
নাশপাতি! আমাদের অনেকেরই পছন্দের ফলের তালিকায় এই নামটি হয়ত বিশেষ স্থান দখল করে আছে। তবে সেটা স্বাদের স্বার্থ অপেক্ষা দেহের পুষ্টি চাহিদায় বেশি উল্লেখ্য। আমরা বিভিন্ন সময়ই বিভিন্ন মৌসুমী কিংবা বিদেশী ফল খেয়ে থাকি দেহের পুষ্টির চাহিদা রক্ষায়।তবে বাকি সব ফলের মধ্যে নাশপাতির উপকারিতা কিন্তু মোটেও অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়।
এই আর্টিকেলে যা যা পাবেনঃ 👉 নাশপাতি 👉 নাশপাতির প্রকারভেদ 👉 নাশপাতির পুষ্টিগুণ 👉 নাশপাতির উপকারিতা 👉 নাশপাতি খাওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম 👉 নাশপাতির বিভিন্ন রেসিপি 👉 নাশপাতির সহজলভ্যতা 👉 নাশপাতি কেনার সময় লক্ষণীয় দিক 👉 নাশপাতির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
তাহলে চলুন জেনে নেই এর পুষ্টিমাত্রা এবং উপকারিতা সম্পর্কে যার জন্য এই ফলটি এত সমাদৃত।
নাশপাতি
নাতিশীতোষ্ণ এলাকার একটি লোভনীয় ফল নাশপাতি। নাশপাতির বৈজ্ঞানিক নাম – Pyrus communis. এর উৎসের কথা যদি বলতে হয় তবে চলে যেতে হবে চীনে। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এর উৎপাদন হচ্ছে।
বিশ্বে সর্বোচ্চ উৎপাদিত ফলগুলোর মধ্যে এটি পঞ্চম যার সিংহভাগ আসে চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলো থেকে।
Rosaceae পরিবারের এই ফলটির প্রায় ৩০ রকম প্রজাতি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। কিন্তু এর পুষ্টিগুণ যে কত বেশি সে সম্পর্কে অনেকেই হয়ত জানেন না।
নাশপাতির প্রকারভেদ
বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০০০ প্রকারের নাশপাতি উৎপাদিত হয়। এদের আকার, রঙ, স্বাদ, বাহ্যিক গঠন, ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যে যথেষ্ট ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।
কয়েক প্রকার নাশপাতি নিচে উল্লেখ করা হল-
- সেকেল
- স্টারক্রিমসন
- বারলেট
- রেড বারলেট
- বস্ক
- কোমিস
- ফোরেলে
- কনকর্ড, ইত্যাদি।
নাশপাতির পুষ্টিগুণ
১০০ গ্রাম নাশপাতিতে ২৩৯ কিলোজুল বা ৫৭ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া সম্ভব।
মনোমারিক যৌগ যেমন আরবুটিন, ওলিয়ানোলিক এসিড, আরসোলিক এসিড, ক্লোরোজেনিক এসিড, এপিক্যাটেচিন, রুটিন, ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে উপস্থিত এই নাশপাতিতে।
অন্যান্য ফলের তুলনায় এর যে পুষ্টিমান সর্বাধিক নজরকাড়া তা হলো এতে ফেনোলিক এসিডের উপস্থিতি।
নাশপাতিতে মিথাইলেটেড ফেনোলিক এসিড উপস্থিত এবং ৭০% ডিমিথাইলেটেড ফেনোলিক উপস্থিত যা অন্যান্য ফলের তুলনায় ২৩ শতাংশ কম। এটি ডিমিথাইলেটেড হয়ে সিরিনজিক এবং সিনাপিক এসিডে রূপান্তরিত হয়।
১০০ গ্রাম নাশপাতি থেকে কোন উপাদানটি কী পরিমাণে পাওয়া সম্ভব তা জেনে নিন নিচের ছক থেকে-
উপাদান | পরিমাণ |
কার্বোহাইড্রেট | ১৫.২৩ গ্রাম |
চিনি | ৯.৭৫ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.১৪ গ্রাম |
প্রোটিন | ০.৩৬ গ্রাম |
কোলিন | ৫.১ মিলিগ্রাম |
ফেনোলিক | ২৭–৪১ মিলিগ্রাম |
ফাইবার | ৩.১ গ্রাম |
ভিটামিন সি | ৪.৩ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন ই | ০.১২ মিলিগ্রাম |
থায়ামিন | ০.০১২ মিলিগ্রাম |
রিবোফ্লাভিন | ০.০২৬ মিলিগ্রাম |
নায়াসিন | ০.১৬১ মিলিগ্রাম |
প্যান্টোথেনিক এসিড | ০.০৪৯ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৬ | ০.০২৯ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৯ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ০.১৮ মিলিগ্রাম |
জিংক | ০.১০ মিলিগ্রাম |
কপার | ০.০৮২ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৭ মিলিগ্রাম |
ম্যাঙ্গানিজ | ০.০৪৮ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ১২ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ১১৬ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ১ মিলিগ্রাম |
জিংক | ০.১ মিলিগ্রাম |
পানি | ৮৪ গ্রাম |
ক্রিপ্টো জ্যান্থিন | ২ মাইক্রোগ্রাম |
লুটেইন– জিয়াজ্যান্থিন | ৪৫ মাইক্রোগ্রাম |
এই পুষ্টিমাত্রাকে যদি আমরা শতকরা হিসেবে জানতে চাই তাহলে নিচের ছকটি দেখে নিন-
উপাদান | শতকরা |
ফ্রুক্টোজ | ৪.৫% |
গ্লুকোজ | ৪.২% |
সুক্রোজ | ২.৫% |
সরবিটল | ২.৫% |
ম্যাগনেসিয়াম | ২% |
জিংক | ১% |
ম্যাংগানিজ | ২% |
পটাশিয়াম | ২% |
ফসফরাস | ২% |
কপার | ৯% |
ভিটামিন সি | ৫% |
ভিটামিন ই | ১% |
আরও পড়ুনঃ তরমুজের বিস্ময়কর ১০ টি উপকারিতা জেনে নিন।
নাশপাতির উপকারিতা
নাশপাতিতে ভিটামিন, কার্বোহাইড্রেট, মিনারেল, প্রভৃতি পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
১.ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে নাশপাতি
নাশপাতি উদ্বায়ী এবং এনজাইম সমৃদ্ধ একটি খাদ্য। এটি গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং টাইপ ২ ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এটি ডায়াবেটিস আছে এমন রোগীর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাধিক উপকারী কেননা এতে গ্লুকোজের পরিমাণ কম এবং সুক্রোজের পরিমাণ বেশি। সুক্রোজ দেহে শোষিত হতে ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়না। ফলে সহজেই খাদ্য শোষিত হয়।
⇒ নাশপাতির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স আনুমানিক 34It। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হলো এমন একটি সংখ্যা যা শর্করা কত দ্রুত গ্লুকোজে পরিণত হতে পারে সে ধারণা দেয়। ⇒ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়া মানে রক্তের গ্লুকোজের উপর খাবারের প্রভাব কম। এই সংখ্যা ৫৫ বা তার কম হলে সেই খাবারটি ডায়বেটিস রোগীর জন্য উপযোগী। ⇒ অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে নাশপাতি ডায়বেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ খাবার হতে পারে।
তাছাড়াও ডায়বেটিস রোগীরা অতি দ্রুত তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ে। ১০০ গ্রাম ওজনের একটি নাশপাতিতে প্রায় ৮৪ গ্রাম পানি থাকে। ফলে তৃষ্ণা পেটার পাশাপাশি শরীরের পুষ্টির যোগানও হয়।
২.ক্যান্সার প্রতিরোধী
নাশপাতির ভিতরে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এতে ভিটামিন – এ, ফ্ল্যাভিনয়েড এবং ভিটামিন- সি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে।
লাং, রেকটাম, ব্রেস্ট, প্রোস্টেট ও কোলন ক্যান্সার রোধে নাশপাতির জুড়ি নেই।
অ্যান্থোসায়ানিন এবং সিনামিক এসিডের উপস্থিতি ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সার বা কর্কট রোগ থেকে মুক্তি প্রদান করে।
৩.খাদ্য হজমে নাশপাতি
University of Minnesota এর প্রফেসর Dr. Zoanne Slavin একটি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জার্নাল Nutrition Today তে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন যেখানে বলা আছে, নাশপাতি দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় ফাইবারের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস।
এতে প্রায় ৭১ শতাংশ অদ্রবণীয় ফাইবার এবং ২৯ শতাংশ দ্রবণীয় ফাইবার থাকে। এতে থাকা অদ্রবণীয় ফাইবার বা আঁশ হলো পলিস্যাকারাইড যা হজমে ভূমিকা রাখে।
নাশপাতি খাওয়ার পর পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রিক ও ডাইজেস্টিভ জুস বেড়ে যায়। ফলে খাবারকে হজমে সহায়তা করে।
৪. অন্ত্রের কার্যক্ষমতা সঠিকভাবে সচল রাখা
Gut microbiota, অর্থাৎ আমাদের অন্ত্রে কিছু ব্যাকটেরিয়া বসবাস করে যা আমাদের জন্য উপকারী বলে স্বীকৃত। এই ব্যাকটেরিয়া খাবার হজম করার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে।
প্রতিদিন নিয়মিত নাশপাতি খেলে নাশপাতির ফাইবার এসকল ব্যাকটেরিয়ার কার্যপদ্ধতিতে সহায়তা করে। যার ফলস্বরূপ অন্ত্রের কার্যক্ষমতা বজায় থাকে।
৫. অ্যান্টি অক্সিডেন্ট কার্যক্রম
২০০৩ সালের একটি প্রতিবেদন থেকে আমরা দেখতে পাই যে নাশপাতিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ক্লোরোজেনিক এসিড আছে।
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান যেমন: ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং ফ্ল্যাভিনয়েড উপাদান যেমন: বিটা ক্যারোটিন, লুটেইন, জিয়াজ্যান্থিন, ইত্যাদি উপাদান শরীর থেকে ফ্রি রেডিকেলসগুলো দূর করতে সাহায্য করে।
যার ফলে শরীর সুস্থ থাকে।
৬. কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়া থেকে মুক্তি
খাবারে একটু গোলযোগ হলেই কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা ডায়রিয়া সমস্যা যেনো হানা দেয় শরীরে৷ এছাড়াও অনেকেই নিয়মিত এই কষ্টকর রোগে ভুগে থাকেন। তাদের জন্য একটি সহজ সমাধান হতে পারে নাশপাতি।
নাশপাতি বাওয়েল মুভমেন্ট ঠিক রাখতে সহায়তা করে। বাওয়েল মুভমেন্ট হলো দেহের খাদ্য হজম প্রক্রিয়ার একদম শেষ সীমানা।
অর্থাৎ খাদ্য গ্রহণ থেকে শুরু করে রেচনপদার্থ নিষ্কাশিত হওয়া পর্যন্ত যে মুভমেন্ট সেটাকেই বাওয়েল মুভমেন্ট বলা হয়।
যাদের বাওয়েল মুভমেন্ট নিয়মিত, তাদের যদি সপ্তাহে তিনবার বা তার কম হয়, তবে সেটা কোষ্ঠকাঠিন্যের সংকেত আর যদি বেশি পরিমাণে হয় তাহলে ডায়রিয়া।
নাশপাতিতে থাকা অধিক পরিমাণের ফাইবার শরীরের এই বাওয়েল মুভমেন্ট ঠিক রাখে। যার ফলশ্রুতিতে শরীরের ভারসাম্য রক্ষিত হয় এবং ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি মেলে।
৭.হৃৎপিন্ডের উন্নতি
কার্ডিওভাস্কুলার স্বাস্থ্যের উন্নতিতে নাশপাতির উপকারিতা অনন্য।
২০১৯ সালে ” Current Developments in Nutrition“ জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা যায় যে হৃৎপিন্ডের ওপর নাশপাতির ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, যারা নিয়মিত নাশপাতি খেয়ে থাকেন, তাদের বিএমআই (Body Mass Index) কম থাকে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কম থাকে। কার্ডিওভাস্কুলার রোগের কারণে মৃত্যুহারও এক্ষেত্রে কম।
৩০,০০০ নারীর উপর ১৭ বছর ধরে দীর্ঘ চলমান একটি প্রতিবেদনে জানা যায় যারা প্রতিদিন অন্তত ৮০ গ্রাম নাশপাতি খেয়েছেন তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি ৭-৮% কমে গিয়েছে।
অন্যদিকে নাশপাতি পটাশিয়ামের একটি উত্তম উৎস। রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে পটাশিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যা সুস্থ হৃৎপিণ্ড পাওয়ার একটি প্রধান শর্ত।
৮. রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ
নাশপাতি রক্তের লোহিত রক্তকণিকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাধারণ আয়োডিনের স্বল্পতা বা বিভিন্ন জটিল রোগের কারণে লোহিত রক্তকণিকা পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন উৎপাদন করতে পারে না।
যার ফলশ্রুতিতে শরীরে রক্তের অভাব দেখা দেয়। নাশপাতি লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনেও কার্যকরী।
নাশপাতিতে খনিজ লবণের এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে। যার ফলে ঘাটতি পূরণ হয় এবং অ্যানিমিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৯.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
“American Journal of Clinical Nutrition“ এ এই ব্যাপারটি স্বীকৃত যে, ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
আমাদের দেহে শ্বেত রক্তকণিকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার প্রধান সৈনিক। ভিটামিন সি এই শ্বেতরক্তকণিকা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
ফ্লু, সর্দি-কাশি সহ সাধারণ যে সকল রোগ আমাদের ঘিরে আছে, সেসকল থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের মাধ্যমে।
নাশপাতির জুস গলা পিচ্ছিল করে৷ ফলে কফ এবং ভাইরাল সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
নাশপাতিতে ভিটামিন সি এর আধিক্য সকল বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত।
তাই নাশপাতি খাবারের তালিকায় রাখার মাধ্যমে সুস্থতার পথে আরও এক পদক্ষেপ বেশি এগিয়ে থাকবেন আপনি।
১০.প্রদাহ থেকে মুক্তি
নাশপাতি দেহের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ফ্ল্যাভিনয়েড উপাদান এর উপস্থিতির কারণে এটি প্রদাহ কমাতে পারে।
প্রদাহ হলো এমন একটি অবস্থা যা দেহের অনাক্রম্য সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। দীর্ঘকালীন প্রদাহ স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট হানিকারক যা বেশ কিছু জটিল রোগের সাথে জড়িত। যেমন হৃদরোগ, টাইপ ২ ডায়বেটিস, ইত্যাদি।
১১. হাড়ের মজবুত অবস্থা
নাশপাতিতে অন্যান্য খাদ্য উপাদানের মত খনিজ লবণ বা মিনারেলও যথেষ্ট পরিমাণে আছে।
ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রভৃতি উপাদানের উপস্থিতি হাড় মজবুত করে এবং ক্ষয় থেকে রক্ষা করে।
এসব খনিজ লবণের উপস্থিতি আছে বিধায় আর্থ্রাইটিস বা গেঁটে বাত, রিউম্যাটিক অবস্থা প্রভৃতি যন্ত্রণাদায়ক রোগ থেকে বেঁচে থাকার উপায় হিসেবে নাশপাতি প্রশংসনীয়।
১২. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ
নাশপাতি দেহের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে দীর্ঘ জীবন প্রাপ্তিতে সহায়তা করে। এটি অন্ত্রের চর্বি শোষণ করতে সাহায্য করে।
আমরা জানি, তিন প্রকার কোলেস্টেরলের উপস্থিতি রয়েছে আমাদের শরীরে। এর মধ্যে উচ্চ ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন বা এইচডিএল আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর।
নাশপাতি এ কোলেস্টেরলকে বাড়তে দেয় না এবং শরীরের কার্যকলাপ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
১৩. দাঁতের মাড়ির ক্ষয়রোধ
বিভিন্ন কারণে আমাদের দাঁতের মাড়ি প্রায়শই ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা যায়। এ সমস্যাকে বাড়তে দিলে তা গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।
নাশপাতি দাঁতের এই মাড়িক্ষয়কে প্রতিরোধ করে।
নাশপাতির রসের সাথে অল্প কিছুটা ফিটকিরি মিশিয়ে সারারাত রেখে দেওয়ার পর সকালে খেলে দারুণ উপকার পাওয়া সম্ভব। অর্থাৎ একইসাথে সাশ্রয়ী এবং উপকারী ঔষধ।
১৪. রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা কমানো
নাশপাতিতে উপস্থিত বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের কারণে রক্তের উপর এর প্রভাব সুস্পষ্ট। রক্তে অ্যালকোহলের উপস্থিতি বিভিন্ন রোগের মূল কারণ। নাশপাতি এই অ্যালকোহলের মাত্রা কমিয়ে রক্তকে পরিশুদ্ধ করে।
১৫.অতিরিক্ত ওজন হ্রাসকরণ
নাশপাতিতে কোলেস্টেরলের পরিমাণ খুবই কম। এতে ফাইবার থাকার কারণে তা অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণের প্রতি আসক্তি কমায়।
কেননা নাশপাতি ধীরে ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘ সময় পেটে থাকে। ফলে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছা থাকে না। যার ফলে শরীরে মেদ জমতে পারে না।
এতে উপস্থিত ভিটামিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং খনিজ উপাদান বা মিনারেল শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে দেয় না। পেকটিন থাকায় চর্বি কমিয়ে ওজন কমাতে সহায়তা করে।
একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে প্রতিদিন নাশপাতি গ্রহণকারী ব্যক্তিদের কোমরের পরিধি ১২ সপ্তাহে ১.১ ইঞ্চি হ্রাস পেয়েছে।
১৬. সঠিক উপায়ে রক্ত সঞ্চালন
নাশপাতি হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। রক্ত সঞ্চালনে কৈশিক জালিকা, ধমনী এবং শিরা এই তিনটি নালিকার প্রয়োজন হয়।
নাশপাতি কৈশিক জালিকা শক্ত করতে সহায়তা করে। এর ভঙ্গুরতা রোধ করে।
একইসাথে এর পুষ্টি উপাদান রক্তকে পরিশুদ্ধ করে। ফলে শরীরে সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালিত হতে পারে এবং দেহের কার্যাবলী সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।
১৭. অবসাদ দূরীকরণ
নাশপাতির এই উপকারিতাটি হয়ত অনেককেই চমকে দেবে। তবে এটা সত্য এবং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। শারীরিক পরিশ্রমে আমরা তখনই ক্লান্ত হয়ে যাই যখন আমাদের মাংসপেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে।
মাংসপেশি বিভিন্ন কারণে দুর্বল হতে পারে। দীর্ঘকালীন রোগ, ভিটামিনের অভাব অথবা পটাশিয়াম বা সোডিয়াম কম পরিমাণে গ্রহণ করা।
নাশপাতির পুষ্টিগুণ থেকে আমরা প্রথমেই জেনেছি যে এতে সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আছে। তাই নাশপাতি খাওয়ার ফলে শরীরে সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের অভাব পূরণ হয়।
শরীরে সোডিয়াম – পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণ হলে মাংসপেশির দূর্বলতা কমে যাবে। যার ফলে অবসাদ এবং ক্লান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
অর্থাৎ নাশপাতি শুধু যে আপনার শরীরের অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন করছে তাই নয় বরং কর্ম উদ্দীপনা জোগাতেও সাহায্য করবে।
১৮.স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিকারক
থাইরয়েডের সমস্যা বা ভিটামিনের অভাবের কারণে প্রায়শই স্মৃতিশক্তি নিয়ে বিপদে পড়তে হয় আমাদের।
অনেক সময় বেশ বাজে পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হয় একটা কথা মনে না রাখতে পারার জন্য। আর এমন অবস্থা থেকে আপনার মুক্তির পথ খুঁজে দিতে পারে নাশপাতি।
নাশপাতির ভিটামিন উপাদান মস্তিষ্কের কার্যকারিতা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ফলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে।
১৯. দৃষ্টিশক্তির সহায়ক
চোখের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে নাশপাতি। ফলে চোখের অভ্যন্তরীণ অংশগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হয় যা দৃষ্টিশক্তির জন্য উপকারী।
নাশপাতির জুস যারা খায় তাদের আলো কিংবা শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা কম থাকে।
২০. গর্ভবতী মায়ের পুষ্টি ভরসা
নাশপাতিতে প্রচুর পরিমাণে ফোলিক এসিড থাকে।
একটি বড় নাশপাতিতে প্রায় ১৪ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট থাকে যা গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় প্রয়োজনীয় উপাদানের প্রায় ৭০০ গ্রাম পূরণ করতে সক্ষম।
যার ফলে গর্ভবতী মায়েদের প্রচুর পরিমাণে নাশপাতি খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। এতে শিশুর জন্মদানে ত্রুটি দূরীভূত হয় এবং নবজাতকের শরীর বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা পায়।
নাশপাতির অভ্যন্তরে বিদ্যমান পুষ্টিগুণ নবজাতককে ছোটবেলা থেকেই সুস্থ সবল ভাবে বিকশিত করতে সহায়তা করে।
এছাড়াও মাসিক চলাকালীন বিভিন্ন সমস্যার সমাধানেও নাশপাতির সুপারিশ করা হয়েছে।
২১.খুশকি দূর করার মহৌষধ
খুশকি সমস্যা নিয়ে বিব্রত হচ্ছেন? বিশেষত শীতকালে যেনো এটি বড় ধরণের সমস্যায় পরিণত হয়। মাথার ত্বক এবং চুলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এই খুশকি।
তাই খুশকি সমস্যার সমাধানে প্রতিদিন খেয়ে নিন নাশপাতির জুস।
১০-১৫ দিনের মাঝেই উল্লেখযোগ্য সমাধান পেয়ে যাবেন।
২২.ত্বকের সুরক্ষায় নাশপাতি
নাশপাতি আমাদের ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে।
কোলাজেন আমাদের ত্বককে মসৃণ এবং লাবণ্যময় রাখতে সহায়তা করে।
তাই নাশপাতির ফাইবার গ্লুকোজকে কোলাজেনের ক্ষতি থেকে প্রতিরোধ করে এবং আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে।
২৩.বুনো নাশপাতি
নাশপাতির উপকারিতা যেনো বলে শেষ করার মত নয়। বুনো নাশপাতিও কিন্তু অনেক উপকারী।
এটি শীতকালে মেডিসিন ডেকোশন তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। মূলত শুকনো ফল প্রস্তুতের জন্য এটি প্রয়োজনীয়।
২৪. চুলের উপকারী বন্ধু নাশপাতি
আমাদের চুল বিভিন্ন কারণে তার প্রাকৃতিক জেল্লা হারিয়ে ফেলে। নাশপাতি চুলের কোষগুলোকে এই ঔজ্জ্বল্য এনে দিতে সহায়তা করে।
নাশপাতিতে থাকা ভিটামিন সি চুলের স্বাভাবিক মসৃণতা রক্ষা করে এবং ফলস্বরূপ চুলের রুক্ষতা দূর করে ঝলমলে সুন্দর চুল উপহার দেয়।
নাশপাতির উপকারিতা ও গুণাগুণ জানতে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন।
নাশপাতি খাওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম
এতক্ষণ আমরা জানলাম নাশপাতির যত উপকারিতা সমূহ। অতি মাত্রায় পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ এ খাদ্যটি তৃপ্তির জন্য এবং এর পুষ্টিগুণ যেনো শরীরের জন্য আরও বেশি উপকারী হয় সে স্বার্থে কিছু নিয়ম মেনে এটি খেলে তা শরীরের জন্য আরও উপকারী হতে পারে।
তাহলে নিয়মগুলো জেনে নেয়া যাক-
ডায়বেটিস রোগীদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ যেসব নিয়ম–
১.নাশপাতি পানির সাথে না খাওয়াটাই ভালো। ২. কোনো ভারী খাবারের সাথে মিশ্রণ না ঘটিয়ে হালকা খাবার কিংবা হালকা নাস্তার জন্যই এটাকে বেছে নিন। ৩.তবে খালি পেটে নাশপাতি খাওয়া ঠিক নয়। এতে পেট ফুলে যাওয়ার মত সমস্যা হতে পারে। ৪.মাংস বা প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের সাথে একত্রে না খেয়ে এর জন্য আলাদা সময় বেছে নিন। ৫. নির্দিষ্ট পরিমাণে নিয়মিত খাবেন তবে অতিমাত্রায় নয়। কারণ একটি জিনিস যতই উপকারী হোক না কেনো অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। ৬. প্রক্রিয়াজাতকরণ না করে তাজা ফল খাওয়াটাই বেশি উপকারী।
সর্বশেষ নিয়মটি ছাড়া বাকিগুলো অন্যদের ক্ষেত্রেও কার্যকরী। কিন্তু তাজা নাশপাতি সকলের জন্য গ্রহণ করা ঠিক নয়।
অধিক পুষ্টিগুণ থাকা সত্ত্বেও এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। যেগুলো এই লেখারই পরবর্তীতে আপনারা জানতে পারবেন।
নাশপাতির বিভিন্ন রেসিপি
⇒ উপায়-১ : ডায়াবেটিস রোগীর খাবার
খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পরে একটি নাশপাতি খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য লাভজনক।
তবে খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগেও একটি উপায় অনুসরণ করতে পারেন। তা হলো –
১ঃ১ অনুপাতে পানি এবং নাশপাতির রস মিশিয়ে আপনার এই পানীয়টি তৈরি করে নিতে পারেন যার মাধ্যমে টাইপ ২ ডায়াবেটিস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এটি দিনে সর্বোচ্চ তিনবার খেতে পারবেন।
এ পদ্ধতিতে নাশপাতি খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সর্বোচ্চ উপকারী হবে।
⇒ উপায় -২ : নাশপাতির সালাদ
সালাদ রেসিপি-১
একটি নাশপাতি, কাঁচা বিট ও মূলা নিয়ে খোসা ছাড়িয়ে নিন। তারপর তার সাথে পরিমাণমত লবণ, মরিচ কুঁচি এবং একটু জলপাইয়ের তেল নিয়ে মাখিয়ে নিন। তৈরি হয়ে গেল আপনার নাশপাতির সালাদ।
সালাদ রেসিপি-২
মুরগীর সিদ্ধ ব্রেস্ট, শক্ত পনির এবং একটি হালকা ভাজা নাশপাতি টুকরো করে কেটে নিন। এর সাথে লেটুস পাতা টুকরো টুকরো করে মিশিয়ে নিন। এবার এর সাথে লবণ ও জলপাই মিশিয়ে সালাদ তৈরি করে নিন।
আপনি ইচ্ছে করলে মুরগীর ব্রেস্ট, পনির এবং নাশপাতি মেশানোর পরে চুলায় একটু ভেজে নিতে পারেন এবং বার্গার সস যোগ করে নিতে পারেন। এতে আপনার সালাদ আরও বেশি মজাদার হবে।
তবে পুষ্টিগুণ বিচারে চুলায় না ভেজে শুধু মেশানো সালাদটিই বেশি উপযোগী।
সালাদ রেসিপি-৩
১৫০ গ্রাম পনির, ১০০ গ্রাম আরগুলা এবং একটি নাশপাতি টুকরো করে কেটে তাতে অলিভ ওয়েল মিশিয়ে নিন। তারপর উপর দিয়ে আখরোট ছড়িয়ে দিন। বাদামের গুণাগুণটাও একই সাথে পেয়ে যাবেন।
⇒ উপায়-৩ : সবজি হিসেবে নাশপাতি
চুলায় একটি ফ্রাইং প্যানে একটি নাশপাতি এবং একটি পেঁয়াজের অর্ধেক কুঁচি করে কেটে অল্প অলিভ ওয়েল দিয়ে হালকা ভেজে নিন।
এবার এর সাথে ২৫০ গ্রাম বাঁধাকপি এবং অল্প পরিমাণে আদা যোগ করুন। এরপর ৫ মিনিটের মত তেলে ভেজে নিয়ে পরিবেশন করুন। চাইলে ওপর দিয়ে বার্গার সস ছড়িয়ে দিতে পারেন।
⇒ উপায়-৪ : নাশপাতি ডেজার্ট
ডেজার্ট রেসিপি-১
নাশপাতির ডেজার্ট ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মিষ্টির পরিপূরক হতে পারে। যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মিষ্টি প্রায় নিষিদ্ধ পর্যায়ের, তাই এই ফলের ডেজার্ট তাদের জন্য উপকারী এবং মুখরোচকও বটে।
একটি নাশপাতি এবং ২৫০ গ্রাম আপেল স্লাইস করে নিন। গরম দুধে ৩০০ গ্রাম ওটমিল, লবণ, দারুচিনি, ডিমের সাদা অংশ, সামান্য চিনি, আপেল এবং নাশপাতি নিন।
এরপর এটি চুলায় বেকিং টিনে আধা ঘণ্টার মত রেখে দিব। ব্যস হয়ে গেল আপনার ডেজার্ট। এবার নিজের ইচ্ছেমত বাদাম বা কিসমিস দিয়ে পরিবেশন করুন।
ডেজার্ট রেসিপি -২
৫০০ গ্রাম নাশপাতি, ৫০০ গ্রাম পনির, ১০০ গ্রাম কম ফ্যাটযুক্ত ক্রিম, ডিম এবং ২ চামচ ওটমিল নিন। সবগুলো একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি পাত্রে আধা ঘণ্টা রেখে দিন। আপনি খেয়াল করবেন যে মিশ্রণটি কিছুটা ফুলে উঠেছে।
এবার ৪০ মিনিট ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এটি উত্তপ্ত করুন এবং আপনার ডেজার্ট তৈরি।
ডেজার্ট রেসিপি-৩
একটি ব্লেন্ডারে নাশপাতি ব্লেন্ড করে ৩০০ গ্রাম পানি নিন। এর মধ্যে ২ চামচ ওট ময়দা যোগ করুন এবং ১৫ মিনিট সিদ্ধ করুন মিশ্রণটি। রেডি হয়ে যাবে আপনার ডেজার্ট।
নাশপাতির সহজলভ্যতা
সাধারণত মৌসুমী ফলগুলো আমাদের জন্য যতই উপাদেয় হোক না কেনো বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়েই শুধু আমরা তাদের পাই। বাকি সময়গুলোতে বিদেশী ফল খেয়েই দেহের পুষ্টিমানের ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজন পড়ে।
কিন্তু নাশপাতি এমন একটি ফল যা আপনি বছরের যেকোনো সময় পেতে পারেন।
এ ফলের জন্য আপনার কোনো ধরণের পরিশ্রমের প্রয়োজন পড়বে না। কারণ সুপার শপগুলোতে কিংবা স্বাভাবিক ফলের দোকানগুলোতে আপনি সহজেই ফলটি পেয়ে যাবেন।
নাশপাতি কেনার সময় লক্ষণীয় দিক
নাশপাতি অত্যন্ত সহজলভ্য ফল হলেও এটি কেনার সময় অবশ্যই কিছু বিষয় খেয়াল করবেন-
১.নাশপাতির রং
অতিরিক্ত পেকে যাওয়া নাশপাতি খাওয়ার জন্য সঠিক নয়। এটি তেমন মুখরোচকও নয়।
তাই নাশপাতি কেনার সময় খেয়াল করবেন যেনো এটি সবে পেকেছে এমন ধরণের ফল হয়। বাইরে থেকে এর রঙ দেখে এ সম্পর্কে আপনি ধারণা করতে পারেন। এ ধরণের নাশপাতির হালকা সোনালী রঙ বজায় থাকে।
পাশাপাশি আপনি খেয়াল করবেন যেনো ফলটিতে কোনো দাগ বা ড্যামেজ না থাকে।
২.নাশপাতির পরিপক্বতা যাচাই
নাশপাতির পরিপক্বতা যাচাই করতে একটি সহজ পথ অবলম্বন করতে পারেন আপনি। এর বোঁটা যে স্থানে আসে তার আশপাশে আঙুল দিয়ে আলতো করে চাপ দিন।
যদি তা বেশি শক্ত কিংবা বেশি নরম না হয় তাহলে বুঝবেম এটি আপনার জন্য ক্রয় উপযোগী।
৩. নাশপাতির গন্ধ
একটি সুন্দর পরিপক্ব নাশপাতির মনোমুগ্ধকর গন্ধ থাকে যা আপনাকে এর অবস্থা বুঝতে সাহায্য করে। এর গন্ধ এবং সুন্দর রঙ আপনাকে বুঝতে সহায়তা করবে কোন নাশপাতিটি কেনার জন্য উপযোগী।
৪. নাশপাতি সংরক্ষণ
সংরক্ষণের জন্য আপনার তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না। স্বাভাবিকভাবেই আপনার রেফ্রিজারেটরে এটি সংরক্ষণ করুন।
তবে খুব বেশিদিন রেফ্রিজারেটরে না রাখাই ভালো। যত দ্রুত সম্ভব তাজা ফল খাওয়া উচিৎ।
নাশপাতির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
১.রোগ
দীর্ঘদিন যাবত যারা অন্ত্রের এবং আলসারের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য তাজা নাশপাতি গ্রহণ নিষিদ্ধ। বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে অন্য খাবারের সাথে মিশ্রিত অবস্থায় খাওয়াই শ্রেয়।
ইউরোপে ৬০% নাশপাতি তাজা ফল হিসেবে পাওয়া যায় এবং বাকি ৪০% প্রক্রিয়াজাতকরণ হিসেবে পাওয়া যায়। বর্তমানে আমাদের দেশেও এর প্রাধান্য বাড়ছে।
তাই যদি এ ধরণের রোগ আপনার থাকে, তবে অবশ্য বাজার থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণ নাশপাতি নিয়ে আসুন অথবা বাড়িতেই অন্য উপায়ে খাওয়ার পদ্ধতি অবলম্বন করুন।
নাশপাতি কীভাবে আপনি অন্য উপায়ে খেতে পারেন তার বর্ণনা এই লেখাতেই পেয়ে যাবেন আপনি।
২.খাদ্য প্রকার
মাংস জাতীয় খাদ্য গ্রহণের পর নাশপাতি খেলে মাংস হজম হতে যথেষ্ট সময় লাগার সম্ভাবনা আছে। তাই একসাথে এই জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত নয়।
৩.অ্যালার্জি সমস্যা
যাদের অতিরিক্ত এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য নাশপাতি পরিহার করাই শ্রেয়। নয়ত খাওয়ার অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই এলার্জির সিনড্রোম বা উপসর্গ দেখা যেতে পারে।
৪. FODMAP
এই সমস্যাটি কী তা জানার পূর্বে জেনে নেয়া প্রয়োজন যে FODMAP বলতে আসলে কী বোঝায়।
FODMAP( Fermentable Oligosaccharides, Disaccharides, Monosaccharides and Polyols) বলতে মূলত গাঁজনকৃত (সহজ বাংলায় পঁচে যাওয়া বা বিকৃত) কার্বোহাইড্রেটকে বোঝায় যা খাদ্যে বেশি পরিমাণ থাকলে বমি, ডায়রিয়া, গ্যাস্ট্রিক, দেহের বিভিন্ন অংশে ব্যথা এ ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
তাই কখনোই বেশি পরিমাণে নাশপাতি খাওয়া উচিত নয় । দেহের অবস্থা অনুসারে প্রতিদিন মাঝারি সাইজের ১ টি কিংবা ২ টি নাশপাতি দেহের জন্য উপকারী এবং তা সঠিক নিয়ম মেনে খাওয়া আবশ্যক।
অবশেষে
নাশপাতি অত্যাধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। আমাদের দেহের জন্য যেকোনো ফলই অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আর নাশপাতি তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। একটি সুস্থ স্বাভাবিক জীবন কে না চায়? তাই সে উদ্দেশ্যেই নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপনের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাদ্যাভাস গড়ে তুলুন। রোগব্যাধিতে জরাগ্রস্ত হয়ে প্রতিকার করার পূর্বে দেহকে রোগ প্রতিরোধী করে গড়ে তুলুন এবং সুন্দর একটি জীবনের স্বাদ নিন। শুভ কামনা।
References
https://www.nutritionvalue.org/Pears%2C_raw_nutritional_value.html