চুল কিংবা ত্বকের সমস্যা নেই এমন মানুষ বর্তমানে খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন। আজকালকার ভেজালের বাজারে যেখানে সতেজ শাকসবজি কিংবা ফল পাওয়াই দুষ্কর, সেখানে সুস্থ জীবনের আশা করাটা যেনো স্বপ্নের মত। কিন্তু এরপরেও এমন এক যুগান্তকারী খাদ্য আছে যা আপনার দেহের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক সৌন্দর্য দুটোতেই নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। আর তা হলো মেথি। আর এই মেথির উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই হয়ত অজ্ঞাত।
আবার অনেকে জানলেও সম্পূর্ণরূপে বোধহয় জানেন না। আর তাদের জন্যই আজকের এই আলোচনা।
এই আর্টিকেল পড়ে যা যা জানতে পারবেনঃ 👉 মেথি কি 👉 মেথির ব্যবহার 👉 মেথির পুষ্টিগুণ 👉 মেথির উপকারিতা 👉 মেথি খাওয়ার নিয়ম 👉 চুলের যত্নে মেথি 👉 ত্বকের যত্নে মেথি 👉 মেথির অপকারিতা
মেথি (methi) কি ?
মেথি বা Fenugreek যার বৈজ্ঞানিক নাম Trigonella foenum-graecum। একটি মৌসুমী গাছ যার পাতা এবং বীজ (বাদামি-হলুদ বর্ণের চারকোণা আকৃতির) উভয়ই অত্যন্ত সুন্দর উপায়ে ব্যবহৃত হয়।
মেথির ব্যবহার
মেথি যেসকল রূপে ব্যবহৃত হয়-
১. মেথিপাতার মুখরা
গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত এবং জনপ্রিয় একটি শাক হলো মেথি শাক। মেথি গাছের পাতাই মেথি শাক হিসেবে খাওয়া যায় যা অত্যন্ত উপকারী।
লোকজ, ইউনানী ও কবিরাজি চিকিৎসায় এই মেথি পাতা বা মেথি শাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২. মশলা হিসেবে মেথি
ডাল রান্নার সময় পাঁচফোড়নের ব্যবহার না করলে সে রান্নার স্বাদ যেনো অপূর্ণই থেকে যায়। আর এই পাঁচফোড়নেরই একটি উপাদান হলো মেথি।
সুস্বাদু রান্নার কথা মাথায় আসলে মেথিকে পাশে সরিয়ে রাখা অসম্ভব। অত্যাধিক পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এই মেথি বীজ আমাদের প্রতিদিনের ব্যবহৃত মশলা জাতীয় পণ্যের মধ্যে থাকা যেনো আবশ্যক।
৩. খাদ্য রসনায় মেথি
শুধু কি মশলা কিংবা পাঁচফোড়নেই শেষ? মোটেই নয়। মেথি বীজ আমরা সরাসরি খাদ্য হিসেবেও নিয়মিত ব্যবহার করতে পারি।
মেথি পরোটা, মেথি ভাজি, মেথি পনির, মেথির থেপলা, আলু মেথি প্রভৃতি খাদ্য অনেকেরই প্রিয়। রুটি, পরোটা, ইডলি, দোসা, প্রভৃতি খাবারে মেথি পাতা ব্যবহার করলে তা স্বাদ এবং পুষ্টিমান উভয় ক্ষেত্রেই কার্যকরী।
রাতে ভেজানো মেথি সকালে চিবিয়ে খেলে এবং মেথি ভেজানো পানি পান করার মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ থেকে শরীরকে সুরক্ষিত করা সম্ভব।
তবে এক্ষেত্রে খাওয়ার নিয়ম যথাযথভাবে মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ যা পরবর্তীতে আলোচিত রয়েছে।
৪. পথ্যের গুণাগুণ মেথিতে
পথ্য হিসেবে মেথির গুণাগুণ অপরিসীম। বেশ কিছু রোগের মুশকিল আসান কিন্তু এই মেথি।
কোন কোন রোগের মহৌষধ এই মেথি তা জানার পূর্বে এটা জেনে নেয়া প্রয়োজন যে মেথি কেনো শরীরের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ।
মেথির পুষ্টিগুণ
মেথি তিতা স্বাদযুক্ত হওয়ায় অনেকেই হয়ত একে অবহেলা করে থাকেন। কিন্তু মেথির খাওয়ার উপকারিতা যে কতটা তা এর মধ্যে বিদ্যমান পুষ্টিগুণ পর্যালোচনা করলেই পাওয়া যায়।
⇒ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (অর্থাৎ রিবোফ্লাভিন, থায়ামিন, নায়াসিন, ফোলিক এসিড, পেন্টোথেনিক এসিড, বায়োটিন), ভিটামিন সি, ইনোসিটল এবং ভিটামিন এ মেথি থেকে পাওয়া যায়। ⇒ বিভিন্ন ভেষজ মিনারেল অর্থাৎ আয়রন, সেলেনিয়াম, জিংক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম প্রভৃতি পাওয়া যায়। ⇒ ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন, ফোলিক এসিড এবং খনিজ লবণের উল্লেখযোগ্য উৎস এই মেথি। ⇒ মেথিতে ফাইলোনিউট্রিয়েন্ট (কোলিন) আছে। ⇒ মেথিতে এন্টি অক্সিডেন্ট, এন্টি কারসিনোজেনিক, এন্টি ডায়াবেটিক, হাইপোগ্লাইসেমিক, হাইপোকোলেস্টেরেমিয়া এবং ল্যাকটেশন হ্রাস করার উপাদান রয়েছে।
মেথি শাক থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে পাওয়া সম্ভব।
১০০ গ্রাম মেথি থেকে যে পরিমাণ পুষ্টি পাওয়া যায় –
উপাদান | পরিমাণ |
সম্পৃক্ত চর্বি | ৬ গ্রাম |
সোডিয়াম | ৬৭মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ৭৭০ মিলিগ্রাম |
শর্করা | ৫৮ গ্রাম |
আমিষ | ২৩ গ্রাম |
ফাইবার | ২৫ গ্রাম |
শতকরায় প্রকার করতে চাইলে-
উপাদান | পরিমাণ(%) |
ভিটামিন সি | ৫ |
ক্যালসিয়াম | ১৭ |
ভিটামিন বি-৬ | ৩০ |
ম্যাগনেসিয়াম | ৪৭ |
অতএব বোঝাই যাচ্ছে, মেথি খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের অনেক পুষ্টি চাহিদা খুব সহজেই মেটানো সম্ভব। তাহলে চলুন মেথির এই পুষ্টিমাত্রা আমাদের শরীরকে কোন কোন দিক দিয়ে রক্ষা করে তা জেনে নেয়া যাক।
আরও পড়ুনঃ জাম্বুরার ১৭ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুণাগুণ জেনে নিন
মেথির উপকারিতা
১. ক্যান্সার প্রতিরোধে মেথির অবদান
বর্তমান যুগে চারদিকে দূষণ, ভেজালসমৃদ্ধ খাদ্য এবং বিভিন্ন বদভ্যাসের কারণে ক্যান্সার নামক ভয়ংকর ব্যধি আমাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে চরমভাবে।
একজন ব্যক্তি ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে সে ব্যক্তি এবং তার পরিবারের উপর দিয়ে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি চলে সেটা শুধু তারাই জানে। তাই প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধের পন্থাটাই বেশি উপযোগী। আর এই কাজে আপনার সাহায্য হতে পারে মেথি।
দেহের ভেতরের বিভিন্ন আণবিক পথগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে মেথি। বিভিন্ন সেলুলার পথগুলো যেমন জ্যাক-স্ট্যাট সিগন্যালিং, এমএপকে সিগন্যালিং প্রভৃতি পথগুলোকে ক্যান্সারের আণবিক প্রান্তগুলো বৃদ্ধি কিংবা ধ্বংস করে।আর এই পথগুলোর সঠিক নিয়ন্ত্রণ করে থাকে মেথি।
বিশেষত কোলন ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে মেথি অত্যন্ত উপযোগী। স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিদের জন্য মেথি ক্যান্সার প্রতিরোধী হতে পারে যদিও তাদের জিন ALK পরিবর্তনের কারণে জিনগত ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে।
কিন্তু জিন PLHH পরিবর্তনের কারণে জিনগত ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকলে মেথি এড়িয়ে চলা আবশ্যক।
এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে আপনি সঠিক নির্দেশনা পেতে পারেন। মেথিতে উপস্থিত ট্রাইগ্লিসারাইড এস্ট্রোজেন গ্রহণকারী মডিউলেটর হিসেবে কাজ করে। ফলে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে ভূমিকা রাখে।
তবে ক্যান্সারের সব ক্ষেত্রে মেথির ব্যবহার কাম্য নয়। এপিরিউবসিন চিকিৎসায় প্রাথমিক সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম লিম্ফোমা ক্যান্সার যাদের তাদের জন্য মেথি অত্যন্ত উপকারী।
কিন্তু পাইনাব্লাস্টোমার কারণে কার্বোপ্ল্যাটিনের চিকিৎসা যদি করা হয় তবে মেথি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।
মূলত ক্যান্সারের প্রকৃতি, চলমান চিকিৎসা, বয়স, লিঙ্গ, ক্যান্সারের অবস্থা সবকিছু মিলিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে মেথি গ্রহণযোগ্য কি না।
২. হজমে সাহায্যকারী মেথি
মেথি খাবার হজম করতে সাহায্য করে। এর অভ্যন্তরীণ পুষ্টিগুণ খাদ্যের বিষাক্ত পদার্থকে শরীরের উপর প্রভাব পড়া থেকে বিরত রাখে।
ফলে এটি একইসাথে খাবার হজম এবং দ্রুত শোষণে সহায়তা করে। মেথি গ্রহণে তাই শারীরিক অস্থিরতা জনিত সমস্যাও দূরীভূত হয়।
৩. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে মেথি
আমরা সকলেই জানি যে ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাদ্য গ্রহণে কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীভূত হয়।
মেথিতে ফাইবার থাকায় এটি হজমে সহায়তা করে যার ফলস্বরূপ কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পাইলস জাতীয় পীড়াদায়ক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
৪. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মেথি
“আয়ু” নামক একটি জার্নালে ২০১৭ সালে মেথি এবং ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক একটি পরীক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে দেখানো হয় যে ৫ মাস ধরে ৬০ জন ব্যক্তিকে দুটো গ্রুপে ভাগ করে তার অর্ধেককে দেয়া হয় শুধু ডায়াবেটিস এর ঔষধ এবং বাকি অর্ধেককে ওষুধ এর পাশাপাশি মেথি বীজ খাওয়ানো হয়।
৫ মাস পর এর ফলাফলে দেখা যায় মেথি সেবনকারী ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা গিয়েছে।
কিন্তু এ পরিবর্তন কীভাবে সম্ভব তার আগে জেনে নেয়া প্রয়োজন যে মেথি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কীরূপ ভূমিকা রাখে।
⇒ মেথিতে অ্যামিনো এসিডের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। এই অ্যামিনো এসিড রক্তে উপস্থিত গ্লুকোজ বা চিনিকে রাসায়নিকভাবে ভাঙতে সাহায্য করে এবং তা শোষিত হতে সহায়তা করে। এতে টাইপ ২ ডায়বেটিসের ঝুঁকি কমে। ⇒ মেথির অ্যামিনো এসিড ৪- হাইড্রোক্সি আইসোলিউসিন অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসরিত ইনসুলিনের উৎপাদন মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং একইসাথে প্রস্রাবে গ্লুকোজের পরিমাণ কমায়। ⇒ এছাড়াও মেথির খাবার হজম এবং শোষণের গুণ থাকায় ডায়াবেটিস সহজেই নিয়ন্ত্রিত থাকে।
৫. ওজন কিংবা স্থুলতা হ্রাসে মেথি
নিয়মিত মেথি খেলে শরীরের ওজন হ্রাস করা সম্ভব। খালি পেটে মেথি খেলে তা শরীরের মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। মেথি গ্রহণ করার ফলে পরিমাণমত খাদ্য গ্রহণে পরিতৃপ্তি অনুভূত হয়।
ফলে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছে থাকে না। এতে দেহে বাড়তি খাবারের মেদ জমতে পারে না এবং ওজন হ্রাস পায়।
৬. কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে
আমরা জানি কোলস্টেরল তিন ধরণের হয়ে থাকে
১. উচ্চ ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন(এইচডিএল)
২. নিম্ন ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন(এলডিএল)
৩. ট্রাইগ্লিসারাইড
রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা অত্যাধিক হলে শরীরের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। তাই এই তিন প্রকার কোলেস্টেরল এর মাত্রা স্বাভাবিক রাখা প্রয়োজন এবং এক্ষেত্রে মেথি অত্যন্ত কার্যকরী।
⇒ এলডিএল কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের জন্য উপকারী মনে করা হয়। মেথি লিভারে এলডিএল রিসেপ্টর গুলো বাড়িয়ে দেয়, ফলে এলডিএল শোষণের মাত্রা বেড়ে যায় তবে নিয়ন্ত্রিভাবে। ⇒ তবে অন্যান্য কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে মেথি সাহায্য করে। মেথির বীজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। ⇒ এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। ফলে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। একটি পরীক্ষায় প্রমাণিত যে মেথি ১০-১৬ শতাংশ পর্যন্ত কোলেস্টেরল কমায়। ⇒ অর্থাৎ ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ানো এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর মাধ্যমে মেথি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে দেহকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ⇒ এছাড়াও মেথিতে যে ফাইবার আছে তা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দেয়। এসকল ব্যাকটেরিয়া কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
৭. হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দীর্ঘজীবনের আশা সঞ্চার করে
আমরা জানি মেথি খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। হৃদরোগের অন্যতম কারণ হিসেবে কোলেস্টেরলকে দায়ী করা হয়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে মেথির গুরুত্ব অপরিসীম।
এছাড়াও মেথিতে গ্যালাক্টোমানান এবং পটাশিয়াম রয়েছে যা রক্ত সঞ্চালনে সহযোগিতা করে। মেথিতে ভিটামিন এবং মিনারেল বেশি থাকায় তা হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৮. বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে
মেথিতে উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণে লিনোলেনিক এবং লিনোলিক এসিড থাকে যা দেহের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আর্থ্রাইটিস রোগের ক্ষেত্রেও এটি একটি উল্লেখযোগ্য সমাধান।
গবেষকরা ইস্ট্রোজেন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির ক্ষেত্রেও মেথির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য বলে মনে করেন।
এভাবে বাতের যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
৯. শরীরের ফোলা ভাব নিয়ন্ত্রণে
বিভিন্ন কারণে অনেক সময় আমাদের শরীর ফুলে যায় কিংবা মাংশপেশিতে ব্যথা হয়৷
সেসকল ক্ষেত্রে মেথি দানা অর্থাৎ মেথি বীজ কাপড়ে বেঁধে প্রদাহের স্থানে স্পর্শ করিয়ে রাখলে অত্যন্ত উপকারী হয়।
১০. মাসিকের ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়
ঋতুস্রাবের সময়গুলোতে একটা মেয়ে কী পরিমাণ মানসিক এবং শারীরিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যায় তা শুধু সে-ই জানে। তবে এই অসহনীয় ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব খুব সাধারণ একটি উপাদান থেকে। আর তা হলো মেথি।
ইউটেরাস বা জরায়ুতে মৃত কোষগুলো যখন বাড়তে শুরু করে তখনই এই নিদারুণ ব্যথার সৃষ্টি হয়। পিরিয়ডের সময়ে মেথি খেলে এই ব্যথা দূরীভূত হয় এবং আরাম অনুভূত হয়।
১১. মাতৃদুগ্ধ বাড়াতে সাহায্য করে মেথি
একটি শিশুর বিকাশ সম্পূর্ণ হয় যখন সে পরিপূর্ণভাবে তার মায়ের দুধ পায়। কিন্তু আজকাল বিভিন্ন সমস্যার কারণে অনেক মা যথেষ্ট পরিমাণ দুগ্ধ উৎপাদনে সক্ষম নন। সেই মায়েদের জন্য একটি উৎকৃষ্ট পথ্য হলো মেথি।
বেশ কিছু প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে মায়েরা খাদ্য হিসেবে কিংবা পরিপূরক হিসেবে মেথি গ্রহণ করে তারা তাদের সন্তাদের জন্য পরিপূর্ণ দুগ্ধ উৎপাদনে সক্ষম।
তবে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক।
১২. টেস্টোস্টেরন লেভেল বৃদ্ধি করে
পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণ প্রয়োজন। নিয়মিত মেথি খাওয়ার ফলে মস্তিষ্ক থেকে এই টেস্টোস্টেরন হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়।
১৩. রোগ প্রতিকারক মেথি
বেরিবেরি, যক্ষ্মা, হাঁচি-কাশি, মুখে ঘা, ব্রংকাইটিস, যেকোনো ধরণের ইনফেকশন, জ্বর, হার্নিয়া, পারকিনসন ডিজিজ, টাক পড়া প্রভৃতি রোগের সহজ সমাধান হলো মেথি।
এসকল রোগের ক্ষেত্রে একমাত্র ঔষধ মেথি নয়। কিন্তু অন্যান্য ওষুধের কার্যকারিতা আরও অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয় মেথি।
১৪. এসিডিটি থেকে মুক্তিদান
গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটি এই বিষয়টার সাথে কম বেশি আমরা সবাই পরিচিত। একটু ঝাল মশলাযুক্ত খাবার খেলেই যেনো বিপদ। আর এই বিপদের সহজ সমাধান হতে পারে।
মেথির পুষ্টিগুণের কারণে খাবার হজম প্রক্রিয়া খুব সহজেই সমাধান হয়। খাদ্য অন্ত্রে শোষিত হয়। ফলস্বরূপ এসিডিটির জ্বালাপোড়া ভাবটা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
১৫. ওভারি বা ডিম্বাশয়ের সিস্ট এর আকৃতি হ্রাস করে
মেথির এই উপকারিতাটি নিয়ে অনেকের মনেই সংশয় রয়েছে।
এ ব্যাপারে আরও গবেষণা চলছে তবে বর্তমানে গবেষকগণ এই সিদ্ধান্তটুকু পর্যন্ত উপনীত হতে পেরেছেন যে ডিম্বাশয়ের সিস্ট চিকিৎসায় অনেকাংশেই কার্যকরী এই মেথি।
সিস্ট হলো এক প্রকার টিউমার কোষের প্রথম পর্যায় যা ক্রমাগত ক্যান্সারে রূপ নেয়।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে মেথি সিস্টের আকার ক্রমাগত কমিয়ে আনে এবং ঋতুস্রাব প্রক্রিয়া সঠিক ভাবে চলতে সাহায্য করে।
১৬. আমাশয় প্রতিরোধী
আমাশয় জ্বর ঠান্ডা কাশির মতই একটি সাধারণ রোগ। অনেক সময়ই এটা নিয়ে যথেষ্ট ভোগান্তি হয় আমাদের। তাই মেথির ব্যবহারের মাধ্যমে এই বিব্রতকর এবং কষ্টদায়ক পরিস্থিতি থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি।
মেথি গুঁড়ো ঘোলের সাথে মিশিয়ে খেলে এক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যায়। আবার দইয়ের সাথে মেথি মিশিয়ে খেলে রক্ত আমাশয়ের প্রতিকার হয়।
১৭. সন্তান জন্মদান সহজকরণ
সন্তান জন্মদানের সময় গর্ভবতী মায়ের জরায়ুর সংকোচন-প্রসারণ সহজ করার মাধ্যমে সন্তান জন্মদান সহজতর করে৷ তবে অতিরিক্ত গ্রহণে গর্ভপাত বা অপরিণত শিশুর জন্মদানের মত সমস্যা হতে পারে।
তাই এক্ষেত্রে প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক।
মেথিতে উপস্থিত সাইটো ইস্ট্রোজেন প্রোলাকটিন নামক এক প্রকারের হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধি ঘটায়।
১৮. কৃমি রোধ
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে বা মেথি সারারাত ভিজিয়ে রেখে সেই পানি খেলে দেহের ভেতরের বিভিন্ন রোগজীবাণু এবং কৃমি ধ্বংস হয়ে যায়।
এতক্ষণ আমরা বিভিন্ন রোগ কিংবা শরীরের অভ্যন্তরীণ অংশে মেথির উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম।
মেথির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
মেথি স্বাদ এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। কিন্তু অতিরিক্ত এবং অপব্যবহার করা উচিৎ নয়। কারণ এর ফলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে বা কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে।
মেথির অপকারিতা/পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
মেথি আমাদের জন্য অনেক উপকারী অবশ্যই। তবে এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে।
-মেথির নিয়মিত ব্যবহার একটানা ৬ মাসের বেশি করা ঠিক নয়। এতে গ্যাস্ট্রিক, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যদিও মেথি গ্যাস্ট্রিকে উপকারী। -গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মেথি গ্রহণ করলে তা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। -মেথি ব্লাড সুগারের পরিমাণ কমায়,তবে হঠাৎ তা অতিরিক্ত কমিয়ে ফেলতে পারে যা দেহের জন্য ক্ষতিকর হওয়ার সম্ভাবনা রাখে।
মেথি খাওয়ার নিয়ম
তাহলে চলুন এবার জেনে নেয়া যাক মেথি খাওয়া নিয়মগুলো।
১. মেথি ভেজানো তরল
মেথি সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে সেই তরল পান করা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস, মেদ কমানো, ওজন কমানো, এসিডিটি হ্রাস, পেট পরিষ্কার ইত্যাদি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উপকার পাওয়া সম্ভব
২. মেথি এবং মধুর মিশ্রণ
মেথি এবং মধুর গুণাগুণ বর্ণনা করা সত্যিই দুষ্কর।
মেথি বীজ গুঁড়ো করে গরম পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে পরে তা ঠান্ডা করতে হবে। এভাবে অন্তত ৩ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। তারপর সেই পানি ছেঁকে নিয়ে তাতে মধ্য এবং লেবুর রস মেশাতে হবে। প্রতিদিন সকালে এই মেথি চা গ্রহণে যেমন মেদ কমবে, তেমনি শরীরের গঠন আকর্ষণীয় হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও এর উল্লেখযোগ্য অবদান দেখা যায় এছাড়া অন্যান্য উপকার তো আছেই।
৩. মেথি চা
সামান্য পানি যোগ করে মেথি বীজ পেষ্ট করতে হবে।
এরপর চুলায় গরম পানি করে তাতে মেথি পেষ্ট, সাথে কিছু ভেষজ মশলা যেমন দারুচিনি, আদা, লবঙ্গ, এলাচ, প্রভৃতি দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে মেথি চা প্রস্তুত করা হয়।
খালি পেটে মেথি চা পান করার মাধ্যমে অত্যাধিক পরিমাণে উপকার পাওয়া সম্ভব।
৪. মেথি ভাজা
মেথি গ্রহণের একটি অন্যতম সহজ উপায় একে বলা চলে। কারণ এখানে ভিজিয়ে রাখার কোনো দরকার নেই।
একটি কড়াইয়ে কম আঁচে মেথি ভাজতে হবে যেনো তা পুড়ে না যায়। এরপর এই ভাজা মেথি সামান্য গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেতে হবে অথবা এই মেথি তরকারির সাথে ব্যবহার করা যায়। মেথি ভেজে গুঁড়া করে নিলে সেই গুঁড়া মেথি ভাজা খাওয়ার উপকারিতাও অনেক।
অনেকে এই মেথি বীজ চিবিয়েও খায়। তবে এর স্বাদ তিতা হওয়ায় চিবিয়ে খাওয়ার পন্থাটি বেশিরভাগ মানুষই এড়িয়ে চলেন।
৫. অঙ্কুরিত মেথির বীজ
অঙ্কুরিত মেথি বীজ অত্যন্ত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ একটি খাদ্য।
উচ্চ মাত্রার ক্যারোটিনয়েড, পটাশিয়াম, জিংক, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, বি, সি ও ই, অ্যামিনো এসিড প্রভৃতি দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই যদি কেউ অঙ্কুরিত মেথি বীজ খেতে চান তবে তা অতীব উপকারী।
একটি বাটিতে মেথি বীজ নিতে হবে। একটি পাতলা কাপড় পানিতে ভিজিয়ে এই বীজের উপর রাখতে হবে এবং তার উপর ভারি কিছু দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে তিন রাত।
এতে মেথি বীজ অঙ্কুরিত হয়ে যাবে এবং তা আপনি খেতে পারেন।
উপর্যুক্ত যেকোনো পন্থায় যেটা আপনার জন্য উপযোগী বা সহজ উপায়ে আপনি তৈরি করতে পারেন সেই উপায় অনুসরণ করবেন। তবে কিছু কথা এখনো বাকি।
মেথি খাওয়ার উপায় সমূহের পাশাপাশি রূপচর্চার ক্ষেত্রে মেথি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটাও তো জেনে রাখা প্রয়োজন। কেননা খাওয়ার পাশাপাশি মেথি চুল এবং ত্বকে বাহ্যিক প্রয়োগের মাধ্যমে আপনি সুস্থতার পাশাপাশি আকর্ষণীয় এবং স্বাস্থ্যকর ত্বক পেতে পারেন।
চুলের যত্নে মেথি
⇒ চুল পড়া রোধ
চুল পড়া সমস্যার সহজ উপায় হিসেবে মেথির নাম অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। মেথিতে বিদ্যমান ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি চুলের থাকা লেসিথিন নামক পদার্থকে রক্ষা করে চুল পড়া সমস্যার সমাধান করে দেয়।
⇒ চুলের বৃদ্ধি
মেথি নিয়মিত মাথায় ব্যবহার মাধ্যমে চুল পড়া সমস্যার প্রতিকার হয়।
আয়রন, প্রোটিন,পটাশিয়াম ও ভিটামিনসহ আরও পুষ্টিকর উপাদান থাকায় মেথির হেয়ার প্যাক ব্যবহারে একদিকে যেমন চুলের বৃদ্ধি হবে অন্যদিকে চুল পড়া রোধ হয় দারুণভাবে।
খুশকি সমস্যারটি আমাদের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর এবং চুলের জন্য হানিকারকও বটে। খুশকির জন্য চুল পড়া আরও ত্বরান্বিত হয়।
⇒ খুশকি প্রতিরোধ
মেথি পেস্ট গোড়া থেকে চুলকে শক্ত করে এই খুশকি প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
⇒ চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
রুক্ষ শুষ্ক চুল আমাদের কারই কাম্য নয়। আমাদের চুলের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধির জন্য জেলাটিন নামক একটি পদার্থের প্রয়োজন হয়। মেথির ভেতরে প্রাকৃতিক ভাবে এই পদার্থ থাকে। ফলে চুলের চাকচিক্য বৃদ্ধি পায়।
⇒ চুলের অকালপক্বতা রোধ
অল্প বয়সেই চুল পেকে বিড়ম্বনার সম্মুখীন হচ্ছেন? বিড়ম্বনা থেকে বাঁচতে বিভিন্ন কালারিং এজেন্ট এর শরণাপন্ন হতে হচ্ছে?
কিন্তু রাসায়নিক বস্তু আমাদের চুলের জন্য যে ক্ষতিকর তা তো আমরা সবাই জানি। তাই উপায় হিসেবে কালার নয়, বেছে নিন মেথি। মেথি দানার গুঁড়োতে পাওয়া মেলানিন চুলের অকালপক্বতা রোধ করতে সহায়তা করবে।
মেথি কীভাবে মাথায় ব্যবহার করবেন-
⇒ উপায়-১ঃ মেথি তেল
উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নারিকেল তেল নিয়ে তাতে কিছুটা মেথি নিন। এবার এই মিশ্রণটি কিছুক্ষণ উত্তাপে রাখুন। মেথির দানা লাল না হওয়া পর্যন্ত ফোটাতে থাকুন।
এবার নামিয়ে মেথির দানা চিপে তা থেকে তরল বের করে নিয়ে মেথির তেল প্রস্তুত করুন।
রাতে কিংবা গোসলের এক ঘণ্টা আগে চুলে লাগিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। চুল পড়ার সমস্যা থাকলে সপ্তাহে তিনদিন এই তেল ব্যবহার করুন।
⇒ উপায়-২ঃ মেথি এবং টক দই
খুশকি প্রতিরোধে মেথি এবং টক দইয়ের মিশ্রণ অনেক বেশি উপকারী। ১ কাপ পানিতে ২ টেবিল চামচ মেথি বীজ ভিজিয়ে সারারাত রেখে দিন।
এরপরে সেই মেথি বেটে পেস্ট বানিয়ে মাথায় লাগালে খুশকি সমস্যায় দারুণ উপকার পাওয়া সম্ভব।
আপনার খুশকির সমস্যা যদি অতিরিক্ত হয় তবে পানির পরিবর্তে ৩-৪ টেবিল চামচ টকদইয়ে মেথি ভিজিয়ে রাখুন সারারাত। এবং পরে তা ব্লেন্ড করে মাথায় লাগিয়ে ১ ঘণ্টার মত রেখে ধুয়ে ফেলুন। খুশকি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
⇒ উপায়-৩ঃ নারিকেলের দুধ এবং মেথি
আমাদের চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধিতে নারিকেলের দুধ কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। তার সাথে মেথি যোগ করলে সে ফলাফল যে কতটা উল্লেখযোগ্য হবে তা বলা বাহুল্য।
মেথি সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরদিন বেটে নিন। এই বাটা মেথি ১ চামচ নারিকেলের দুধের সাথে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ভালোভাবে মাসাজ করে দিয়ে দিন এবং ১ ঘণ্টা রেখে ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
⇒ উপায়-৪ঃ মেথি এবং ভিনেগার
মেথি গুঁড়ার সাথে পরিমাণমত ভিনেগার মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। চুলের গোড়ায় মিশ্রণটি লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং তারপরে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
⇒ উপায়-৫ঃ মেথি, আমলকির গুঁড়া এবং মধু
মধু আমাদের চুলের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধিতে অনেক উপকারী। চুলের গোড়া শক্ত করতে আমলকি গুঁড়া অনন্য।
মেথি সারারাত ভিজিতে রেখে সকালে বেটে নিন, এরপর আমলকি গুঁড়া এবং পরিমাণমত মধুর সাথে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে চুলের গোড়ায় ভালোভাবে মাসাজ করে দিয়ে দিন।
১ ঘণ্টার মত রেখে মিশ্রণটি শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
⇒ উপায়-৬ঃ ডিম, মেথি এবং অলিভ ওয়েলের জাদু
মেথি সারারাত ভিজিয়ে রেখে বেটে নিন। এরপর এর সাথে ডিমের সাদা অংশ এবং ১ চামচ অলিভ ওয়েল মিশিয়ে নিন।
ডিমের কুসুম পরিহার করাই শ্রেয় কেননা তা চুলকে রুক্ষ করে৷ এই মিশ্রণটি ৪০ মিনিটের মত মাথায় রেখে ধুয়ে ফেলুন।
⇒ উপায়-৭ঃ মেথি এবং কালোজিরা
মেথি এবং কালোজিরা চুলের জন্য অনেক উপকারী। কালোজিরা এবং সারারাত ভিজিয়ে রাখা মেথি একসাথে বেটে চুলে আলতোভাবে লাগিয়ে নিন।
আপনার চুল স্বাস্থ্যজ্জ্বল হবে এবং চুল পড়া কমাতে এটি অনেক উপকারী।
বি.দ্র.- একটি ব্যাপার অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার অবশ্যই করতে হবে।
কন্ডিশনার না থাকলে আমার ব্যবহার্য তেলটি খুবই হালকা পরিমাণ চুলের দৈর্ঘ্য বরাবর লাগিয়ে নিতে হবে। এতে চুলের রুক্ষভাবটা কেটে যাবে।
ত্বকের পরিচর্যায় মেথি
চুলের ক্ষেত্রে মেথির গুণাগুণ আমরা দেখলাম। কিন্তু ত্বকের ক্ষেত্রেও এর অবদান অপরিহার্য।
১. ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি
মেথি ত্বকের ডেড সেলগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি পায়। ত্বকের লাবণ্য ফিরে আসে। ত্বক প্রাকৃতিকভাবে অত্যন্ত উজ্জ্বল দেখায়।
২. ব্রণের দাগ দূর করে
মেথিতে উচ্চ মাত্রার এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে। যার ফলে মুখে ব্রণের দাগ পড়লে নিয়মিত মেথির পেস্ট ব্যবহার করলে দাগ দূরীভূত হয় এবং ত্বক স্বাস্থ্যকর হয়।
৩. বয়সের বলীরেখা দূর করে
আজকাল আমরা নিয়মিত বিভিন্ন এন্টি এজিং ক্রিম ব্যবহার করে থাকি।
কিন্তু নিয়মিত রাসায়নিক সামগ্রী ব্যবহারে ত্বকে সাময়িক ঔজ্জ্বল্য আসলেও বা সাময়িক ভাবে ত্বকে বয়সের ছাপ না পড়লেও পরবর্তীতে এর খারাপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কিন্তু মেথির পেস্ট ব্যবহারে এমন কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং বয়সের বলীরেখা আস্তে আস্তে দূর হয়ে যায় এবং ত্বকের টান টান ভাব বজায় থাকে। এটি মূলত ফ্রি রেডিকেলস দূর করে যা বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
৪. ত্বক পরিষ্কারক হিসেবে
মেথির পেস্ট যেমন ত্বকের জন্য উপকারী,তেমনি ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করতে এর কোনো জুড়ি নেই। মেথি যে পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয় সেই পানির ব্যবহারেও ত্বক পরিষ্কার হয়ে ওঠে।
৫. ময়শ্চারাইজার হিসেবে
যাদের ত্বক অনেক রুক্ষ এবং শুষ্ক তাদের জন্য মেথির কোনো বিকল্প নেই। মেথি ত্বকের শুষ্কতা দূর করে ত্বকে নতুন প্রাণ এনে দেয়। ত্বকের লাবণ্য ফিরিয়ে আনে।
৬. ফেসিয়াল টোনার মেথি
ফেসিয়াল টোনার হিসেবেও মেথি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে৷ এক্ষেত্রে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি স্প্রে করলে অত্যন্ত কার্যকরী হয়ে থাকে।
ত্বকে মেথি ব্যবহারের উপায়
বিভিন্ন উপায়ে মেথির ব্যবহার করা যায়।
⇒ উপায় ১ঃ মেথি এবং টকদই
মেথি সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে তা বেটে নিতে হবে। এরপর তার সাথে ১ চামচ টক দই মিশিয়ে আলতোভাবে মুখে লাগিয়ে নিতে হবে। ২০ মিনিট রেখে তা ধুয়ে ফেলতে হবে।
⇒ উপায় ২ঃ মেথি এবং দুধ
১ টেবিল চামচ মেথির শুকনো নির্যাসের সাথে কিছুটা দুধ মিশিয়ে একটি থকথকে পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে।
এরপর এই ফেসিয়াল প্যাকটি ২০ মিনিটের মত মুখে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধিতে এটি অত্যন্ত উপযোগী।
⇒ উপায় ৩ঃ মেথি পেস্ট
ত্বকের রুক্ষ খসখসে ভাব দূর করতে মেথি পেস্ট অত্যন্ত উপকারী। মেথি বেটে বেশ কিছুক্ষণ পেস্টটি পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর তা রুক্ষ স্থানগুলোতে আলতোভাবে মাসাজ করতে হবে।
⇒উপায় ৪ঃ মেথি এবং মধু
ত্বকের ময়শ্চারাইজার হিসেবে মেথি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলতে বাকি রাখে না। সারারাত ভিজিয়ে রেখে বেটে নেয়া মেথি পেস্ট এবং খানিকটা মধু মিশিয়ে আপনাত ফেসপ্যাক তৈরি করে নিন। এবার ঘরোয়া পদ্ধতিতেই পান সুন্দর মসৃণ ত্বক।
⇒উপায় ৫ঃ মেথির নির্যাস
প্রথমে মেথি বীজ ভালোভাবে গরম পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর তা ঠান্ডা করতে দিতে হবে।
ঠান্ডা করার পর একটি পাতলা কাপড়ের সাহায্যে মুখে ব্রণের যেসকল দাগ আছে সেসব জায়গায় আলতোভাবে ঘসে নিতে হবে। ব্যস এটুকুই।
তবে এখানে আরেকটি বিষয় রয়েছে!!
মেথি আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। পথ্য হিসেবেই এটি বেশি সমাদৃত। তাই আমাদের উচিৎ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট মাত্রায় মেথি গ্রহণ করা যেনো তা আমাদের দেহের জন্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
References:
https://www.healthline.com/nutrition/fenugreek
https://www.webmd.com/vitamins/ai/ingredientmono-733/fenugreek
https://www.health.com/nutrition/fenugreek-benefits
https://www.nutritionvalue.org/Spices%2C_fenugreek_seed_nutritional_value.html