১০টি প্রাকৃতিক উপায়ে সহজেই চুলের খুশকি দূর করুন

১০টি প্রাকৃতিক উপায়ে সহজেই চুলের খুশকি দূর করুন

বর্তমানে আমাদের সমাজের বিশেষ করে শহুরে সমাজের মানুষ খুশকি নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন। শহরের অতিরিক্ত ধূলা-বালি মাথায় জমে যায়। মাথার এই খুশকির সমস্যা থেকে দূর করার জন্য, বেশ কিছু প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে। এই সকল খুশকি দূর করার উপায় অবলম্বন করে, খুব সহজেই খুশকি সহ, চুল পড়া, চুল ভেঙ্গে যাওয়া এই সকল সমস্যা থেকে সমাধান লাভ করা যায়।

চুলের খুশকি দূর করার উপায়

দিন দিন খুশকি বেড়েই চলেছে? আসুন জেনে নিই ১০টি প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে চুলের খুশকি দূর করবেন।

১। লেবু

খুশকি সমস্যা সমাধানে লেবু দিয়ে চিকিৎসা মোটামোটি প্রাচীন। তাছাড়া লেবু সহজ লভ্য হওয়ায়, ঘরে বসে যেকোন সময় খুশকি দূর কারা জন্য লেবু ব্যবহার করা একটা উত্তম উপায়।

লেবুর সাইট্রিক এসিড মাথার ত্বকের অতিরিক্ত সেবোরেইক ডারমাটাইটিস বা যে তৈলাক্ত ভাব থাকে তাকে দূর করে দেয়। সেই সাথে এটি মাথার ত্বকের চুলকানি কমায় এবং পি.এইচ এর ব্যালেন্স ঠিক রাখে।

ব্যাবহার বিধি

⇒ দুই টেবিল চামচ লেবুর সাথে এক টেবিল চামচ পানি অথবা নারিকেল তেল ভালোভাবে মিশিয়ে মাথায় ও যেখানে সমস্যা রয়েছে সেখানে আলতো ভাবে ম্যাসেজ করুন।

⇒ ভালো ফলাফলের জন্য ৮-১০ মিনিটা রাখতে হবে। অতঃপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে।

⇒ স্থায়ী সমাধানের জন্য সপ্তাহে দুই বার করে ২-৩ মাস ব্যবহারে করতে হবে। যাদের মাথার ত্বক সংবেদনশীল তাদের লেবু ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

তাছাড়া লেবুর আরও অনেক উপকারিতা ও ওষধি গুণাগুণ রয়েছে। তা জানতে লেবুর ২০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও ঔষধি গুণাগুণ এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।

২। কর্পূর ও নারকেল তেল

রূপ চর্চার ক্ষেত্রে গ্রাম বাংলার সু-প্রাচীন কাল থেকে নারিকেল তেল ব্যাবহার হয়ে আসছে। নানা ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ কর্পূর তেল ব্যবহার এক সময় প্রচলিত ছিল বাংলার ঘরে ঘরে।

ব্যবহার বিধি

⇒ আধা কাপ নারিকেল তেলের সাথে ১ টেবিল চামচ কর্পূর তেল মিশিয়ে প্রতি রাতে পরিমাণ মত ব্যবহার করা যেতে পারে (চুলের গোড়ায় যাতে ভালোভাবে লাগে)।
 
⇒ সকালে উঠে ভালোভাবে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। 

⇒ টানা ১৫ দিন ব্যবহার করার পর ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলতে হবে।

সতর্কতা

মনে রাখতে হবে, ক্ষত স্থানে কর্পূর মালিশ করলে রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে বিষ ক্রিয়া হতে পারে, তাই কর্পূর ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা অবলম্বন করে।

৩। মেথির তেল

মেথি চুল পড়া কমাতে ও চুলের খুশকি দূর করণে অনেক উপকারী।

ব্যবহার বিধি

⇒ নারিকেল তেল ১:১ মেথির তেল ভালো করে মিশিয়ে গরম করে নিতে হবে। ঈষৎ গরম অবস্থায় দ্রবণটি ভালো করে চুলে ম্যাসেজ করতে হবে। 

⇒ গোসল করার সময় অবশ্যই শ্যাম্পু ব্যাবহার করতে হবে। 

⇒ মেথি ঔষুধী গুণে সমদ্ধ। এতে প্রোটিন, ভিটামিন সি, আয়রন ও পটাসিয়াম রয়েছে। যা নিয়মিত ব্যবহার করলে খুশকি দূর হয়ে যায়। 

⇒ মশ্চারাইজার গুণ থাকায় মাথার ত্বককে মসৃণ করে, আদ্রতা ধরে রাখে ও মরা কোষ দূর করে দেয়।

তাছাড়া চুল পড়া বন্ধের ঘরোয়া উপায় জানতে এখানে ক্লিক করুন।

৪। নিমপাতা

নিমপাতার সর্ব রোগের গুণের কথা সেই প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও উল্লেখ আছে। এর এন্টি ফাংগাল গুণ খুশকির প্রকোপ কমাতে খুবই কার্যকর।

ব্যবহার বিধি

⇒ নিমপাতা পেস্ট করে গোসলের ১ ঘন্টা আগে লাগাতে হবে। 

⇒ অথবা এক মুঠো নিমপাতা এক মগ পানিতে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে গোসলের পর মাথায় ঢেলে দিতে হবে।

৫। টি ট্রি অয়েল

টি ট্রি অয়েল

টি ট্রি অয়েল একটি এন্টি ফাংগল এবং এন্টি ব্যাক্টেরিয়াল গুণ সম্পন্ন তেল। এখন আমাদের দেশে ও সুলভ মূল্যে টি ট্রি অয়েল পাওয়া যায়।

এন্টিসেপটিক বৈশিষ্ঠ্যের কারণে ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ততা দূর হয়। যদি একজিমার কারণে খুশকি হয়, তা হলে টি ট্রি অয়েলের বিকল্প নেই। একজিমা সারাতে এটি জিংক অক্সাইড ও ক্লোরেটাসোন বিউটারেটর চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর।

ব্যবহার বিধি

⇒ স্কাল্পে খুশকি হলে শ্যাম্পু করার পূর্বে পরিমাণ মত চুলের গোড়ায় ভালোভাবে ম্যাসেজ করতে হবে।
 
⇒ নিয়মিত ব্যাবহার করলে হেয়ার ফলিকল ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে চুলের গোড়া শক্ত হয় ও চুল লম্বা হয়।

৬। অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা শরীরের রোগ প্রতিরোধে সহায়ক উপাদান অ্যাডাপ্টোজেন বিদ্যমান। বহুবছর ধরে অ্যালোভেরা রস ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি ফাংগাল উপাদান মাথার ত্বকের র‍্যাশ, চুলকানি কমায়।

এটি খুশকি সমস্যা দূর করে এবং চুলের শুষ্ক ভাব দূর করে। আর চুলকে করে কোমল ও ত্বকের স্বাভাবিক আদ্রতা বজায় রাখে। তাছাড়া নিয়মিতা অ্যালোভেরা ঠান্ডা রস ব্যবহার করলে, চুলের গোড়া মজবুত হয়।

ব্যবহার বিধি

⇒ শুধু অ্যালোভেরা অথবা অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে সরাসরি মাথায় ব্যবহার করতে পারেন।

⇒ ১৫-২০ মিনিট দ্রবণটি মাথায় রাখতে হবে এবং পরে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ভালো ফলাফলের জনে প্রতিদিন ব্যবহার করা জরুরী।

৭। আপেল সাইডার ভিনেগার

ভিনেগার বর্তমান বিশ্বের জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য একটি উপাদান। মাথার ত্বকের জন্য আপেল সাইডার ভিনেগার এন্টি ফাংগাল হিসেবে ভালো কার্যকর।

ভিনেগার চুলকানি রোধে মৃত কোষ সরাতে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া এটি ত্বকের পি এইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

ব্যবহার বিধি

⇒ পানি ৩:১ আপেল সাইডারে ভিনেগার ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। 

⇒ এরপর পরিষ্কার চুলে মাথার ত্বকে ভালো করে লাগাতে হবে।
 
⇒ নিয়মিত সপ্তাহে ২-৩ বার লাগানো যেতে পারে। পানি ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলতে হবে।

৮। আমলকি

চুল পরিচর্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে প্রাচীনকাল থেকে আমলকির ব্যবহার হয়ে আসছে। বিশেষ করে সেবোরেইক ডারমাটাইটিস বা তৈলাক্ত ভাব হ্রাস করে মাথার ত্বকের সুরক্ষা প্রদান করে।

আমলকী চুলের কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। এতে থাকা ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ডান্ড্রিয়াম আক্রমণে বাধা দেয় ও চুলের খুশকি দূর করে দেয়।

ব্যাবহার বিধিঃ

⇒ দুই টেবিল চামচ আমলকীর রস লেবু অথবা অ্যালোভেরা অথবা সরাসরি আমলকির রসযুক্ত পেস্ট মাথায় লাগাতে পারেন। 
⇒ ৩০ মিনিট পর মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে। তিন-চার দিন অন্তর অন্তর এটি ব্যবহার করতে হবে। 

৯। টক দইয়ের ব্যবহার

চুলের খুশকি দূর করার ক্ষেত্রে টক দই বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান মাথার ত্বকে ফাঙ্গাস কমাতে সাহায্য করে।

যেহেতু এটি প্রোবটিক্স এর একটি ভালো উৎস তাই এটি খুশকি নিরাময়ে সহায়তা করে।

এছাড়াও শরীরের মধ্য থেকে যে কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে এবং ত্বককে মসৃণ করতে সহায়তা করে।

ব্যবহার বিধি

⇒ এক কাপ টক দই নিয়ে সেটা ভালো করে ফেটিয়ে নিতে হবে।
 
⇒ এরপর টক দইটি মাথার স্কাল্পে এবং চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিতে হবে। 

⇒ দ্রবণটি চুলে লাগানোর পর ১৫ মিনিট মাথায় দিয়ে রাখতে হবে। 

⇒ এরপর পরিষ্কার জল দিয়ে যে কোন হালকা শ্যাম্পু  ব্যবহার করে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে।

⇒ সপ্তাহে তিন দিন গোসল করার আগে এটি করতে হবে। এটি চুলকে উজ্জ্বল ও খুশকি বিহীন করে তুলবে ধীরে ধীরে।

সতর্কতা:

মাথায় টক দই ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে দইটি যেন একদম সতেজ হয়। কেননা বেশি পুরনো হলে সে ক্ষেত্রে এর ভালো ফলাফলের থেকে খারাপ প্রভাবটাই অত্যধিক লক্ষ্য করা যাবে। দই পুরনো হয়ে গেলে তার মধ্যে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ ক্ষমতাটা আর থাকে না, বরং তার মধ্যেই ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়।

১০। জলপাই তেল

জলপাই তেল প্রাকৃতিক ভাবে খুব গুণ সম্পন্ন ও ভালো ময়েশ্চারাইজার গুণ সম্পন্ন। সব প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মাথার খুলিতে জন্মানো মেলাসেজিয়া ছত্রাক নিয়ন্ত্রণ করে।

ফলে ত্বকের আদ্রতা ও পরিচ্ছন্নতা বজায় থাকে। নিয়মিত জলপাই তেল ব্যবহার করলে সময়মত শ্যাম্পু ব্যাবহার নিশ্চিত করতে হবে।

অলিভ অয়েলের উপকারিতা জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।

চুলে খুশকি হওয়া, চুল পড়ে যাওয়া, চুলের গোড়া ভেঙ্গে যাওয়া এগুলো এখন নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের একটু যত্ন এবং মনযোগ এসব ব্যাপার দূর করতে পারে নিমিষেই। উপরের ১০ টি প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহার করে, যে কেউ এই সমস্যা সহজেই দূর করতে পারে। কিন্তু এগুলো ব্যবহারের সময় আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে এবং খেয়াল করতে হবে কোন উপায়টি আপনার নিজের চুলের জন্য সবচেয়ে উপকারী হবে।