ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আবার কিভাবে টাকা আয় করা যায়? জানি আপনাদের হয়ত অবাকই লাগবে কথাটি শুনতে। অবশ্য আমার এক বড় ভাইও শুনে হেসেছিলেন। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ২০২৪ সালে টাকা আয় করার উপায় নিয়ে তাই আলোচনা করছি আজকে।
কিন্তু প্রযুক্তির এই যুগে কিন্তু আসলেই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করা যায়।
বুঝতেছি, উদাহরণ ছাড়া আপনারা মানবেন না।
উদাহরণ হল, বিশ্বের ৬ষ্ঠ ধনী ব্যক্তি ওয়ারেন বাফেট। (Warren Buffet)
আপনি কি জানেন, ওয়ারেন বাফেট ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই ১০০ বিলিয়ন ডলারের মালিক বনে গেছেন?
হ্যাঁ টাকা আয় করার আগে আপনাকে এক-আধটু কষ্ট করতেই হবে। সেটা সবাইকেই করতে হয়।
প্রশ্নঃ ওয়ারেন বাফেট কিভাবে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এত ধনী হলেন?
উত্তরঃ খুবই সিম্পল। উনি স্টক মার্কেটে টাকা ইনভেস্ট করেছেন।
উনার হাতে যখন যত টাকা এসেছে, সবই উনি স্টক মার্কেটি বা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করেছেন।
একবার শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করলে কিন্তু আপনার আর কোন কাজ নেই।
যে কোম্পানিতে ইনভেস্ট করেছেন, সেই কোম্পানির প্রফিটের অংশ আপনি পাবেন বছরের শেষে।
অথবা আপনার শেয়ার এর দাম বেড়ে গেলে, সেগুলো অন্য কারো কাছে বিক্রি ও করতে পারবেন।
ওয়ারেন বাফেট এভাবেই ১৩ বছর বয়স থেকে শেয়ার মার্কেট নিতে পড়ে আছেন।
আজকে আলোচনা করব এমন কিছু কাজের, যেগুলোর মাধ্যমে আপনারা সহজেই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে টাকা আয় করতে পারবেন।
অনলাইন কোর্স
সবাই কোন না কোন একটা বিষয়ে খুব ভাল জানে। ধরেন আপনি এইচএসসিতে বাংলা ব্যাকরণ খুব ভাল আয়ত্ত করেছিলেন।
এখন আপনার কাজ হল, শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাকরণ এর সমস্ত বিষয় নিয়ে ভিডিও বানানো।
- ভাইয়া, আমার তো ক্যামেরা নাই, কিভাবে ভিডিও বানাব?
- আমি তো ভিডিও এডিটিং পারি না কিভাবে করব?
- আমার তো কম্পিউটার নেই, কিভাবে অনলাইন কোর্স নিব?
অনলাইন কোর্স বানাতে হলে আপনার এগুলো না থাকলেও চলবে। শুধুমাত্র একটি স্মার্টফোন থাকলেই অনলাইনে কোর্স বানানো যাবে।
কিভাবে স্মার্টফোনের সাহায্যে অনলাইন কোর্স বানাবেন?
১) প্রথমেই একটি স্ক্রিন রেকর্ডার এপ ডাউনলোড করে নিবেন। গুগল প্লে-স্টোরে ফ্রিতেই পেয়ে যাবেন।
XRecorder এই এপটিতে সহজেই মোবাইলের যেকোন কাজ রেকর্ড করতে পারবেন।
২) এখন আপনার দরকার একটা হোয়াইট বোর্ড যেখানে আপনি শিক্ষার্থীদের পড়া বুঝাবেন। পয়েন্ট পড়েই আপনারা ভাববেন যে, মোবাইলে আবার কিভাবে হোয়াইট বোর্ড কাজ করে?
আপনারা বড্ড বিচলিত দেখছি!
হ্যাঁ মোবাইলেই শ্রেণিকক্ষের মত বোর্ডে পড়ানো যায়। আপনার লাগবে Whiteboard এপ আর একটি টাচপেন। এপটি লিংক থেকে নামিয়ে নিন আর একটা টাচপেন কিনে নিন।
জ্বি ভাই সবকিছু ফ্রিতে হয়না।
টাচপেনের দাম কত?
মাত্র ২০ টাকা।
টাচপেন কি?
মোবাইলে হাত দিয়ে টাচ করলে যেভাবে কাজ করে, সেভাবে টাচপেন একটি কলমের মত। কলমটি দিয়ে মোবাইলের স্ক্রিনে লিখতে পারবেন, ঠিক যেভাবে খাতায় কলম দিয়ে লিখেন।
টাচপেন কোথায় পাবো?
দারাজ, ইভ্যালী সহ যেকোন অনলাইন মার্কেটপ্লেসে Touchpen লিখে সার্চ দিলেই হাজারটা পেয়ে যাবেন।
৩) এখন আপনার কাছে বোর্ড আছে, কলম আছে। আর কি লাগে? শুরু করে দিন। স্ক্রিন রেকর্ডার অন করুন। তারপর Whiteboard এপে গিয়ে টাচপেন দিয়ে আকিবুকি করেন।
৪) আপনার পড়ানো শেষ হলে আপনাকে ভিডিওটি এডিট করতে হবে। এডিট করার জন্য সবচেয়ে সহজ এপ হল Filmora Go, এপটি ফ্রিতেই প্লেস্টোর থেকে নামান। এই এপে সহজেই ভিডিও এডিট করতে পারবেন।
তবে আপনার ভিডিও আরো স্টাইলিশ ও প্রিমিয়াম করতে চাইলে ভিডিওতে একটা ফ্রেম যোগ করতে পারেন। Video Frame Editor দিয়ে ফ্রিতেই একটা ফ্রেম এড করেন।
তারপর একটা সুন্দর ইন্ট্রো, যেটা কোর্স চালু হবার আগে দেখাবেন যাতে শিক্ষার্থীরা আপনার কোর্স দেখতে আগ্রহী হয়। এর জন্যও ফ্রি এপ আছে। Intro Maker এই এপটি নামিয়ে নিন। এর মাধ্যমে লোগো ও বানাতে পারবেন।
আর পুরো প্রফেশনালি ভিডিও বানাতে আপনি একটি Thumbnail যোগ করতে পারনে। থাম্বনেইল হল, ভিডিও চালু করার আগে যে পিকটা ভিডিওতে দেখাবে সেটা। এর জন্য Thumbnail Maker এই ফ্রি এপটা ডাউনলোড করে নিন।
ব্যস আপনার কোর্স বানানো হয়ে গেল। এখন আপনি এই কোর্সটা ১০০-৩০০ টাকায় বিক্রি করা শুরু করে দিন।
ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করেন। দেখবেন আস্তে আস্তে মানুষ এই কোর্সটা কিনবে। আপনি ১ মাসে কোর্স বানিয়ে ২ বছর ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই এই কোর্স থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করুন
আপনার যদি শেয়ার মার্কেট নিয়ে ধারণা থাকে তাহলে এখানে সহজেই লাভবান হতে পারবেন। আপনার যদি ধারণা না ও থাকে তাহলে এই বিষয়ে কিছু বই পড়ুন। অথবা The Financial Express, TheDailyStar এই পত্রিকাগুলোতে শেয়ার বাজারের নিয়মিত খবর পাওয়া যায়। সেগুলো দেখুন।
শেয়ার মার্কেট হল দীর্ঘস্থায়ী ইনকামের ব্যবস্থা। বাংলাদেশে না করতে চাইলে অন্য যেকোন দেশে ও করতে পারবেন।
অনেকে শেয়ার ব্যবসা হালাল নাকি হারাম? এই বিষয় নিয়ে চিন্তায় থাকেন।
শেয়ার ব্যবসা এমনিতে হালাল। আপনি এমন কোম্পানি গুলোতে বিনিয়োগ করবেন যারা হালাল পণ্য নিয়ে কাজ করে।
গুগলে সার্চ করবেন হালাল শেয়ার, তাহলে অনেক বড় লিস্ট চলে আসবে। সেখান থেকে বুঝে শুনে বিনিয়োগ করবেন।
ব্লগিং শুরু করে টাকা আয় করুন
দীর্ঘস্থায়ী টাকা আয়ের আরেকটা উপায় হল, ব্লগ ওয়বসাইট খোলা। প্রথমে একটি টপিক বেছে নিন যে টপিকে লিখালিখি করবেন। তারপর ওয়েবসাইট বানাতে হবে।
ওয়েবসাইট খুলতে ২০ মিনিট সময় লাগে মাত্র। কোন কোডিং ছাড়াই ২০ মিনিটে ব্লগ বানানোর স্টেপ বাই স্টেপ গাইডলাইন দেখতে এই আর্টিকেল ভিজিট করুন।
ব্লগিং সাইট খুলার পর-
১) কন্টেন্ট লিখতে হবে। নিজে না পারলে অন্যান্য কনটেন্ট রাইটার দিয়ে লিখান। প্রতি ১০০০ শব্দের ভালো কন্টেন্ট এর জন্য ৫০০-৭০০ টাকা দিতে হতে পারে।
২) ১০-১৫টি কন্টেন্ট হয়ে গেলে এফিলিয়েটে মার্কেটিং এর সাইটগুলোতে আবেদন করুন। কিভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করবেন তা বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেল পড়ে নিন।
৩) ব্যস অ্যাফিলিয়েট হয়ে গেলে ভিজিটর সাইটে আসলে বা লিংকে ক্লিক করে প্রোডাক্ট কিনলেই আপনি ভালো একটা কমিশন পেয়ে যাবেন।
ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে জমা রাখুন
আপনি যদি টাকা দিয়ে ব্যবসা বা অন্য কিছু না করতে পারেন তাহলে ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখতে পারেন। এতে আপনার টাকা ব্যাংক ব্যবসা করে আপনাকে লাভ দিবে।
তবে আমাদের দেশের বেশিরভাগ ব্যাংকই সুদের কারবারি। ইসলাম ধর্মে সুদ একেবারেই হারাম।
তাই হালালভাবে ব্যাংক থেকে লাভ নিতে হলে ইসলামী ব্যাংকে টাকা রাখতে পারেন। তাছাড়া বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবথেকে বেশি লাভ ইসলামী ব্যাংকই দিচ্ছে। তবে ইসলামী ব্যাংক যদি লস খায় তাহলে আপনিও লসের অংশীদার হবেন। তবে ইসলামী ব্যাংকের লস খাবার কোন ঘটনাই ইদানিং কালের মধ্যে নেই।
ফিক্সড ডিপোজিটের জন্য আপনি ১ বছর, ২ বছর, ৫ বছর কিংবা ১০ বছর এর জন্য রাখতে পারেন। তবে আপনি চাইলে যেকোন সময়ই আপনার টাকা উঠাতে পারবেন। তবে এতে লাভ কম পাবেন।
বিনিয়োগ করুন
যেখানে ব্যবসার সুযোগ দেখবেন সেখানেই বিস্তারিত দেখে বিনিয়োগ করার মন-মানসিকতা রাখুন।
ধরুন আপনার এলাকায় রাস্তার ধারে একটি ফুডকার্ট ভালো ব্যবসা করছে।
আপনি তাকে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিন।
রাস্তা থেকে তুলে এনে একটি দোকানের ব্যবস্থা করেন। আপনি তার সাথে পার্টনারশিপে চলে যান।
আর ফলে সে নিজে ব্যবসা করবে আর আপনি লাভের একটা অংশ কিছু না করেই পেয়ে যাচ্ছেন।
এভাবে যে ব্যবসাতেই দেখবেন লাভ হবার সম্ভাবনা আছে সে ব্যবসাতেই বিনিয়োগ করবেন। এভাবে কয়েকটা ব্যবসাতে বিনিয়োগ করলে আপনার কাজই করা লাগবেনা। ব্যবসা গুলো থেকেই আপনার কাছে টাকা আসতে থাকবে।
ড্রপশিপিং করে টাকা আয় করুন
ড্রপশিপিং আসলে খুবই সহজ একটা বিষয়।
এখানে আপনার কোন পণ্য কিনতে হয় না। অন্যজনের পণ্য আপনি মার্কেটিং করবেন। কাস্টমার আপনার কাছে অর্ডার করলে, আপনি কাস্টমার থেকে টাকা নিবেন। তারপরে সেই পণ্যটি আসল সেলারের কাছ থেকে অর্ডার করে দিবেন।
অর্ডার করার সময় এড্রেস দিবেন যে কাস্টমার প্রথমে আপনার কাছে অর্ডার দিয়েছে সেই এড্রেস, কারণ পণ্য তো আপনি কিনছেন না।
এভাবে অন্যের পণ্য নিজে মার্কেটিং করে বিক্রি করার নামই ড্রপশিপিং।
কিভাবে ড্রপশিপিং করবেন?
আপনি দারাজ.কম থেকে ভালো ভালো টি-শার্ট সিলেক্ট করলেন। তারপরে আপনার এফবি আইডিতে সেগুলো ছবিসহ দিয়ে দিলেন।
আপনার কোন বন্ধু পছন্দ করলে তার থেকে টাকা নিয়ে অর্ডার করে দিলেন দারাজ থেকে।
ব্যস দারাজ সেই টি-শার্ট আপনার বন্ধুর ঠিকানায় পাঠিয়ে দিবে।
আপনি বাড়তি কিছু টাকা ইনকাম করে নিলেন। দারাজের দামের চেয়ে অবশ্যই বাড়তি কিছু দাম রাখবেন পণ্য পোস্ট করার সময়।
এই ৫টি উপায়ে ২০২৪ সালে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আয় করা সম্ভব।
প্রতিটি উপায় একেবারে আসল।
এগুলো ফেইক না।
অনলাইনে দেখবেন বিভিন্ন এপের কথা বলতেছে। যেগুলো আসলে ফেইক।
তাই ফেইক কিছু বিশ্বাস করবেন না। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ২০২৪ সালে টাকা আয় করার উপায়, এই আর্টিকেলে থেকে নিজের আয়ের পথ বেছে নিন।
এই আর্টিকেল পুরোটা পড়ে নিলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যে এখানে যেগুলো দেখানো হয়েছে তা আসল নাকি নকল।
সবশেষে ওয়ারেন বাফেটের একটি উক্তি দিয়ে শেষ করছি,