ই-কমার্সঃ ই-কমার্স বিজনেস প্ল্যান ও ই কমার্সের আদ্যোপান্ত

ই-কমার্স বিজনেস প্ল্যান ও ই কমার্সের আদ্যোপান্ত

ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে যে ব্যবসা করা হয় সেটিই ই-কমার্স। বাংলাদেশে ই-কমার্স খুবই সম্ভাবনাময়। তাই আজকে ই-কমার্সঃ ই-কমার্স বিজনেস প্ল্যান ও ই কমার্সের আদ্যোপান্ত নিয়ে আলোচনা করব। 

ই কমার্স কি? (What is e commerce) 

ইলেকট্রনিক কমার্স বা ই-কমার্স (কখনও কখনও ই-কমার্স হিসাবে লেখা হয়) হল একটি ব্যবসায়িক মডেল যা কোম্পানি এবং কাস্টমারকে ইন্টারনেটে জিনিস কিনতে এবং বিক্রি করতে দেয়। 

কিভাবে ই-কমার্স ব্যবসা করব? 

নানাভাবে করা যায়। 

  • ফেসবুক পেজ খুলে সেখানে কেনাবেচা করা যায়। 
  • একটি ওয়েবসাইট খুলে সেখানেও ব্যবসা করা যায়। 
  • ইন্সটাগ্রাম বা অন্যান্য যেকোন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ই-কমার্স স্টোর ফ্রিতেই খুলা যায় ও কেনাবেচা করা যায়। 

ই-কমার্স কয় প্রকার? (Types of E commerce)

ই-কমার্স মূলত ৪ ভাবে কাজ করে। 

এক ব্যবসা থেকে আরেক ব্যবসায় বাণিজ্য (Business to business)

ভোক্তা বা কাস্টমার থেকে অন্য ব্যবসায়/ব্যবসায়ীদের সাথে বাণিজ্য (Consumer to business)

একজন কাস্টমার থেকে আরেকজন কাস্টমারের কাছে কেনা-বেচা (Consumer to consumer)

একটি ব্যবসা বা ব্যবসায়ী থেকে কাস্টমারের সাথে বাণিজ্য (Business to consumer)

ই-কমার্সের সুবিধা কি? 

ই-কমার্সের সুবিধা অনেক বেশি। প্রচলিত দোকানে বসে ব্যবসা না করে ঘরে বসেই কাস্টমারের কাছে পণ্য পৌছে দেয়াটাই সবচেয়ে বড় সুবিধা। 

এছাড়াও আরো যে সুবিধাগুলো আছেঃ 

  • খরচ কমঃ একটা ফিজিকাল শপ দিতে হলে, সেই দোকানের ভাড়া, সিকিউরিটি মানি, বিদ্যুৎ বিলসহ নানা খরচ থাকে। কিন্তু ই-কমার্সের জন্য এগুলোর দরকার পড়েনা। ঘরে বসেই অনলাইন স্টোর খুলা যায়। 
  • যেকোন সময় কাজ করা যায়ঃ ই-কমার্স শপে একজন কাস্টমার চাইলে রাত ১২টায় ও পণ্য অর্ডার করতে পারে। যেটা দোকানে এমনিতে সম্ভব নয়। 
  • ঘরে বসেই কাজ করা যায়ঃ ই-কমার্সে কাজ করতে হলে বাইরে যাওয়ার দরকার পড়েনা। নিজের ঘরে বসেই কাজ করতে পারবেন। 

সর্বোপরি কম খরচে সহজেই একটি ই-কমার্স শপ খুলতে পারবেন। 

ই-কমার্স বিজনেস প্ল্যান

প্রথমেই বুঝতে হবে বিজনেস প্ল্যান বা ব্যবসা পরিকল্পনা কি? 

বিজনেস প্ল্যান হল, একটা বিজনেস বা ব্যবসা শুরু করার জন্য যে যে জিনিসের দরকার হয়, সেসব জিনিসের বিস্তারিত পরিকল্পনা করা। 

কিভাবে ই-কমার্স বিজনেস প্ল্যান করবেন?/কিভাবে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করবেন? 

১। প্রথমেই কোন পণ্য নিয়ে ব্যবসা করবেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আপনি কি মেয়েদের কাপড় নিয়ে ব্যবসা করবেন? 

নাকি চ-পাতা নিয়ে ব্যবসা করবেন? 

নাকি মোবাইল গ্যাজেট নিয়ে ব্যবসা করবেন? 

২। পণ্য তো সিলেক্ট করলেন এখন ডেলিভারি কিভাবে দিবেন, সেটা ভাবতে হবে। 

আপনি কি নিজে ডেলিভারি দিবেন? 

নাকি কোন ডেলিভারি ম্যান রাখবেন? 

নাকি কুরিয়ারের মাধ্যমে ডেলিভারি করবেন? 

৩। এখন পণ্য কোথায় বিক্রি করবেন? পণ্য বিক্রি করার আগে কাস্টমারকে তো দেখাতে হবে। 

এর জন্য আপনি ফেসবুকে পেজ খুলতে পারেন। পেজে পণ্যের নাম, ছবি পোস্ট করতে পারেন। 

অথবা আপনি চাইলে ওয়েবসাইট বানাতে পারেন। সেখানে সব পণ্যের লিস্ট থাকবে। কাস্টমাররা ওয়েবসাইট থেকে পছন্দমত অর্ডার করতে পারবে। 

৪। আপনার ই-কমার্স ব্যবসার মার্কেটিং কিভাবে করবেন? সব পণ্যের একটা মার্কেটিং লাগে। 

এর জন্য আপনি ফেসবুক পেজ বুস্ট করতে পারেন। এতে অবশ্য কিছু টাকা খরচ করা লাগবে। তবে আপনার ব্যবসা সম্পর্কে মানুষ জানবে। 

আপনার ই-কমার্স সাইট থাকলে, গুগলে এড দিতে পারেন। গুগল আপনার পণ্য সম্পর্কিত কোন সার্চে আপনার ওয়েবসাইটকে উপরে দেখাবে। 

যেমনঃ ধরেন আপনি “ছেলেদের ঘড়ি” নিয়ে কাজ করেন। এখন আপনার একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট আছে ঘড়ি নিয়ে। 

এখন গুগলে যদি কোন কাস্টমার সার্চ করে, “best men watch” অথবা “ছেলেদের সেরা ঘড়ি” তাহলে গুগল সেই সার্চ রেজাল্টে আপনার ওয়েবসাইটকে সবার প্রথমে দেখাবে। 

এভাবে আপনার মার্কেটিং হবে। 

৫। সবশেষে আপনাকে ভালো কাস্টমার সার্ভিস দিতে হবে। কারণ কাস্টমার একবার আপনার কাছ থেকে কিনে অসন্তুষ্ট হলে আর ফিরে আসবে না। তাই আজীবন ভালো সার্ভিস দিয়ে যেতে হবে। 

এই ই-কমার্স বিজনেস প্ল্যান অনুসরণ করলেই আপনার ব্যবসা দাঁড়িয়ে যাবে। 

তাই এই ৫টি নিয়ম মেনে ব্যবসা শুরু করবেন। 

বাংলাদেশের সেরা ই-কমার্স ব্যবসা কোনটি? 

এতক্ষণ তো ই-কমার্স নিয়ে অনেক বকাবকি করলাম। এখন কিছু সেরা ই-কমার্স ব্যবসার উদাহরণ দিয়ে দিচ্ছি। 

বাংলাদেশের ৫টি সেরা ই-কমার্স ব্যবসা 

১। অর্গানিক ফুডঃ খাবার মানুষের প্রথম চাহিদা। বর্তমানে ভেজাল খাবার খেয়ে মানুষ অতিষ্ঠ। তাই আপনি চাইলে ভেজালহীন খাবার বিক্রি করতে পারেন। 

পণ্যের তালিকাঃ 

  • ঘানি ভাঙা তেল।
  • ফরমালিন মুক্ত আম।
  • গরুর খাঁটি দুধ। 

এছাড়াও আপনার এলাকায় অন্য কিছু থাকলে সেগুলো। 

২। কাপড়ের ব্যবসাঃ আমরা সবাই একটা সময় পরপর কাপড় কিনি। তাই সারাবছরই কাপড়ের চাহিদা থাকে। সহজেই ঢাকার গার্মেন্টস থেকে অল্প দামে কাপড় কিনে বিক্রি করা যায়। 

পণ্যের তালিকাঃ 

  • ছেলেদের টি-শার্ট। 
  • মেয়েদের ড্রেস। (পাখি ড্রেস!) 
  • পাঞ্জাবি, শাড়ি। 

৩। মোবাইল গ্যাজেটঃ আজকাল সবার হাতেই স্মার্টফোন। স্মার্টফোনের সাথে সবার দরকার পড়ে স্মার্ট গ্যাজেটের। ঢাকার মোতালিব প্লাজা থেকে কম দামে এগুলো পেয়ে যাবেন। 

পণ্যের তালিকাঃ 

  • মোবাইল চার্জার।
  • স্মার্ট ওয়াচ।
  • হেডফোন সহ এডাপ্টার এবং আরো অনেক কিছুই আছে। এগুলো দিয়ে শুরু করতে পারেন। 

৪। কম্পিউটার ও ল্যাপটপঃ বাংলাদেশে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ কম্পিউটার কিনছে। আপনি নিজের এলাকায় কম্পিউটারের অর্ডার নিন। পরে ঢাকা থেকে আনিয়ে নিন কম দামে। 

আপনি যদি ৫টি ল্যাপটপের অর্ডার পান, তাহলে ঢাকার বড় একটা শপের সাথে যোগাযোগ করবেন।

Global Brand এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এই প্রতিষ্ঠান সব ধরনের কম্পিউটার ডিস্ট্রিবিউট করে।

যোগাযোগের ঠিকানাঃ https://www.globalbrand.com.bd/contact-us/

অথবা অন্য আরেকটি ই-কমার্স শপ Tech Care এ যোগাযোগ করতে পারেন। পাইকারি দামেই আপনাকে সব ধরনের কম্পিউটার সরবরাহ করবে।

৫। অনলাইন গিফট শপঃ আমাদের দেশে জন্মদিন পালনের একটা হিড়িক আছে। এছাড়া বিবাহ বার্ষিকী ও অন্যান্য অনুষ্ঠান তো আছেই। সুন্দর সুন্দর গিফট কালেকশন করে সেগুলো উচ্চ মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন। 

পণ্যের তালিকাঃ 

  • বাচ্চাদের খেলনা। 
  • ডায়রি। 
  • কলম।
  • প্রিন্টেড নাম, ডায়রি, মগ, কলম। 

এই ব্যবসাগুলো বর্তমানে খুবই ভালো করছে। তাই আপনিও দেরী না করে এগুলোর মধ্যে থেকে একটি শুরু করে দিন। 

বাংলাদেশের ই-কমার্স ব্যবসার নীতিমালা কি কি? 

বাংলাদেশ সরকার ই-কমার্স ব্যবসার কিছু নিয়ম কানুন দিয়েছে। এই নিয়ম কানুন মেনেই আপনাকে ব্যবসা করতে হবে। 

নীতিমালা গুলো পিডিএফ আকারে পেতে এই লিংকে ক্লিক করুন। 

নীতিমালাটি ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। 

ওয়েবসাইট লিংকঃ http://e-cab.net/ 

পরিশ্রম এবং ভালো সার্ভিস দিলে কাস্টমার আপনাকে মূল্যায়ন করবে। মনে রাখবেন একদিনে কেউ বড়লোক হয়ে যায়নি। সবাই পরিশ্রম করে উপরে উঠেছে। আমি আপনাকে ব্যবসার পথ বলে দিতে পারব। 

কিভাবে ব্যবসা করলে লাভবান হবেন, সেটা বলে দিতে পারব। 

কোন পণ্য নিয়ে ব্যবসা করবেন তা বলে দিতে পারব। 

কোন পণ্য কোথায় পাইকারি দামে কিনতে পারবেন সেটাও বলে দিতে পারব। 

তবে দিনশেষে ব্যবসাটা আপনাকেই করতে হবে। এর জন্য কঠোর পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। 

কেউ যদি বলে ১০ দিনে বিশ হাজার টাকা ইনকাম করা যায়। অমুক অ্যাপ ব্যবহার করলে ১০০ টাকা, তমুক ওয়েবসাইটে ফ্রিতে টাকা দিচ্ছে। 

তাহলে ধরে নিবেন ভুয়া। 

কেউ বসে নেই যে আপনি একটা এপ ইন্সটল দিলেন আর সে আপনাকে হাজার টাকা দিয়ে দিল! কেউ এত বোকা না। 

তাই এগুলোতে কান না দিয়ে, নিজের মত কাজ করে যান। 

একটি লক্ষ্য নির্দিষ্ট করুন। সেই লক্ষ্যে কয়েকমাস কাজ করুন। তারপরে দেখুন আপনার অগ্রগতি কতদূর। 

যদি কোথাও ভূল করেন, তাহলে সেটা শোধরান। ভয়ের কিছু নাই। 

কিই-বা হবে? 

হয়তো ব্যবসায় লস খাবেন। লস খেলেও অনেক কিছু শিখতে পারবেন। 

এই শেখা আপনার সারাটা জীবন কাজে দিবে। আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। 

ই-কমার্স নিয়ে বিস্তারিত জানতে নিচের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ- https://mincom.gov.bd/ 

ই-কমার্সঃ ই-কমার্স বিজনেস প্ল্যান ও ই কমার্সের আদ্যোপান্ত নিয়ে এ পর্যন্তই আজকের আলোচনা।