তরমুজের বিস্ময়কর ১০ টি উপকারিতা জেনে নিন

তরমুজের বিস্ময়কর ১০ টি উপকারিতা জেনে নিন

গরমে শীতল অনুভূতির ছোঁয়া দিতে,সকল ফলের ঊর্ধ্বে স্থান করে নিয়েছে তরমুজ। তরমুজ ছাড়া যেন গ্রীষ্মকালকে কল্পনা-ই করা যায়না। তরমুজ আমাদের দেশীয় ফল। যার বাইরে সবুজ আর ভেতরে টকটকে লাল। আর এই ফলের আছে অনেক পুষ্টি ও ঔষধি গুণ।

আপনার পছন্দের তালিকায় আছে তো এই সুস্বাদু ও উপকারী ফলটি? আজ আমরা জানবো তরমুজের বিস্ময়কর কিছু উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ।

বিশেষজ্ঞদের মতে,যে মৌসুমে যে ফল পাওয়া যায়,সেটিই সঠিক পরিমাণে খাওয়া উচিত। তরমুজ গ্রীস্মকালীন ফলের মধ্যে অন্যতম।

চৈত্রের দাবদাহে যখন মানুষ ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে তখন এক ফালি তরমুজ যেন প্রাণ ফিরিয়ে দেয়।কিংবা পথিক যখন রুক্ষ পথে হেটে যায়,তখন রাস্তার পাশের একগ্লাস তরমুজের শরবত যেন নতুন করে উদ্যম ফিরিয়ে দেয়।

আসুন,জেনে নেয়া যাক,তরমজু খেলে কি হয় আর কোন জাদুকরী ক্ষমতায় তরমুজ পুরো গ্রীষ্মজুড়ে সবার মন জয় করে নেয়-

তরমুজ একটি অতি সুমিষ্ট ফল। গ্রীষ্মকালে প্রতিটি ঘরে এ ফল সমাদৃত। তরমুজে প্রায় ৯২% পানি থাকে।যা গরমে শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখে।শুধু স্বাস্থ্যগুণাগুনই নয়,ত্বকের যত্নেও এর জুড়ি মেলা ভার।

তরমুজের পুষ্টিগুণ

প্রতি ১০০ গ্রামে তরমুজের পুষ্টিগুণঃ

উপাদানপরিমাণ
শক্তি৩০ কিলোক্যালরি
চর্বি০.২ গ্রাম
সোডিয়াম১ মি.গ্রাম
পটাসিয়াম১১২ মি.গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট৮ গ্রাম
প্রোটিন০.৬ গ্রাম
ফাইবার০.৪ গ্রাম
ভিটামিন এ ৯-১১%
ভিটামিন সি১৩%
আয়রন        ১%
ম্যাগনেসিয়াম২%
লাইকোপেন৪৫৩২ মাইক্রোগ্রাম
সিট্রোলিন ২৫০ মিলিগ্রাম

তরমুজ খেলে কী হয়?

তরমুজে আছে লাইকোপেন,অ্যামাইনো এসিড, ভিটামিন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও পানি! কেবল প্রশান্তি পেতেই নয়,তরমুজ খেলে আমরা যে পরিমাণ লাভবান হই তা নামীদামী রেস্টুরেন্টের কোল্ড কফি,ড্রিংকস সেগুলোকেও হার মানায়।

তরমুজ খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। গর্ভবতী মহিলাদের বমিভাব কাটিয়ে রুচি বাড়ায় তরমুজ। তাই গ্রীষ্মের মৌসুমে এই উপকারিতা পেতে অবশ্যই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন পরিমাণমত তরমুজ।

তরমুজের উপকারিতা ও ঔষধি গুণাবলি

কেবল তরমুজই নয়,তরমুজের বীজ এবং খোসাও ঔষধি গুণাবলিসম্পন্ন। জেনে নেয়া যাক তরমুজের সেইসব যুগান্তকারী গুণাগুণ।

১.রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে

সিট্রুলিন নামক একধরনের উপাদান যখন তরমুজের সাহায্যে পেটে যায়,এটি আর্জিনিনে পরিণত হয়,যা পরবর্তীতে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্ন করে,রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনে।

২.হৃদরোগ/হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে

তরমুজ রক্তচাপ কমায় এবং কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমিয়ে দেয় বলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

৩.পরিপাকতন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়

হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।এতে থাকা ফাইবার ও পানি পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে।

৪.প্রদাহ কমায়

তরমুজে থাকা ভিটামিন সি এবং লাইকোপেন শরীরে জ্বালাভাব কমায়।

৫.শরীরকে হাইড্রেট রাখে

তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট যা পানিশূন্যতা পূরণ করে শরীরকে হাইড্রেট রাখে।

৬.পেশীর ব্যথা কমায়

এল-সিট্রুলাইন শারিরীক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে পেশীর ব্যথা উপশম করে।

৭.ক্যান্সার প্রতিরোধে

তরমুজে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

৮.কিডনীর সমস্যা কমায় এবং হাঁপানি প্রতিরোধ করে

পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম তরমুজের অন্যতম উপাদান,যা শরীর থেকে টক্সিন বের করে কিডনীকে রাখে সুস্থ। এর ভিটামিন সি হাঁপানীর প্রতিরোধক হিসেবেও কাজে দেয়।

৯.পানিশূন্যতা পূরণ

গরমে পানির ঘাটতি কমিয়ে পানিশূন্যতা কমায়,যার দরূন শরীর ঠান্ডা থাকে।ত্বক ভালো থাকে।ব্রণ বা অন্যান্য স্কিন ডিজিজ প্রতিরোধ করে।

আর গরমে শরীর ঠান্ডা মানেই মেজাজও ঠান্ডা!  তাই বলা চলে তরমুজ মানসিক প্রশান্তি দানেও কম যায়না।

১০. চুল ও ত্বকের যত্নে তরমুজ

ঘরে বসেই পার্লারের মত ত্বকের যত্ন করতে পারেন তরমুজের সাহায্যে।

চুলের যত্নেও খেতে পারেন তরমুজ। তরমুজে থাকা ভিটামিন সি চুলে শক্তি জুগিয়ে চুলকে করে ঘন,মসৃন এবং উজ্জ্বল। ত্বকের যত্নেও তরমুজের খোসা খুবই উপকারী।

তরমুজ রূপচর্চার অন্যতম উপাদান। রোদে পোড়া ভাব,মেছতা, চোখের নিচের কালো দাগ সারাতে তরমুজের খোসা খুব ভাল কাজ করে।

ত্বকের যত্নে তরমুজের কিছু দারুণ টিপস জেনে নিন,যা আপনার রূপচর্চায় নতুন মাত্রা যোগ করবে-

⇒ মেছতা,রোদে পোড়া ভাব এবং ত্বকে কালচে ভাব হলে,ত্বকে তরমুজের রস লাগিয়ে প্রায় ১০ মিনিট পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।দীর্ঘদিন ব্যবহারের জন্য তরমুজ টুকরো করে অথবা তরমুজের রসকে বরফ করে ব্যবহার করতে পারেন।ত্বকের এই সমস্যা গুলো দূর হবে নিমেষেই।

⇒ স্পর্শকাতর ত্বকের যত্নে তরমুজ ২ভাবে ব্যবহার করা যায়-

১.তরমুজের রসের সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে আপনার স্পর্শকাতর ত্বকে হালকা ঘষে ঘষে প্রায় ১৫ লাগিয়ে রাখুন।তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
২.তরমুজের পিউরির সাথে সামান্য চিনি ও লেবু মিশিয়ে একই ভাবে ব্যবহার করতে পারেন।
এতে থাকা ফাইবার ডেডস্কিন দূর করে লাবণ্যতা ফিরিয়ে আনবে।

*তেলের সাথে তরমুজের রস মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগালে খুশকির সমস্যা দূর হয় এবং মাথা ঠান্ডা করে।

আরও পড়ুনঃ আনারসের ১০টি আশ্চর্য উপকারিতা এবং ঔষধি গুণ জেনে নিন

তরমুজ দিয়ে স্পেশাল ড্রিঙ্কস বানানোর রেসিপি জানতে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন

তরমুজ দিয়ে স্পেশাল ড্রিঙ্কস বানানোর রেসিপি

তরমুজের বীজ ও খোসার উপকারিতা

আমরা অনেকেই জানি যে, তরমুজের খোসা ও বীজ অনেক উপকারী জিনিস।

তরমুজের খোসা

সাধারণত আমরা তরমুজ কাটার পর এর খোসা ফেলে দিই।কিন্তু তরমুজের খোসাও অনেক উপকারী। 

সিট্রুলিন তরমুজের খোসার অন্যতম উপকারী উপাদান যা ফ্রি রেডিকেল দূর করতে সাহায্য করে। এটি রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যামিনো এসিডে পরিণত হয়ে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

এছাড়াও এটি ওজন কমাতে এবং সুনিদ্রায় সাহায্য করে। রোদে পোড়া ভাব এবং ত্বকের কালচে ভাব দূর করতে একটুকরো তরমুজের খোসা অনেক ভালো কাজ করে।

তরমুজের বীজ

আমরা অনেকেই জানিনা তরমুজের বীজও খাওয়া যায় যা পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। আবার অনেকেই তরমুজের বীজ খেতে খুবই পছন্দ করেন।

⇒ তরমুজের বীজে এমন একটি উপাদান থাকে যা ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। 

⇒ হার্টকে বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা করে।

⇒ এতে ম্যাঙ্গানিজ,পটাশিয়ামের মত একাধিক খনিজ থাকায় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুব উপকারী। 

⇒ তরমুজের বীজ থেকে যে তেল তৈরী করা যায়, তা অনেকেরই অজানা।এই তেল ত্বকের বিভিন্ন দাগ সারাতে অনেক ভালো কাজ করে।

⇒ তরমুজের বীজ সুস্বাদু একটি খাবার। তরমুজের বীজকে কিভাবে খাবার উপযোগী করা যাবে? তরমুজের বীজ ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে মচমচে করে ভেজে,পরিমাণমত লবণ এবং মরিচগুঁড়া মিশিয়ে মজাদার একটি খাবার বানানো যায়।যা হাই নিউট্রিশন সমৃদ্ধ।

তরমুজের অপকারিতা

মাত্রাতিরিক্ত কোনকিছুই ভালো নয়। সবকিছুরই সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে।তরমুজও এর বাইরে নয়।এত গুণাবলি থাকা স্বত্বেও কিছু বিশেষ সময়ে,বিশেষ কারণে দেখা দিতে পারে এর অপকারিতাও।

সাধারণত যেই সমস্যাগুলো দেখা দেয়-

⇒ পেশির শক্তি কমে যাওয়া

ওজন কমাতে তরমুজ খান অনেকেই,কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে অতিরিক্ত তরমুজ খেলে ওজন কমে তবে তা আস্তে আস্তে পেশিতে শক্তি দেয়া বন্ধ করে দেয়।

⇒ ব্লাড স্যুগার বাড়ায়

তরমুজে থাকা চিনি অনেক সময় ব্লাড স্যুগার বাড়ায়,এর ফলে ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে।

⇒ রাতের বেলা তরমুজ খাবেন কি?

না,রাতের বেলা তরমুজ খেলে তা হজমে ব্যঘাত ঘটায়। যার ফলে এসিডিটি হতে পারে,বমি বা বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। ডায়রিয়া সহ নানা ধরনের পেটের পীড়া হতে পারে।

⇒ লিভার,কিডনী এবং হার্টের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

মদ্যপায়ীরা তরমুজ খেলে এতে থাকা লাইকোপিন অ্যালকোহলের সাথে মিশে লিভারের ক্ষতি করে। তাছাড়া তরমুজের প্রায় ৯২% পানি হওয়ায় কিডনি অতিরিক্ত পানি ফিল্টার করতে অক্ষম হয়ে পড়তে পারে।

অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়া হার্টের জন্যও ক্ষতিকারক। তাছাড়া শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গেলে হাইপারক্যালেমিয়া হতে পারে।

⇒ অ্যালার্জি

যাদের অ্যালার্জির সমস্যা তারা তরমুজ খেলে ত্বকে চুলকানি ভাব আসতে পারে এবং লাল লাল ব্রণের মত হতে পারে। তাছাড়া অনেকসময় অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়ার প্রভাবে বিবর্ণতা দেখা দিতে পারে।

তাই আপনার ডায়েটচার্টে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে পরিমাণমত তরমুজ রাখুন এবং নিজের শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে তরমুজ খান। কারণ তরমুজের উপকারিতা অতুলনীয়।

References

কিছু বিশ্বস্ত আর্টিকেলের লিংক নিচে দিয়ে দিলাম, পড়তে পারেন।

https://www.healthline.com/health/food-nutrition/best-watermelon-seed-benefits#preparation

https://www.medicalnewstoday.com/articles/266886

https://www.healthline.com/nutrition/watermelon-health-benefitshttps://www.webmd.com/diet/ss/slideshow-health-benefits-of-watermelon