجٍ مِّن نَّارٍ﴾
উচ্চারণঃ ১৫) ওয়া খালাকাল জান্না মিম্মা-রিজিমমিন্না-র।
অর্থঃ ১৫) আর জিনদের সৃষ্টি করেছেন আগুণের শিখা থেকে ৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ১৬) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ১৬) হে জিন ও মানব জাতি, তোমরা তোমাদের রবের অসীম ক্ষমতার কোন কোন বিস্ময়কর দিক অস্বীকার করবে?
﴿رَبُّ الْمَشْرِقَيْنِ وَرَبُّ الْمَغْرِبَيْنِ﴾
উচ্চারণঃ ১৭) রাব্বুল মাশরিকাইনি ওয়া রাব্বুল মাগরিবাইন।
অর্থঃ ১৭) দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচল-সব কিছুর মালিক ও পালনকর্তা তিনিই৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ১৮) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ১৮) হে জিন ও মানবজাতি, তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন্ কোন্ কুদরতকে অস্বীকার করবে?
﴿مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ﴾
উচ্চারণঃ ১৯) মারাজাল বাহরাইনি ইয়ালতাকিয়া-ন।
অর্থঃ ১৯) দু’টি সমুদ্রকে তিনি পরস্পর মিলিত হতে দিয়েছেন৷
﴿بَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لَّا يَبْغِيَانِ﴾
উচ্চারণঃ ২০) বাইনাহুমা-বারঝাখুল লা-ইয়াবগিয়া-ন।
অর্থঃ ২০) তা সত্ত্বেও উভয়ের মধ্যে একটি পর্দা আড়াল হয়ে আছে যা তারা অতিক্রম করে না
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ২১) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ২১) হে জিন ও মানব জাতি, তোমরা তোমাদের রবের অসীম শক্তির কোন্ কোন্ বিস্ময়কর দিক অস্বীকার করবে ?
﴿يَخْرُجُ مِنْهُمَا اللُّؤْلُؤُ وَالْمَرْجَانُ﴾
উচ্চারণঃ ২২) ইয়াখরুজূমিনহুমাল লু’লূউ ওয়াল মার জা-ন।
অর্থঃ ২২) এই উভয় সমুদ্র থেকেই মুক্তা ও প্রবাল পাওয়া যায়৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ২৩) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ২৩) হে জিন ও মানব জাতি, তোমরা তোমাদের রবের কুদরতের কোন্ কোন্ পরিপূর্ণতা অস্বীকার করবে?
﴿وَلَهُ الْجَوَارِ الْمُنشَآتُ فِي الْبَحْرِ كَالْأَعْلَامِ﴾
উচ্চারণঃ ২৪) ওয়ালাহুল জাওয়া-রিল মুনশাআ-তুফিল বাহরি কালআ‘লা-ম।
অর্থঃ ২৪) সমুদ্রের বুকে পাহাড়ের মত উঁচু ভাসমান জাহজসমূহ তাঁরই৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ২৫) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ২৫) অতএব, হে জিন ও মানব জাতি, তোমরা তোমাদের রবের কোন্ কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?
﴿كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ﴾
উচ্চারণঃ ২৬) কুল্লুমান ‘আলাইহা-ফা-নিওঁ।
অর্থঃ ২৬) এ ভূপৃষ্ঠের প্রতিটি জিনিসই ধ্বংস হয়ে যাবে।
﴿وَيَبْقَىٰ وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ﴾
উচ্চারণঃ ২৭) ওয়া ইয়াবকা-ওয়াজহু রাব্বিকা যুল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম।
অর্থঃ ২৭) এবং তোমার মহীয়ান ও দয়াবান রবের সত্তাই অবশিষ্ট থাকবে৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ২৮) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ২৮) অতএব, হে জিন ও মানুষ তোমরা তোমাদের রবের কোন্ কোন্ পূর্ণতাকে অস্বীকার করবে?
﴿يَسْأَلُهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ﴾
উচ্চারণঃ ২৯) ইয়াছআলুহূমান ফিছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি কুল্লা ইয়াওমিন হুওয়া ফী শা’ন।
অর্থঃ ২৯) পৃথিবী ও আকাশ মণ্ডলে যা-ই আছে সবাই তাঁর কাছে নিজের প্রয়োজন প্রার্থনা করছে৷ প্রতি মুহূর্তে তিনি নতুন নতুন কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৩০) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৩০) হে জিন ও মানুষ, তোমরা তোমাদের রবের কোন্ কোন্ মহত গুণাবলী অস্বীকার করবে?
﴿سَنَفْرُغُ لَكُمْ أَيُّهَ الثَّقَلَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৩১) ছানাফরুগু লাকুম আইয়ুহাছছাকালা-ন।
অর্থঃ ৩১) ওহে পৃথিবীর দুই বোঝা তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমি অতি শীঘ্রই তোমাদের প্রতি একাগ্রভাবে মনোনিবেশ করবো৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৩২) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৩২) ( তারপর দেখবো) তোমরা তোমাদের রবের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে অস্বীকার করো?
﴿يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ إِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَن تَنفُذُوا مِنْ أَقْطَارِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ فَانفُذُوا ۚ لَا تَنفُذُونَ إِلَّا بِسُلْطَانٍ﴾
উচ্চারণঃ ৩৩) ইয়া-মা‘শারাল জিন্নি ওয়াল ইনছি ইনিছতাতা‘তুম আন তানফুযূমিন আকতা-রিছ ছামাওয়া-তি ওয়াল আরদিফানফুযূ লা-তানফুযূনা ইল্লা-বিছুলতা-ন।
অর্থঃ ৩৩) হে জিন ও মানব গোষ্ঠী, তোমরা যদি পৃথিবী ও আকাশ মণ্ডলের সীমা পেরিয়ে কোথাও পালিয়ে যেতে পার তাহলে গিয়ে দেখ৷ পালাতে পারবে না, এ জন্য বড় শক্তি প্রয়োজন৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৩৪) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৩৪) তোমরা তোমাদের রবের কোন্ কোন্ অসীম ক্ষমতাকে অস্বীকার করবে?
﴿يُرْسَلُ عَلَيْكُمَا شُوَاظٌ مِّن نَّارٍ وَنُحَاسٌ فَلَا تَنتَصِرَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৩৫) ইউরছালু‘আলাইকুমা-শুওয়া-জু ম মিন্না-রিওঁ ওয়া নুহা-ছুন ফালা-তানতাসিরা-ন।
অর্থঃ ৩৫) (যদি পালানেরা চেষ্টা করো তাহলে) তোমাদের প্রতি আগুণের শিখা এবং ধোঁয়া ছেড়ে দেয়া হবে তোমরা যার মোকাবিলা করতে পারবে না৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৩৬) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৩৬) হে জিন ও মানুষ, তোমরা তোমাদের রবের কোন্ কোন্ ক্ষমতাকে অস্বীকার করবে?
﴿فَإِذَا انشَقَّتِ السَّمَاءُ فَكَانَتْ وَرْدَةً كَالدِّهَانِ﴾
উচ্চারণঃ৩৭) ফাইযান শাককাতিছ ছামাউ ফাকা-নাত ওয়ারদাতান কাদ্দিহা-ন।
অর্থঃ ৩৭) অতপর (কি হবে সেই সময়) যখন আসমান ফেটে চৌচির হয়ে যাবে এবং লাল চামড়ার মত লোহিত বর্ণ ধারণ করবে?
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৩৮) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৩৮) হে জিন ও মানুষ, তোমরা তোমাদের রবের কোন্ কোন্ ক্ষমতা অস্বীকার করবে?
﴿فَيَوْمَئِذٍ لَّا يُسْأَلُ عَن ذَنبِهِ إِنسٌ وَلَا جَانٌّ﴾
উচ্চারণঃ ৩৯) ফাইয়াওমা ইযিল্লা-ইউছআলু‘আন যামবিহী ইনছুওঁ ওয়ালা-জান।
অর্থঃ ৩৯) সে দিন কোন মানুষ ও কোন জিনকে তার গোনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন হবে না৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৪০) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৪০) তখন ( দেখা যাবে) তোমরা দুই গোষ্ঠী তোমাদের রবের কোন্ কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করো৷
﴿يُعْرَفُ الْمُجْرِمُونَ بِسِيمَاهُمْ فَيُؤْخَذُ بِالنَّوَاصِي وَالْأَقْدَامِ﴾
উচ্চারণঃ ৪১) ইউ‘রাফুল মুজরিমূনা বিছীমা-হুম ফাইউ’খাযুবিন্নাওয়া-ছী ওয়াল আকদা-ম।
অর্থঃ ৪১) সেখানে চেহারা দেখেই অপরাধীকে চেনা যাবে এবং তাদেরকে মাথার সম্মুখভাগের চুল ও পা ধরে হিঁচড়ে টেনে নেয়া হবে৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৪২) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৪২) সেই সময় তোমরা তোমাদের রবের কোন্ কোন্ ক্ষমতাকে অস্বীকার করবে?
﴿هَٰذِهِ جَهَنَّمُ الَّتِي يُكَذِّبُ بِهَا الْمُجْرِمُونَ﴾
উচ্চারণঃ ৪৩) হা-যিহী জাহান্নামুল্লাতী ইউকাযযি বুবিহাল মুজরিমূন।
অর্থঃ ৪৩) সেই (সময় বলা হবে) এতো সেই জাহান্নাম অপরাধীরা যা মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করতো৷
﴿يَطُوفُونَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ حَمِيمٍ آنٍ﴾
উচ্চারণঃ ৪৪) ইয়াতূ ফূনা বাইনাহা-ওয়া বাইনা হামীমিন আ-ন।
অর্থঃ ৪৪) তারা ঐ জাহান্নাম ও ফুটন্ত টগবগে পানির উৎসের মধ্যে যাতায়াত করতে থাকবে৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৪৫) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৪৫) তারপরেও তোমরা তোমাদের রবের কোন্ কোন্ ক্ষমতাকে অস্বীকার করবে?
﴿وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৪৬) ওয়া লিমান খা-ফা মাকা-মা রাব্বিহী জান্নাতা-ন।
অর্থঃ ৪৬) আর যারা তাদের প্রভুর সামনে হাজির হওয়ার ব্যাপারে ভয় পায় তাদের প্রত্যেকের জন্য আছে দু’টি করে বাগান৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৪৭) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৪৭) তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দানকে তোমরা অস্বীকার করবে?
﴿ذَوَاتَا أَفْنَانٍ﴾
উচ্চারণঃ ৪৮) যাওয়া-তা আফনা-ন।
অর্থঃ ৪৮) তরুতাজা লতাপাতা ও ডালপালায় ভরা ৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৪৯) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৪৯) তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দানকে তোমরা অস্বীকার করবে?
﴿فِيهِمَا عَيْنَانِ تَجْرِيَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৫০) ফীহিমা-‘আইনা-নি তাজরিয়া-ন।
অর্থঃ ৫০) উভয় বাগানে দু’টি ঝর্ণা প্রবাহিত থাকবে৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৫১) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৫১) তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দানকে তোমরা অস্বীকার করবে?
﴿فِيهِمَا مِن كُلِّ فَاكِهَةٍ زَوْجَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৫২) ফীহিমা-মিন কুল্লি ফা-কিহাতিন ঝাওজা-ন।
অর্থঃ ৫২) উভয় বাগানের প্রতিটি ফলই হবে দু’রকমের ৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৫৩) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৫৩) তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দানকে তোমরা অস্বীকার করবে?
﴿مُتَّكِئِينَ عَلَىٰ فُرُشٍ بَطَائِنُهَا مِنْ إِسْتَبْرَقٍ ۚ وَجَنَى الْجَنَّتَيْنِ دَانٍ﴾
উচ্চারণঃ ৫৪) মুত্তাকিঈনা ‘আলা-ফুরুশিম বাতাইনুহা-মিন ইছতাবরাকিও ওয়া জানাল জান্নাতাইনি দা-ন।
অর্থঃ ৫৪) জান্নাতের বাসিন্দারা এমন সব ফরাশের ওপর হেলান দিয়ে বসবে যার আবরণে হবে পুরু রেশমের এবং বাগানের ছোট ছোট শাখা-প্রশাখা ফলভারে নূয়ে পড়তে থাকবে৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৫৫) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৫৫) তোমরা তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দান অস্বীকার করবে?
﴿فِيهِنَّ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَانٌّ﴾
উচ্চারণঃ ৫৬) ফীহিন্না কা-সিরা-তুত্তারফি লাম ইয়াতমিছহুন্না ইনছুন কাবলাহুম ওয়ালা-জান।
অর্থঃ ৫৬) এসব নিয়ামতের মধ্যে থাকবে লজ্জাবনত চক্ষু বিশিষ্ট ললনারা যাদেরকে এসব জান্নাতবাসীদের আগে কোন মানুষ বা জিন স্পর্শ করেনি৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৫৭) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৫৭) তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দানকে তোমরা অস্বীকার করবে?
﴿كَأَنَّهُنَّ الْيَاقُوتُ وَالْمَرْجَانُ﴾
উচ্চারণঃ ৫৮) কাআন্নাহুন্নাল ইয়া‘কূতুওয়াল মারজান-ন।
অর্থঃ ৫৮) এমন সুদর্শনা, যেমন হীরা এবং মুক্তা৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৫৯) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৫৯) তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দান তোমরা অস্বীকার করবে?
﴿هَلْ جَزَاءُ الْإِحْسَانِ إِلَّا الْإِحْسَانُ﴾
উচ্চারণঃ ৬০) হাল জাঝাউল ইহছা-নি ইল্লাল ইহছা-ন।
অর্থঃ ৬০) সদাচারের প্রতিদান সদাচার ছাড়া আর কি হতে পারে?
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৬১) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৬১) হে জিন ও মানুষ, এরপরও তোমরা তোমাদের রবের মহত গুণাবলীর কোন্ কোনটি অস্বীকার করবে?
﴿وَمِن دُونِهِمَا جَنَّتَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৬২) ওয়া মিন দূনিহিমা-জান্নাতা-ন।
অর্থঃ ৬২) ঐ দু’টি বাগান ছাড়া আরো দু’টি বাগান থাকবে৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৬৩) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৬৩) তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দান তোমরা অস্বীকার করবে?
﴿مُدْهَامَّتَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৬৪) মুদ হূমমাতা-ন।
অর্থঃ ৬৪) নিবিড়, শ্যামল-সবুজ ও তরুতাজা বাগান৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৬৫) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৬৫) তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দান তোমরা অস্বীকার করবে৷
﴿فِيهِمَا عَيْنَانِ نَضَّاخَتَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৬৬) ফীহিমা-‘আইনা-নি নাদ্দাখাতা-ন।
অর্থঃ ৬৬) উভয় বাগানের মধ্যে দু’টি ঝর্ণাধারা ফোয়ারার মত উৎক্ষিপ্ত হতে থাকবে৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৬৭) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৬৭) তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দান তোমরা অস্বীকার করবে৷
﴿فِيهِمَا فَاكِهَةٌ وَنَخْلٌ وَرُمَّانٌ﴾
উচ্চারণঃ ৬৮) ফীহিমা-ফা-কিহাতুওঁ ওয়া নাখলুওঁ ওয়ারুম্মা-ন।
অর্থঃ ৬৮) সেখানে থাকবে প্রচুর পরিমাণে ফল, খেজুর ও আনার৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৬৯) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৬৯) তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দান তোমরা অস্বীকার করবে?
﴿فِيهِنَّ خَيْرَاتٌ حِسَانٌ﴾
উচ্চারণঃ ৭০) ফীহিন্না খাইরা-তুন হিছা-ন।
অর্থঃ ৭০) এসব নিয়ামতের মধ্যে থাকবে সচ্চরিত্রের অধিকারীনী সুন্দরী স্ত্রীগণ৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৭১) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৭১) তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দান তোমরা অস্বীকার করবে?
﴿حُورٌ مَّقْصُورَاتٌ فِي الْخِيَامِ﴾
উচ্চারণঃ ৭২) হূরুমমাকসূরা-তুন ফিল খিয়া-ম।
অর্থঃ ৭২) তাঁবুতে অবস্থানরত হুরগণ৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৭৩) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৭৩) তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দান তোমরা অস্বীকার করবে?
﴿لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَانٌّ﴾
উচ্চারণঃ ৭৪) লাম ইয়াতমিছহুন্না ইনছুন কাবলাহুম ওয়ালা-জান।
অর্থঃ ৭৪) এসব জান্নাতবাসীদের পূর্বে কখনো কোন মানুষ বা জিন তাদের স্পর্শও করেনি৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৭৫) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৭৫) তোমাদের রবের কোন কোন দান তোমরা অস্বীকার করবে৷
﴿مُتَّكِئِينَ عَلَىٰ رَفْرَفٍ خُضْرٍ وَعَبْقَرِيٍّ حِسَانٍ﴾
উচ্চারণঃ ৭৬) মুত্তাকিঈনা ‘আলা-রাফরাফিন খুদরিওঁ ওয়া ‘আবকারিইয়িন হিছা-ন।
অর্থঃ ৭৬) ঐ সব জান্নাতবাসী সবুজ গালিচা ও সুক্ষ্ম পরিমার্জিত অনুপম ফরাশের ওপর হেলান দিয়ে বসবে৷
﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾
উচ্চারণঃ ৭৭) ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন।
অর্থঃ ৭৭) তোমাদের রবের কোন্ কোন্ দান তোমরা অস্বীকার করবে?
﴿تَبَارَكَ اسْمُ رَبِّكَ ذِي الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ﴾
উচ্চারণঃ ৭৮) তাবা-রাকাছমুরাব্বিকা যিল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম।
অর্থঃ ৭৮) তোমার মহিমান্বিত ও দাতা রবের নাম অত্যন্ত কল্যাণময়৷
সূরা আর রাহমান পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন
আর রহমান সূরা এর ফযিলত (surah ar rahman)
১। হাদীস শরিফে নবী করীম ( সঃ ) এরশাদ করেন , প্রত্যেক জিনিসেরই একটা নিজস্ব সৌন্দর্য আছে । সূরা আর-রহমান কোরআন শরীফের সৌন্দর্য । ফযীলতের দিক দিয়ে এটি অর্ধেক কোরআনের সমান ।
২। নবী করীম ( সাঃ ) এরশাদ করেন , যারা শুধু আল্লাহকে খুশী করার জন্য এ সূরাটি প্রত্যহ আছরের নামায বাদ পাঠ করবে , তাদের চেহারা নূরানী হবে , স্ত্রী পুত্র তার তাবেদার হবে , তার রিজিক বৃদ্ধি পাবে এবং সে ব্যক্তি বেহেশতের হকদার হয়ে যাবে।
৩।পবিত্র কুরআনের সূরা আর-রাহমান একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা। বান্দার প্রতি আল্লাহ তা’য়ালার কী অশেষ দান রয়েছে, এ সূরায় বার বার সে কথাই আলোকপাত করা হয়েছে। এ সূরার আমল রুজি-রোজগারের জন্য বিশেষ ফলদায়ক।
৪।প্লীহারোগে আক্রান্ত হলে, এ সূরা পাঠ করে রোগির প্লীহার উপর ফুঁক দেবে।
৫।আর যে ব্যক্তি এ সূরা নিয়মিত পাঠ করবে, তার চেহারা কিয়ামতের দিন চাঁদের ন্যায় উজ্জল হবে। তাকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
৬।সর্বদা এ সূরা পাঠকারির মন প্রফুল্ল থাকবে। তাকে দু:শ্চিন্তা অস্তির করে তুলতে পারবে না। তার যে কোনো দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হবে।
৭।যে ব্যক্তি সূরা আর-রাহমান এগারো বার পাঠ করবে আল্লাহর রহমতে তার সকল নেক উদ্দেশ্য হাসিল হবে। (তাফসিরে জালালাইন)
৮। এই সূরাটি পাঠ করে চোখের মধ্যে ফু দিলে চোখের রোগ ভালো হয়ে যাবে।
৯।এই সূরাটি স্বপ্নের মধ্যে পড়তে দেখলে হজ্জ্বে যাওয়া নসীব হবে।
১০।এই সূরাটি নিয়মিত তেলাওয়াত করলে বসন্ত রোগ হতে মুক্তি পাবে।
১১।‘ফাবি আইয়্যি আ-লা-ই রাব্বিকুমা তুকাজ্জিবান’ এই আয়াতটি তিনবার পাঠ করে কোন বিচার সালিশের মধ্যে গেলে বিচারকের মন পাঠকারীর উপর সদয় হবে।
১২। এই সূরাটি নিয়মিত তেলাওয়াত করলে তেলাওয়াতকারীর সকল অভাব অনটন দূর হয়ে যাবে এবং আর্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পাবে।
১৩। অন্তরের খাস নিয়তে এই সূরা পাঠ করলে তিলাওয়াতকারীর জন্য বেহেশতের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং দোযখের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ সূরা ইয়াসিন বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, অডিও ও ফযিলত
সূরা আর রাহমান অডিওঃ বিভিন্ন কারীদের কণ্ঠে
শাইখ মুহম্মদ জিবরীল এর কন্ঠে
বিভিন্ন কারীদের কণ্ঠে
সূরা আর রাহমানের আলোচ্য বিষয় (Surah Ar Rahman)
সূরা আর রাহমানে একটি আয়াত আছে যে আয়াতটি এক বার দুই বার নয় আল্লাহ তায়ালা প্রায় ৩১ বার এর মতো উল্লেখ করেছেন। এই আয়াতটি হলো ﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾ অর্থাৎ অতএব, হে জিন ও মানব জাতি, তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?
এতে জিন ও মানবজাতি উভয়কে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে। আল্লাহ এ সূরায় অসাধারণভাবে এই
ব্যাপারটি তুলে ধরেছেন।
সাধারনত পুনরাবৃত্তি করা হয় একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। এই সূরায় জিন ও মানবজাতি উভয়কে আল্লাহ তায়ালা প্রশ্ন করেছেন যে, তোমরা আর কত অকৃতজ্ঞ হবে? আল্লাহর রাগ প্রকাশের এই ক্রম অগ্রসরতা সেই সমস্ত লোকদের প্রতি যারা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার ধারণাকে অস্বীকার করে। যারা তাদের চার পাশে তাকিয়ে দেখে না। তারা আল্লাহর প্রদত্ত অগনিত নিয়ামত সমূহের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার প্রয়োজন অনুভব করে না এইভাবে আয়াতগুলো অগ্রসর হয়েছে।
এরপর এই একই বাক্যাংশ উল্লেখ করা হয়েছে সূরার শেষ অংশে যেখানে আল্লাহ জান্নাত এবং জান্নাতের মানুষের নিয়ে কথা বলেছেন তিনি তাদের একটি একটি নিয়ামত উপহার করবেন এবং বলবেন তোমরা আর কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে? তাদের উপর তার রহমতের বর্ষণ করার কথা তুলে ধরেন ।
সূরার প্রথম অংশ থেকে ‘ফাবিআইয়ি আ-লাই রাব্বিকুমা-তুকাযযিবা-ন’ এই আয়াতটি তীব্র থেকে তীব্রতর রুপ লাভ করে সূরার শেষের দিকে এসে সেই তীব্রতা কমতে থাকে কোমল হতে থাকে। আল্লাহর ভালোবাসা প্রকাশে সেই আয়াত আর বেশি ভালোবাসাপূর্ণ হয়ে ওঠে।
সুরা আর রহমান এর বিষয়বস্তু (Sura Ar Rahman)
প্রথমত, হলো আল্লাহ কর্তৃক কোরআন শিক্ষা দানের মহান উপহার। কোরআন কিভাবে মানুষের প্রকৃতির যত্ন নিয়ে থাকে, কিভাবে তাদের নিজস্বতার ওপর সংগতিপূর্ণ। কিভাবে এই শিক্ষাদান আল্লাহর দয়া, মায়া, যত্ন ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। এই জন্য কোরআন শিক্ষার বিষয়টাকে আর রাহমান দিয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
সুতরাং আল্লাহর কোরআন শিক্ষাদানের কাজটি তার একটি কল্যাণময়ী ও মমতাময়ী কাজ।তারা এমন মানুষ যারা কোন বিষয়কে স্বীকার করে না তারা তাদের আশেপাশের বিস্ময়কর বিষয়গুলোর প্রতি কোন খেয়াল রাখে না। তাই আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে বোঝানোর জন্য আশেপাশের জিনিসগুলোকে ইঙ্গিত করতে লাগলেন। চন্দ্র,সূর্য, সাগর-মহাসাগর এই সবকিছুই আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে যার যার জায়গায় রয়েছে।এবং সে অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, বিষয় হচ্ছে আমাদের চারপাশের আল্লাহর অশেষ নিয়ামত সমুহ যা কি না মানুষ অবজ্ঞা করে আসছে।
তৃতীয়ত, হচ্ছে বিচার দিবস নিয়ে। যেখানে মানুষ এবং জিন জাতিকে একত্রিত করা হবে। বিচার দিবসের দিন আকাশ বিদুর্ন হয়ে পড়বে, জলন্ত কয়লা ও আঙার জড়ে পড়বে, পৃথিবী চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে এগুলোরই বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ওইদিন অপরাধীরা ছুটে পালাবে তাদের চেহারা দেখে চেনা যাবে তারা অপরাধী এরপর জিজ্ঞাসা শুরু হবে এবং তাদেরকে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে ঢুকানো হবে। এটা এই সূরার অন্যতম ভয়ঙ্কর একটি চিত্র।
অনেকের মনে এই প্রশ্নটা জাগতে পারে যে এই সূরা আল্লাহর নাম আর-রাহমান দিয়ে কিভাবে শুরু হয়? যিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল,যত্নশীল এবং পরম দয়ালু। আর সূরার মাঝখানে জাহান্নামের এমন করুন অবস্থা কেন দেখানো হয়েছে?
এটা আসলে আল্লাহর অপার করুণার একটি অংশ। কারণ আপনি এটা পছন্দ করেন বা না করেন জাহান্নাম আছে এবং থাকবেও। জাহান্নাম শব্দের মাধ্যমে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন এবং আমাদের জেনে রাখা উত্তম যেন আমাদের সেই অনুযায়ী আমল করা এবং নবী-রাসুলের নির্দেশ করা পথে চলা যাতে আমাদেরকে এটা আর স্বচক্ষে দেখতে না হয়। এটা আসলে আল্লাহর দেয়া একটা উপহার।
আমাদের পূর্বেকার মানুষদের যে কিতাবটি দেওয়া হয়েছিল তারা অনেকেই জাহান্নামের ভয়াবহতার ধারণা হারিয়ে ফেলেছে। তারা এটা নিয়ে উপহাস করে। কেউ কেউ তাদের কিতাব থেকে জাহান্নামের সম্পূর্ণ উল্লেখ সমূহ মুছে ফেলেছে। মুসলিমদের জন্য জাহান্নাম কোন উপহাসের বিষয় নয়। আল্লাহ এটা হতে দেন না।জাহান্নামের ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা রাখা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি উপহার।
কল্পনা করুন একটা ভয়াবহ বিপদ আমাদের সামনে আপনি এটাকে একটি তামাশা হিসেবে নিচ্ছেন এইটা মোকাবেলার জন্য আপনার কোন প্রস্তুতি নেই এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আপনার কোন অস্ত্র নেই এই সুরাতে চরমভাবে ভয় প্রদান করাই হলো আমাদের উপহার। আমাদের আতঙ্কিত করার পর আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের বর্ণনা দিয়েছেন। আর যে তার রবের সামনে দাঁড়াতে ভয় করে তার জন্য রয়েছে দুটি জান্নাত। প্রথমে তিনি আপনাকে ভয় দেখান তারপর তিনি বলছেন যদি তুমি ভয় পেয়ে থাকো তবে তোমার জন্য আছে জান্নাত। যদিও তিনি আপনাকে ভয় দেখাচ্ছেন কিন্তু তিনি এটা করছেন আরও বৃহত্তর মহান একটা উদ্দেশ্যে আর তা হলো আপনাকে জান্নাত প্রদান করা।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে সঠিক বুঝার তওফিক দান করেন । এবং আমাদেরকে সূরা আর রাহমানের অর্থ বুঝে পড়ার এবং এর ওপর আমল করার তওফিক দিন। আমীন।
FAQs
আর-রাহমান অর্থ করুণাময় আল্লাহ
সুরা আর রাহমানের আয়াত সংখ্যা ৭৮। রুকু সংখ্যা ৩।
সূরা আর রাহমান কোরাআন শরীফের ৫৫ তম সূরা।
নবী করীম ( সাঃ ) এরশাদ করেন , যারা শুধু আল্লাহকে খুশী করার জন্য এ সূরাটি প্রত্যহ আছরের নামায বাদ পাঠ করবে , তাদের চেহারা নূরানী হবে , স্ত্রী পুত্র তার তাবেদার হবে , তার রিজিক বৃদ্ধি পাবে এবং সে ব্যক্তি বেহেশতের হকদার হয়ে যাবে।